ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটতে পারে
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য তার আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় হতে পারে।
প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করেন, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব মেনে নেন।
এছাড়া, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে 'শতাব্দীর চুক্তি' নিয়ে আলোচনা করেন এবং ইরানের ওপর চাপ বাড়ান।
তবে, ২০২১ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনগুলি নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট কীভাবে সামলাবেন, তা জানতে আগ্রহী অনেকেই।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইতোমধ্যেই ট্রাম্পের জয়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, "এটি আমেরিকা এবং ইসরায়েলের সম্পর্কের নতুন সূচনা। এটি একটি বিশাল বিজয়!"
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও ট্রাম্পের জয়ে সমর্থন জানিয়েছে। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত ট্রাম্পের জয়ে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছে, "আমরা একে অপরকে সহযোগিতার শক্তিশালী সম্পর্কের ভিত্তিতে একসঙ্গে এগিয়ে যাব।"
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতি খুব একটা গুরুত্ব না দেখিয়ে ইরান বলছে, যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোক না কেন, "কোনও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই।" বুধবারের ভোটের পর ইরানের সরকারি মুখপাত্র ফাতেমা মোহাজেরানি ইরানি গণমাধ্যমে বলেন, "আমেরিকা এবং ইরানের সাধারণ নীতিতে কোনও পরিবর্তন আসবে না।"
ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায়, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পরিবর্তন আসতে পারে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধ
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মধ্যপ্রাচ্য নীতির অন্যতম প্রধান বিষয় হবে গাজা ও লেবাননের যুদ্ধ শেষ করা। পাশাপাশি, ইসরায়েলকে আরও গভীরভাবে মধ্যপ্রাচ্যে একীভূত করাও মধ্যপ্রাচ্য নীতির শীর্ষে থাকবে।
প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের নেতা মুস্তফা বারঘোতি মন্তব্য করেন, "নেতানিয়াহু এমন এক প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি হবেন, যিনি তার আগে এমনটা করেননি। ট্রাম্প যেভাবে যুদ্ধগুলো চলছে, তা আর চলতে দেবে না বলে আমি মনে করি।"
তিনি আরও বলেন, "ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশেষ কোনো পার্থক্য হবে না, কারণ উভয় প্রশাসনই ইসরায়েলের সম্পূর্ণ পক্ষপাতিত্ব করেছে।"
সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক আলোন পিঙ্কাস সিএনএনকে বলেন, ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে "জয় ঘোষণা করার" জন্য চাপ দিতে পারেন এবং তারপর মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে একটি চুক্তি সম্পাদনের জন্য বলবেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় স্পষ্ট করেননি, দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রতি তিনি কীভাবে মনোযোগ দেবেন বা তার নীতিগুলি জো বাইডেনের থেকে কীভাবে আলাদা হবে।
তবে এপ্রিল মাসে তিনি ইসরায়লকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, "তারা যা শুরু করেছে তা শেষ করতে হবে" এবং "এটি দ্রুত শেষ করে ফেলতে হবে", কারণ গাজা পরিস্থিতির কারণে ইসরায়েল "যুদ্ধে জনসংযোগ হারাচ্ছে"।
আলোন পিঙ্কাস বলেন, ট্রাম্প "ফিলিস্তিনি সমস্যার ব্যাপারে একদমই চিন্তা করেন না। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নীতি মেনে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতি দীর্ঘস্থায়ী সমর্থন প্রকাশ করেননি।" বরং তিনি বলেছিলেন, তিনি এমন একটি সমাধান চান, যেটি "উভয় পক্ষের পছন্দ হবে।"
এদিকে মুস্তফা বারঘোতি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ট্রাম্প ইসরায়েলকে পশ্চিম তীরে কিছু এলাকা একীভূত করার অনুমতি দিতে পারেন, যেটি "দুই-রাষ্ট্র সমাধানের" অবসান ঘটাবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ইসরায়েলের পক্ষে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন, ২০১৭ সালে জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করা।
যদিও ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে নিজেকে সবচেয়ে বেশি ইসরায়েলপন্থী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাবি করেছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার সম্পর্ক সবসময় মসৃণ ছিল না।
