ডলারের বিকল্প মুদ্রা আনলে ব্রিকস দেশগুলোর ওপর ১০০% শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তার আমলে ব্রিকস সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে ডলারের পরিবর্তে অন্য কোনো মুদ্রা ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, নইলে তাদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ একটি পোস্টে বলেন, 'ব্রিকস দেশগুলো ডলারের পরিবর্তে নতুন কোনো মুদ্রা তৈরি করার চেষ্টা করবে, আর আমরা চুপচাপ বসে থাকব, এ হতে পারে না। আমরা এই দেশগুলোর কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি চাই, তারা নতুন কোনো ব্রিকস মুদ্রা তৈরি করবে না বা ডলারকে প্রতিস্থাপন করতে অন্য কোনো মুদ্রাকে সমর্থন করবে না। যদি তারা এ নির্দেশনা না মানে, তবে তারা ১০০ শতাংশ শুল্কের সম্মুখীন হবে এবং মার্কিন অর্থনীতিতে তাদের পণ্য বিক্রির সুযোগকে বিদায় জানাতে হবে।'
২০১১ সাল থেকে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে ব্রিকস গঠিত হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইথিওপিয়া এবং মিশর আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোটে যোগ দিয়েছে—এটি গত এক দশকের মধ্যে ব্রিকসের প্রথম সম্প্রসারণ।
গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পানডোর জানিয়েছিলেন, ৩৪টি দেশ ব্রিকস-এ যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ব্রাজিলের নেতা লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা দক্ষিণ আমেরিকায় একটি সাধারণ মুদ্রা তৈরি করার প্রস্তাব দেন, যা মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাবে।
ব্রিকস সদস্যভুক্ত দেশগুলো যেমন- রাশিয়া, চীন এবং ইরান তাদের নিজস্ব মুদ্রা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার করলে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলোকে এড়িয়ে যেতে পারে। তবে, ব্রিকসের অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক পার্থক্যের কারণে নতুন কোনো মুদ্রা চালুর সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ।
বিস্তৃত এই জোট চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রধান বড় দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।
একইভাবে, এটি রাশিয়ার জন্যও বড় এক সমর্থন, যা ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এ বছর রাশিয়া ব্রিকসের চেয়ারম্যানশিপ গ্রহণ করেছে।
অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনা নেতা শি জিনপিং পশ্চিমা দেশগুলোর একঘরে হয়ে পড়ার বার্তা তুলে ধরেন। তারা দাবি করেন, বিশ্বব্যাপী 'গ্লোবাল মেজরিটি' দেশগুলো তাদের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার প্রয়াসে তাদের পাশে রয়েছে।
নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ট্রাম্প মেক্সিকো, কানাডা ও চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বড় আকারে শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। ট্রাম্প বলেছেন, অবৈধ অভিবাসন, অপরাধ এবং মাদক চোরাচালানের মোকাবিলা করতেই এই পদক্ষেপ।
এই ঘোষণার পর মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমের সঙ্গে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো ফোনালাপ করেন। যদিও পরবর্তীতে দু'পক্ষের বক্তব্যে মিল পাওয়া যায়নি।
এদিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শুক্রবারের ডিনার প্রসঙ্গে ট্রুডো বলেন, এটি ছিল 'একটি চমৎকার আলোচনা', অন্যদিকে ট্রাম্প একে 'অত্যন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক' বলে উল্লেখ করেন।