রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের 'অবিলম্বে' যুদ্ধবিরতি চান ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার (৮ ডিসেম্বর) ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে প্রকাশিত এক বার্তায় তিনি এই সংঘাতকে "উন্মাদনা" আখ্যা দিয়ে এর দ্রুত অবসানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
প্যারিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প তার বার্তায় বলেন, "জেলেনস্কি এবং ইউক্রেন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চায় এবং এই উন্মাদনা থামাতে চায়। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত এবং আলোচনা শুরু হওয়া উচিত।"
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি হোয়াইট হাউজে তার অভিষেকের আগেই এই সংঘাতের অবসান ঘটাবেন। তবে এ বিষয়ে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কোনো বিস্তারিত বিবরণ তিনি এখনো দেননি।
ট্রাম্পের ইউক্রেন-রাশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত ইতোমধ্যে যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি এবং ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ বিলম্বিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। তবে ট্রাম্পের রোববারের প্রস্তাব এই পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্কিত কি না, তা নিয়ে তার ট্রানজিশন টিম কোনো মন্তব্য করেনি।
বার্তায় ট্রাম্প আরও বলেন, "আমি ভ্লাদিমিরকে (পুতিন) ভালো করে জানি। এটি তার কাজ করার সময়। চীন সাহায্য করতে পারে। বিশ্ব অপেক্ষায় রয়েছে!"
তবে, এর আগে রাশিয়া ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ফোনালাপের বিষয়টি অস্বীকার করেছিল।
ট্রাম্প আরও দাবি করেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারকে বিদ্রোহী বাহিনী রাতারাতি ক্ষমতাচ্যুত করতে সক্ষম হয়েছে, কারণ রাশিয়া তখন আসাদকে রক্ষা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ জয়ে মনোযোগ দিয়েছে।
এদিকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার শাসনামলে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার ফ্রান্স সফরের আগে রেকর্ড করা এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প বলেন, "যদি সম্ভব হয়, আমি এই যুদ্ধ শেষ করব।" তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা কমানো হতে পারে।
ন্যাটো নিয়ে তিনি বলেন, "যদি অন্য দেশগুলো তাদের অংশীদারিত্বের আর্থিক দায়ভার পরিশোধ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোতে থাকবে।"
বর্তমানে ন্যাটোর ৩২ সদস্য দেশের মধ্যে ২৩টি দেশ ২ শতাংশ জিডিপি প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ন্যূনতম লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করছে, যা এক দশক আগে মাত্র তিনটি দেশ পূরণ করত। যুক্তরাষ্ট্রকে ন্যাটো থেকে প্রত্যাহার করতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন, আর ন্যাটো নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে দীর্ঘদিন ধরে দ্বিদলীয় সমর্থন বিদ্যমান।
যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের মতামত
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে বিভিন্ন শর্ত তুলে ধরেছে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ বলেছেন, "যদি রাশিয়ার সঙ্গে কার্যকর শান্তি চাওয়া হয়, তবে অবশ্যই কার্যকর শান্তি নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা প্রয়োজন। আমাদের ভূখণ্ডে যুদ্ধ এনেছে রাশিয়া এবং শান্তি বিঘ্নিত করতেও তাদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি।"
জেলেনস্কি আরও বলেন, "শুধু কাগজে স্বাক্ষরের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। কোনো নিশ্চয়তা ছাড়া এটি যেকোনো সময় ভঙ্গ হতে পারে, যেমন পুতিন অতীতে করেছেন। আমাদের জনগণের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে শান্তির নিশ্চয়তা প্রয়োজন। দখলদারিত্বকে উপেক্ষা করে শান্তি সম্ভব নয়।"
এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে সেটি ২০২২ সালে ইস্তাম্বুলে হওয়া সমঝোতা এবং বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতাকে ভিত্তি করে হতে হবে।
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করেননি। তবে তার বিশেষ দূত কিথ কেলোগের প্রস্তাবনায় যুদ্ধ চলাকালীন ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাওয়া এবং রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ বিলম্বিত করার কথা বলা হয়েছে।
কেলোগের মতে, "যুদ্ধ বন্ধ করতে আমাদের নতুন চিন্তাভাবনা দরকার। এর অর্থ এই নয় যে, রাশিয়া দখল করা সবকিছু ধরে রাখবে। তবে আলোচনা শুরু করার জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করতে হবে।"
ট্রাম্পের টিমের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেন যদি আলোচনায় বসতে রাজি হয়, তবে তাদের আরও অস্ত্র দেওয়া হবে। তবে ন্যাটো সদস্যপদ পেতে ইউক্রেনকে ১০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
কেলোগ দীর্ঘদিন ধরে একটি শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। এতে একটি "সমগ্র ও যাচাইযোগ্য শান্তি চুক্তি" এবং ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত। ট্রাম্প তার এই বিশেষ দূতকে দায়িত্ব দেওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, উভয়ের মতামত অনেকাংশে মিল রয়েছে।