২০২১ সালে যখন তারা দুজনেই ক্ষমতাহীন ছিলেন, তখন ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। কারণ নেতানিয়াহু ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনকে বিজয়ী হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের হামলার পর ট্রাম্প নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলের গোয়েন্দা সেবার সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে এই হামলা ঘটতো না।
ইসরায়েলের পার্লামেন্ট সদস্য বোয়াজ বিসমুথ সিএনএনকে বলেন, ট্রাম্প "সঠিক সময়ে" নির্বাচিত হয়েছেন, কারণ এটি গাজা এবং লেবাননের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর 'অ্যাব্রাহাম অ্যাকর্ডস' চুক্তি সম্প্রসারিত করার সুযোগ তৈরি করবে।
অ্যাব্রাহাম অ্যাকর্ডস ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে ইসরায়েল ও চারটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের একটি সিরিজ চুক্তি ছিল। চুক্তিগুলো প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে পিছিয়ে দেয়।
রাজনৈতিক কৌশলী নাদাভ শ্রাউচলার বলেন, ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া ইরানে ইসরায়েলের শত্রুদের জন্য একটি বার্তা হিসেবে কাজ করবে।
তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত আচরণ ইসরায়েলকে গাজা এবং লেবাননের যুদ্ধ শেষ করার জন্য আরও চাপ দিতে পারে এবং ইরানের সঙ্গে বিরোধে মনোযোগ ফেরাতে সহায়তা করবে।
ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক
১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আগামী চার বছরের জন্য দেশটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের তত্ত্বাবধানে ইরান আবারও "ম্যাক্সিমাম প্রেসার" [সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ] ক্যাম্পেইনের মুখোমুখি হতে পারে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এটি ইরানের ওপর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপ বাড়িয়েছিল।
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর তেহরানের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েও তিনি ইরানের প্রভাব কমাতে পারেননি।
২০২০ সালে ট্রাম্প অফিস ছাড়ার পর থেকে ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির হার বাড়িয়েছে, তেল রপ্তানি বৃদ্ধি করেছে, আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন আরও শক্তিশালী করেছে এবং ইসরায়েলে সরাসরি দুটি আক্রমণ চালিয়েছে।
তবে ইসরায়েল ইরানের আঞ্চলিক মিত্রদের ওপর হামলা চালানোর মধ্যেই দেশটি অর্থনৈতিক সংকট এবং ব্যাপক অভ্যন্তরীণ অসন্তোষের মুখোমুখি হয়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাতে বসেছে।
ইরান প্রকল্পের পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপের সিনিয়র পরামর্শক আলী ভায়েজ বলেন, "ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে বিপদ যত শক্তিশালী হয়ে উঠছে, দেশটি ততই ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে।"
তিনি আরও বলেন, ৮৬ বছর বয়সী সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খামেনির পক্ষে একাধিক সংকট একসাথে মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইরান এই মাসে ইসরায়েলের আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানাতে হুমকি দেওয়ার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্য একটি বড় যুদ্ধের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
আশঙ্কা রয়েছে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে উৎসাহিত করতে পারে। বাইডেন প্রশাসন ইরানে হামলা চালানোর বিষয়ে ইতোমধ্যে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে।
বিশ্লেষক আলী ভায়েজ বলেন, "এমন হতে পারে, ট্রাম্প হয়ত নেতানিয়াহুকে প্রেসিডেন্সি গ্রহণের আগেই কাজটি শেষ করতে বলবেন। অর্থাৎ নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে আমরা উত্তেজনা বাড়তে দেখতে পারি। ইরান ও তার প্রতিরোধকে দুর্বল করতে ইসরায়েল তার সুবিধা কাজে লাগাতে চাইবে, মূলত ট্রাম্পের অফিসে আসার আগেই। তারপর ট্রাম্প এসে নিজেকে শান্তির রক্ষক হিসেবে প্রচার করবেন।"
তবে বাইডেন প্রশাসন নিজেদের মেয়াদকালের শেষ সময়ে এসে ইসরায়েলের উত্তেজনা বৃদ্ধির ক্ষমতাকে সংকুচিত করতে পারলে, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে ভায়েজ মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে এই বিষয়ে ইসরায়েলকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এর পরিণতি সম্পর্কে ইসরায়েলকে চিঠিতে সতর্ক করা হয়েছে।
ইরান ও পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হবে, ট্রাম্প কীভাবে গত সপ্তাহে প্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোর প্রতিক্রিয়া দেখান।
প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়েছে, ইরান ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করেছে। তবে, ইরান এ অভিযোগ অস্বীকার করে এটিকে "অপ্রমাণিত এবং ক্ষতিকর" বলে মন্তব্য করেছে।
