আপনি চাকরি ছেড়ে দিলে কেন আপনার নিয়োগকর্তা খুশিই হবেন!
ভালো কর্মীদের চাকরিতে নিয়ে আসতে পারলে প্রতিষ্ঠান সফলতা লাভ করে। এটা নিয়োগকর্তারা বেশ ভালো করেই জানেন। তবে অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, আন্ডারপারফর্মার নয় এমন কর্মীদেরও কোম্পানি নিজ থেকে অব্যাহতি দিতে চায়। বিষয়টি যে সরাসরি জোরপূর্বক করা হয় এমন না। বরং নিয়মের নানা বেড়াজালে ফেলেই চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।
এমন পরিস্থিতির পেছনে অবশ্য বেশ কয়েকটি কারণ আছে। হিউম্যান রিসোর্স কনসালটেন্ট জেসি মেসচুক বলেন, "কোম্পানির নীতি-নির্ধারকেরা মনে করতে পারে যে, ব্যবস্থাপনায় খরচ অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। কিংবা এমনও হতে পারে যে ওই কর্মী যে প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন, সেটি আর ততোটা জনপ্রিয় নয়। এআইয়ের প্রভাবেও বহু কর্মীর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যেতে পারে।"
কারণ যেটাই হোক না কেন, কর্মীরা এমন পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিলে কোম্পানির সময় ও অর্থ উভয়ই সাশ্রয় হয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে আলাদা করে কর্মী ছাঁটাইয়ে নানা কৌশল নিতে হয় না। উদাহরণ হিসেবে সপ্তাহে পাঁচদিন অফিসের বিষয়টিই ধরা যাক। খরচ ও কর্মী সংখ্যা কমাতে নানা কোম্পানিগুলো এ উদ্যোগ নিচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার গঠনের পর ইলন মাস্ক ও বিবেক রামস্বামীকে 'ডিপার্টমেন্ট অব গভর্মেন্ট ইফিসিয়েন্সি' এর সহকারী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে তারা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এক অপ-এডে বলেন, "ফেডারেল কর্মচারীদের সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিসে আসতে বাধ্য করার ফলে স্বেচ্ছায় অনেকে চাকরি ছাড়বে। এটাকে আমরা স্বাগত জানাই।"
এর অংশ হিসেবে ডিপার্টমেন্ট হেড কিংবা লাইন ম্যানেজারের মতো পদে থাকা ব্যক্তিরা অনেক সময় অধীনস্থ ব্যক্তিদের ওপর নানা অপ্রাসঙ্গিক দায়িত্ব প্রদান করে। কিংবা এমনও হতে পারে ওই কর্মীর দায়িত্ব কমিয়ে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট থেকে সরিয়ে দিতে পারে। এভাবে তিনি বোঝাতে পারেন যে, আপনার ইনপুট বর্তমানে এ কোম্পানিতে ততোটা মূল্যবান নয়।
ক্ষেত্রবিশেষে এমন পরিস্থিতিতে আপনাকে বোনাস কিংবা বেতন বৃদ্ধি না করে বরং খারাপ পারফরম্যান্সের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নজরে আনতে পারে। কিংবা আপনার অধিনস্ত কাউকে প্রমোশন দিয়ে দিতে পারে।
মেসচুক অবশ্য এমন কৌশলগুলো কোম্পানি প্রয়োগ করুক সেটি চান না। কেননা এতে একজন কর্মী অস্বস্তিকর পরিবেশে উপনীত হওয়ার পাশাপাশি নিয়োগকর্তা নিজেও বিপদে পরতে পারেন।
তিনি বলেন, "আপনি যে সংস্কৃতি তৈরি করছেন তা নিয়ে সতর্ক থাকুন। আপনি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চান যেখানে পারদর্শী কর্মীদের রাখা হবে। সেক্ষেত্রে আপনার ওই পদক্ষেপগুলো অব্যাহতি প্রদান করতে চাওয়া কর্মী ছাড়াও পাশাপাশি কোম্পানির সমস্ত কর্মীদের একই বার্তা দিতে পারে।"
মেসচুক অবশ্য ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বনকে বেশি কার্যকরী বলে মনে করেন। এক্ষেত্রে আর্থিকভাবে সম্ভব হলে তিনি কোম্পানিগুলোকে কর্মীদের স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার একটি প্রস্তাব দেওয়ার কথা বলেন। এক্ষেত্রে কোনো কর্মী যদি মনে করেন প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করার মতো অবস্থা নেই তবে তিনি নিজ থেকেই চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন।
উইলিয়ামস বলেন, "এমন পরিস্থিতিতে যারা প্রথমেই চাকরি ছেড়ে চলে যাবে তারাই সেরা কর্মী। অনেকেই প্রথমেই বলবেন, 'আমি সপ্তাহে পাঁচদিন অফিসে আসতে পারব না'। তারাই সবচেয়ে ভালো পারফর্মার। কারণ, তাদের বিকল্প আছে।"
তিনি বলেন, "কেননা এমন পরিস্থিতিতে কাঙ্ক্ষিত লোকই যে চলে যাবেন বিষয়টি এমন নয়। বরং এখানে জগাখিচুড়ি পরিস্থিতির তৈরি হয়। কর্মীরা আতঙ্কগ্রস্ত থাকে; বিশৃঙ্খলভাবে একেকজন চলে যেতে থাকেন।"
কোম্পানি থেকে চলে যেতে নিয়োগকর্তারা এমন পরিবেশ তৈরি করলে আপনি তাদের আইনিভাবে বাধা দিতে পারেন না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ কিংবা গোষ্ঠীভেদে আপনার প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে এমন প্রমাণ না করতে পারলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।
কর্মীদের নিয়ে কাজ করা মার্কিন আইনজীবী ব্রায়ান হেলার বলেন, "চাকরি ছাড়তে না চাইলে এক্ষেত্রে আপনার করণীয় হচ্ছে আরও কঠোর পরিশ্রম করা এবং আপনার কাজ সামনে তুলে আনা। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে, কেন আপনিই সেরা এবং আপনাকে ছেড়ে দেওয়া কোম্পানির জন্য কেন ক্ষতিকর।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান