ট্রাম্পের প্রথম শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবেন পুতিন, জানালেন রুশ টাইকুন
ক্রেমলিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকা রুশ টাইকুন কনস্তানতিন মালোফেয়েভ সতর্ক করে বলেছেন, যদি নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মস্কোর নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের বিষয়ে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনায় না জড়ান, তাহলে রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা ব্যর্থ হবে।
২০১৪ সালে রাশিয়া কর্তৃক ক্রেমলিন দখলের ঘটনায় মালোফেয়েভের ভূমিকার কারণে ওই সময় তার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যা এখনও বলবৎ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ ধনকুবেরের জব্দ করা বিপুল পরিমাণ সম্পদ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহার করেছে। সম্প্রতি দুবাইতে এক বিলাসবহুল রিসোর্টে তার সঙ্গে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের আলাপ হয়।
মালোফেয়েভের ধারণা- ট্রাম্পের নতুন নিয়োগ দেওয়া তার বিশেষ দূত কিথ কেলগ যে শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেটি প্রত্যাখ্যান করতে পারেন।
মালোফেয়েভ বলেন, 'কেলগ তার প্রস্তাব নিয়ে মস্কোতে আসবেন, আমরা সেটি গ্রহণ করব এবং এরপর তাকে তার পথে ফিরে যেতে বলব। কারণ, আমরা এসবের কোনোটিই পছন্দ করি না। আর এটিই হবে তার সঙ্গে পুরো আলোচনা।'
তিনি বলেন, আলোচনা গঠনমূলক করতে হলে, আমাদের ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলার দরকার নেই, বরং ইউরোপ ও বিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে হবে।
মালোফেয়েভ জানান, ট্রাম্প কেবল তখনই এ যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন, যদি তিনি দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন এবং তারপর পুতিনের সঙ্গে বৈশ্বিক শৃঙ্খলা সংক্রান্ত ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে সম্মত হন।
তিনি সতর্ক করেন যে কিয়েভ রাশিয়ার এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর 'বিশ্ব পারমাণবিক যুদ্ধের কিনারায় রয়েছে'। এর জবাবে পুতিনও ইউক্রেনে পরীক্ষামূলকভাবে পরমাণু অস্ত্রবাহী ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ট্রাম্প কেলগকে মনোনীত করার মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, ইউক্রেনীয় শহর দিনিপ্রোতে পুতিনের সাম্প্রতিক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও হামলা বৃদ্ধির হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটনকে রাশিয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, '[পুতিন] মনস্তাত্ত্বিক কারণে [পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র] ব্যবহার করেছেন। সামরিক দিক থেকে কার্যকরী- ঠিক এ কারণে পুতিন এটি ব্যবহার করেননি। বরং তিনি পশ্চিমাদের দেখাতে চেয়েছেন যে 'দেখ, আমি কী করতে পারি।'
যদি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া থেকে নিজেদের বিরত না রাখে, তাহলে রাশিয়া একটি কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলেও সতর্ক করেন মালোফেয়েভ।
তিনি মনে করেন, মস্কো কেবল তখনই এটিকে স্থায়ী শান্তির শর্ত হিসেবে মেনে নেবে যদি ট্রাম্প অন্যান্য বৈশ্বিক ইস্যু, যেমন- মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ও চীনের সঙ্গে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রকে এটি স্বীকার করতে হবে যে ইউক্রেন রাশিয়ার মূল স্বার্থের অংশ।
'আমরা দীর্ঘমেয়াদী শান্তি চাই — আরও চাই বৈশ্বিক শৃঙ্খলার বিষয়ে সাধারণ কিছু চুক্তি। ট্রাম্প ইতিহাসে তার নাম লেখাতে চান, তিনি শীঘ্রই ৮০ বছর বয়সী হতে যাচ্ছেন। তিনি একজন দাদার বয়সি। পুতিনের বয়সও ৫০ বছরের নিচে নয়। তারা দুজন যা রেখে যাবে, সেটি হবে আমাদের উত্তরাধিকার', যোগ করেন মালোফেয়েভ।
যুদ্ধবিরতির জন্য পুতিন যেসব শর্ত নির্ধারণ করেছেন, মালোফেয়েভের এ অনুমানগুলো সেসব শর্তের চেয়ে আরও কয়েক ধাপ অগ্রবর্তী। পুতিনের শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইউক্রেনকে চারটি অঞ্চল রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে এবং কখনো ন্যাটোতে যোগ না দিতে সম্মত হতে হবে।
মালোফেয়েভ সরকারি কোনো পদে না থাকলেও ক্রেমলিনের বিভিন্ন নীতি গ্রহণ বা পরিবর্তনের সঙ্গে প্রায়ই তার ভূমিকা দেখা যায়। গত সেপ্টেম্বরে তিনি ক্রেমলিনের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া এলভোভা-বেলোভাকে বিয়ে করেন। এ নারীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইউক্রেন থেকে শিশু অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
যদিও পুতিন সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি করেছেন, তবে মালোফেয়েভ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন এ চাপ ক্রেমলিনকে তার মিত্রদের কাছ থেকে সমর্থন পেতে সহায়তা করেছে, বিশেষ করে চীন, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে।
মালোফেয়েভ বলেন, বহিরাগত হুমকি আমাদের শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশি সংঘাত ও বিবাদ থাকবে, শাসন ব্যবস্থা ততই শক্তিশালী হবে। কারণ, এতে নেতাদের জন্য জনগণের পূর্ণ সমর্থন পাওয়া সহজ হয়।