ভায়েজ আরও বলেন, "ট্রাম্প এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য থাকতে হবে।" তিনি বলেন, "ট্রাম্প সম্ভবত এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আকৃষ্ট হতে পারেন, যেটি তার চুক্তির দক্ষতা প্রমাণ করবে।"
ভায়েজ জানিয়েছেন, ট্রাম্পের "ম্যাক্সিমাম প্রেসার" নীতি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইরানের জনগণের জন্য "ম্যাক্সিমাম সাপোর্ট" [সর্বোচ্চ সহায়তা] নীতি গ্রহণ করা হতে পারে। এটি ইরান সরকারের পরিবর্তন ঘটানোর একটি প্রচেষ্টা হতে পারে।
এই কারণে তিনি মনে করেন, দুটি দেশের মধ্যে আলোচনায় ফিরে আসার সম্ভাবনা কম।
সৌদি আরব ও উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখে, উপসাগরীয় আরব দেশগুলো তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে গেছে। এটি দেশগুলোর জন্য ফলপ্রসূ হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সৌদি আরবের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছিল। ২০১৭ সালে প্রথম বিদেশ সফরের জন্য রিয়াদকে নির্বাচিত করে ইতিহাস তৈরি করেন ট্রাম্প। ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর যখন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সমালোচনার মুখোমুখি হন, তখন ট্রাম্প যুবরাজের পক্ষেই ছিলেন।
বাহরাইনের আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সিনিয়র ফেলো হাসান আলহাসান বলেন, "উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে ব্যক্তিগত যোগাযোগে আগ্রহী এবং সমভাবাপন্ন নেতার সাথে কাজ করার ওপর অনেক গুরুত্ব দেয়।"
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেন যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিল। সেসময় এই দুই দেশের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল।
তবে উপসাগরীয় দেশগুলো ইতোমধ্যে তাদের বৈদেশিক নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। তারা তাদের সামরিক হস্তক্ষেপ কমিয়েছে এবং ইরানের মতো সাবেক শত্রুদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে শুরু করেছে। পাশাপাশি, একাধিক মেরুকরণের বর্তমান বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছে।
উপসাগরীয় দেশগুলো, বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত চীনের সাথে একটি শক্তিশালী কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও, তারা বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি খাতে চীনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করেছে।
তবে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দেশগুলো চীনের সাথে সম্পর্ক সীমিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের সম্মুখীন হতে পারে। বিশেষ করে বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি খাতে এ চাপ প্রয়োগ করা হতে পারে।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত-কে উন্নয়নশীল দেশের ব্রিকস গ্রুপে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া, সৌদি আরবকে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-তে ডায়ালগ পার্টনার স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। এসসিও চীনা নেতৃত্বাধীন এশীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ব্লক।
ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের ফলে ইরানের প্রতি তার "ম্যাক্সিমাম প্রেসার" নীতিকে সমর্থন জানাতে উপমহাদেশীয় দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়তে পারে।
আলহাসান বলেন, "ট্রাম্প প্রশাসন গালফ রাষ্ট্রগুলোকে চীনের সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আরও চাপ দেবে কি-না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন।"
তিনি আরও বলেন, "ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে সম্ভাব্য শুল্ক এবং বাণিজ্য যুদ্ধে বাড়তি চাপ পড়তে পারে। এটি গালফ রাষ্ট্রগুলোর রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে পারে।"
ট্রাম্পের পরিকল্পনা হলো, ইসরায়েলকে আঞ্চলিকভাবে আরও বেশি অন্তর্ভুক্ত করা। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে বাধা রয়েছে, কারণ এর সাথে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্ত যুক্ত রয়েছে।
ট্রাম্পের জয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরুতেই অভিনন্দন জানানো দেশগুলোর মধ্যে কাতার অন্যতম। হামাসের সাথে কাতারের সম্পর্কের কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দেশটি।
ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে কাতার এ বিষয়ে অন্যতম নির্ভরতা হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন হাসান আলহাসান।
তিনি বলেন, "তারা সম্ভবত ট্রাম্প ২.০ কেমন হবে, তা নিয়ে বেশ চিন্তিত।"
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়