বাইডেন ইউক্রেনকে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্পের মিত্ররা
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনকে রাশিয়ায় আক্রমণ চালানোর অনুমতি দেওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিত্রদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার ঘনিষ্ঠ অনেকেই মার্কিন প্রশাসনের নতুন এই সিদ্ধান্তকে বিপজ্জনক বলে আখ্যা দিয়েছেন।
বাইডেন ইতোমধ্যে ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিনি ইউক্রেনের ওপর থেকে রাশিয়ার ভেতরে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন।
ট্রাম্প পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র টুইট করেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই "তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করার চেষ্টা করছেন।"
তবে, এই নিয়ে বাইডেনের সিদ্ধান্ত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হয়নি এবং শেষ পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা নাও হতে পারে।
একজন প্রেসিডেন্টের মেয়াদের শেষ কয়েক মাসে এমন বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া স্বাভাবিক কি না, এ প্রশ্নে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাইডেন "চার বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, তিন বছর দশ মাসের জন্য নয়।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা আমাদের মেয়াদের প্রতিটি দিন আমেরিকানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নীতিগুলো কার্যকর করতেই ব্যবহার করব। পরবর্তী প্রশাসন যদি ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে চায়, সেটা তাদের অধিকার।"
মিলার বলেন, "এক সময়ে একজনই প্রেসিডেন্ট থাকেন। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবেন।"
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, "মিসাইলই নিজের কথা বলবে।"
ট্রাম্প শিবিরে অসন্তুষ্টি
ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন এবং আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
তিনি যুদ্ধ বন্ধ করে দেশের উন্নয়নে করদাতাদের অর্থ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে পারবেন, যদিও কীভাবে তা করবেন তা জানাননি।
তার ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র বাইডেনের সামরিক সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
কংগ্রেসওম্যান মার্জোরি টেইলর গ্রিনও বাইডেনকে দোষারোপ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ বলেছেন, "৫ নভেম্বর আমেরিকার জনগণ স্পষ্টভাবে এই "আমেরিকা-বিরোধী" সিদ্ধান্তগুলোর বিরুদ্ধে ম্যান্ডেট দিয়েছে। তারা বিদেশি যুদ্ধে অর্থ ব্যয় করতে বা লড়াই করতে চায় না। আমরা আমাদের নিজস্ব সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই।"
তবে ট্রাম্পের সব মিত্র একমত নন। জেমস গিলমোর, যিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইউরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থায় রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তিনি দেরিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাইডেনের সমালোচনা করেছেন। তবে তিনি ইউরোপীয় মিত্রদের আরো দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যা ট্রাম্পের মতের সঙ্গে মিলে।
তিনি বলেন, "বাইডেনের প্রতি আমার সমালোচনা ট্রাম্পের সমর্থক ও অন্যান্য রক্ষণশীলদের মতোই– বাইডেন প্রশাসন এই বিষয়ে খুব ধীরে পদক্ষেপ নিয়েছে।"
পিউ রিসার্চের এক জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ রিপাবলিকান ইউক্রেনকে আরও সাহায্য দেওয়ার বিরোধিতা করছেন। তারা মনে করেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়।
ট্রাম্পের পরবর্তী ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার বিপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন এবং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনক্ষমতা সীমিত।
তবে জেমস গিলমোর বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার অস্ত্র ব্যবস্থাকে উন্নত করছে। ইউরোপীয় মিত্রদের ভূমিকা বাড়ানো জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, "এই বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুরোপুরি সঠিক– পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো এগিয়ে এলে জোট আরও শক্তিশালী হয়।"
নিশ্চুপ পুতিন
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের ওপর পূর্ণ আক্রমণ শুরু করার পর থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করছেন। তিনি ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক সহায়তাকে সরাসরি যুদ্ধের অংশ বলে বর্ণনা করেছেন এবং প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) তার মুখপাত্র বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র "আগুনে তেল ঢালছে"।
পুতিন কখনও কখনও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনাও উত্থাপন করেছেন। তবে অধিকাংশের ধারণা, এটি সম্ভব নয় কারণ পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার সবার জন্য, এমনকি রুশদের জন্যও বিপদের কারণ হবে।
ওয়ার স্টাডি ইনস্টিটিউট নামক একটি থিংক ট্যাংক জানিয়েছে, ২২৫টি রাশিয়ান সামরিক স্থাপনা এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালের মধ্যে রয়েছে।
ইউক্রেনে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত কার্ট ভলকার বলেন, বাইডেনের সিদ্ধান্ত ইউক্রেনকে রাশিয়ার এয়ারফিল্ড, গোলাবারুদের গুদাম, জ্বালানি সরবরাহ এবং লজিস্টিকসকে সফল লক্ষ্যবস্তু বানাতে সাহায্য করবে। এগুলো এখনও রাশিয়ার সুরক্ষিত এলাকায় রয়েছে।
ভলকার মনে করেন, বাইডেনের সিদ্ধান্ত রাশিয়াকে আরও সতর্ক করবে। তিনি পুতিনের হুমকির ব্যাপারে মন্তব্য করে বলেন, "পুতিনের এটা বোঝা উচিত ছিল,ইউক্রেন পালটা আক্রমণ করবে।"
ইউক্রেন কিছু সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের এটিএসিএমএস এবং যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে, যদিও এর সংখ্যা অজানা। তবে ইউক্রেনকে রাশিয়ার মধ্যে এগুলো ব্যবহার করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যও আমেরিকার পথ অনুসরণ করতে পারে এবং ইউক্রেনকে একইভাবে অনুমতি দিতে পারে, তবে তারা এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।
হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তারা মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে বলছেন, বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত রাশিয়ার উত্তর কোরীয় সেনা মোতায়েনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছে। এটি পিয়ংইয়ংকে সতর্ক করার জন্য একটি সংকেত।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস গিলমোর বলেছেন, "উত্তর কোরীয় সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে পুতিনই যুদ্ধ বাড়িয়েছেন। এবং যুক্তরাষ্ট্র একা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না এবং এই স্বৈরাচারীকে ইউক্রেন দখল করতে দিতে পারে না।"
এই পদক্ষেপটি সম্প্রতি ইউক্রেনের ওপর চালানো একটি রুশ হামলার পর নেওয়া হয়েছে। সোমবার, ইউক্রেনের ওডেসায় একটি হামলায় সাতজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন এবং ৪৭ জন আহত হয়েছেন।