২০২৪ সালে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাবে
বিশ্বজুড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ, যা মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে ঘটে, এ বছর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর পথে রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) কপ২৯ জলবায়ু সম্মেলনে প্রকাশিত গ্লোবাল কার্বন বাজেট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে মোট কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ ৪১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মেট্রিক টনে পৌঁছাবে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ বিলিয়ন টন বেশি।
এই নিঃসরণের প্রধান অংশ আসে কয়লা, তেল এবং গ্যাস পোড়ানো থেকে, যা ২০২৪ সালে ৩৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন টন ছাড়িয়ে যাবে, এবং যা ২০২৩ সালের তুলনায় ০ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
অবশিষ্ট নিঃসরণ আসে স্থলভাগ থেকে, যেমন বন ধ্বংস ও অগ্নিকাণ্ডের মতো কার্যক্রম থেকে। এ গবেষণায় ৮০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে, নেতৃত্ব দেন যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী পিয়েরে ফ্রিডলিংস্টেইন।
পিয়েরে ফ্রিডলিংস্টেইন সতর্ক করে বলেন, যদি নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ না নেয়া হয়, তাহলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ করার লক্ষ্যে দ্রুত নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। এর জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো প্রয়োজন।
কিন্তু বাস্তবে গত দশকে জীবাশ্ম জ্বালানির নিঃসরণ বাড়ছেই। যদিও ভূমি ব্যবহার সংক্রান্ত নিঃসরণ কিছুটা কমে এসেছিল, এ বছর আমাজনে খরার কারণে অগ্নিকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়ে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন টনে পৌঁছেছে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন, এই ধীর গতির কারণে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্য অর্জন এখন বাস্তবসম্মত নয়।
এ বছর কিছু দেশ নবায়নযোগ্য শক্তি এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহারে অগ্রগতি দেখালেও, উন্নতি ছিল খুবই অসম। ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর নিঃসরণ কমলেও, উন্নয়নশীল দেশের নিঃসরণ বাড়ছে।
মঙ্গলবার কপ২৯ সম্মেলনে অংশ নেয়া দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল—পৃথিবীজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের নেতৃত্ব কে দেবে এ নিয়ে।
আয়োজক আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর অভিযোগ এনে বলেন, তারা অন্যদের জ্বালানি ব্যবহারে পরামর্শ দিলেও নিজেরাই বৃহৎ ভোক্তা ও উৎপাদক।
এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের নিঃসরণ ০ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিঃসরণ ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কিন্তু ভারতের নিঃসরণ ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়বে, যা তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ চাহিদার জন্য। চীনের নিঃসরণও সামান্য ০ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে, তবে বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে তেল থেকে নিঃসরণ শিগগিরই কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিমান ও জাহাজের পরিবহন থেকে নিঃসরণও ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়বে, কারণ কোভিড-১৯ মহামারির পর বিমান ভ্রমণের চাহিদা পুনরায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।