এক্স ছেড়ে দলে দলে ব্লুস্কাই-এ যোগ দিচ্ছেন ব্যবহারকারীরা; এটি কী, এর মালিক কে?
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে 'ব্লুস্কাই' শব্দটি বেশ আলোচনায়। এটি মূলত একটি নতুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটফর্ম। অনেকেই বলছেন, ইলন মাস্কের এক্সকে (পূর্বে টুইটার) টেক্কা দিতেই এর আবির্ভাব। অবশ্য রং এবং লোগোর দিক থেকে এটি কিছুটা এক্সের মতোই দেখতে।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ নতুন ব্যবহারকারী এতে সাইন আপ করছেন। এখন পর্যন্ত ব্লুস্কাইয়ের ১৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে। তবে আপনি এ প্রতিবেদন পড়া শেষ করার আগেই হয়ত সেই সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কী? এবং কেন এত মানুষ এতে যোগ দিচ্ছে? সে সম্পর্কেই জানা গেছে, বিবিসি'র প্রতিবেদন থেকে।
ব্লুস্কাই কী?
ব্লুস্কাই, প্রচলিত অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোর মতোই। তবে 'সোশ্যাল মিডিয়া যেমন হওয়া উচিত'—তারা সে ধরনেরই প্লাটফর্ম, এমন বলেই তারা নিজেদের বর্ণনা করছে।
সাইটের বাম দিকে একটি বার রয়েছে যেখানে সার্চ, নোটিফিকেশন, হোমপেজের মতো সমস্ত পরিচিত ফিচার দেখা যায়। ব্যবহারকারীরা এখানে পোস্ট করতে পারেন, কমেন্ট করতে পারেন, রিপোস্ট করতে এবং পছন্দের জিনিসগুলোতে লাইক দিতে পারেন।
সরলভাবে বললে, এটি দেখতে টুইটারের পুরোনো সংস্করণের মতো। তবে প্রধান পার্থক্য হলো এটি একটি বিকেন্দ্রীভূত প্ল্যাটফর্ম। এই টার্মটি জটিল শোনালেও মূলত এর মানে হলো ব্যবহারকারীরা চাইলে তাদের ডেটা ব্লুস্কাইয়ের নিজস্ব সার্ভার ছাড়াও অন্যত্র সংরক্ষণ করতে পারেন।
এর ফলে, ব্যবহারকারীরা ব্লুস্কাইয়ের নামে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে বাধ্য নন। তারা চাইলে নিজেদের মালিকানাধীন অ্যাকাউন্ট দিয়ে সাইন আপ করতে পারেন।
তবে এটাও উল্লেখযোগ্য যে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন না। নতুন ব্যবহারকারীরা সাধারণত তাদের ইউজারনেমের শেষে '.bsky.social' যুক্ত করেন।
মালিকানা
ব্লুস্কাই দেখতে টুইটারের মতো হওয়ার কারণও আছে। এটি তৈরি করেছিলেন টুইটারের প্রাক্তন সিইও জ্যাক ডরসি। তিনি চেয়েছিলেন এটি একটি এমন প্ল্যাটফর্ম হোক যা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকবে না।
তবে ডরসি এখন আর ব্লুস্কাইয়ের সঙ্গে যুক্ত নেই। ২০২৪ সালের মে মাসে তিনি বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন এবং সেপ্টেম্বর মাসে তার অ্যাকাউন্টও মুছে ফেলেন।
বর্তমানে এটি পরিচালনা করছেন প্রধান নির্বাহী জে গ্র্যাবার। এটি একটি পাবলিক বেনিফিট কর্পোরেশন হিসেবে কাজ করছে।
কেন জনপ্রিয়তা বাড়ছে?
ব্লুস্কাই ২০১৯ সালে চালু হয়েছিল, তবে এটি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুধু ইনভাইট বা আমন্ত্রণের মাধ্যমে ব্যবহার করা যেত। অর্থাৎ, অন্য ব্যবহারকারীর দেয়া ইনভাইট লিংকের মাধ্যমে শুধু এটিতে সাইন আপ করা যেত। এই সময় প্ল্যাটফর্মটি নিজেদের উন্নতির কাজ চালিয়েছে।
তবে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন নির্বাচনে বিজয়ের পর।
ইলন মাস্ক, যিনি ট্রাম্পের বড় সমর্থক, তার কারণে অনেক ব্যবহারকারী এক্স থেকে ব্লুস্কাইয়ে চলে যাচ্ছেন। এছাড়াও, কিছু সংবাদমাধ্যম যেমন গার্ডিয়ান এক্সকে 'বিষাক্ত মাধ্যম' বলে উল্লেখ করে তাদের পোস্টিং বন্ধ করে দিয়েছে।
সেলিব্রিটিদের মধ্যেও ব্লুস্কাই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পপ তারকা লিজো থেকে শুরু করে অভিনেতা বেন স্টিলার, জেমি লি কার্টিস এবং প্যাটন অসওয়াল্টের মতো ব্যক্তিরা ইতোমধ্যেই এই প্ল্যাটফর্মে যোগ দিয়েছেন।
কীভাবে আয় করে?
ব্লুস্কাই তার যাত্রা শুরু করেছিল বিনিয়োগকারীদের এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মগুলির অর্থায়নে, এবং এই মাধ্যমে কয়েক কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে। কিন্তু এত নতুন ব্যবহারকারী যোগ হওয়ার পর, এটির এখন খরচ মেটানোর জন্য একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
টুইটারের স্বর্ণযুগে, সাইটটি তার অধিকাংশ অর্থ উপার্জন করত বিজ্ঞাপন থেকে।
ব্লুস্কাই জানিয়েছে যে তারা এই পন্থা এড়াতে চায়। পরিবর্তে, তারা পেইড সার্ভিসের দিকে নজর দিবে, যেমন ব্যবহারকারীরা তাদের ইউজারনেমে কাস্টম ডোমেইনের জন্য অর্থ প্রদান করতে পারেন।
এটা জটিল শোনালেও মূলত এর মানে হলো, এটি ব্যবহারকারীদের তাদের অ্যাকাউন্টে কাস্টম ডোমেইন যোগ করার সুযোগ দেবে।
যদি ব্লুস্কাই তার মালিকরা বিজ্ঞাপন এড়াতে থাকে, তবে তারা অবশ্য অন্য বৃহত্তর বিকল্পের দিকে তাকাতে পারে, যেমন সাবস্ক্রিপশন ফিচার, যাতে তারা তাদের খরচ চালিয়ে যেতে পারে। তবে যদি তারা খুব বেশি আয় না-ও করে, তবে সেটা প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলোর জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়।
২০২২ সালে যখন ইলন মাস্ক টুইটার কিনেছিলেন, তখন ৮ বছর পাবলিকলি ট্রেড হওয়ার পরও মাত্র দু'বার লাভ করেছিল। কিন্তু বিশ্বখ্যাত ধনী ব্যক্তি যখন ৪৪ বিলিয়ন ডলার (৩৪.৭ বিলিয়ন পাউন্ড) দিয়ে টুইটার কিনেছিলেন, তখন বিনিয়োগকারীরা বিশাল মুনাফা পেয়েছিলেন।
বর্তমানে, ব্লুস্কাইয়ের ভবিষ্যৎ অজানা, তবে এর বৃদ্ধি যদি অব্যাহত থাকে, তবে কিছু অসম্ভব নয়। এটি এখনো এক্সের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। এক্সের দৈনিক ব্যবহারকারী সংখ্যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন, যেখানে ব্লুস্কাইয়ের সংখ্যা এখনও কয়েক মিলিয়নে সীমাবদ্ধ।
তবে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই সামনের দিনে এটি এক্সের জন্য বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন