কানাডায় বাড়ছে ইউথেনেশিয়ার মাধ্যমে মৃত্যু, প্রতি ২০ জনে ১ জন বেছে নিচ্ছেন স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ
কানাডায় চিকিৎসাগত সহায়তায় স্বেচ্ছামৃত্যু, যা ইউথেনেশিয়া নামেও পরিচিত—টানা পঞ্চম বছরের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, বৃদ্ধির হার এবার কিছুটা ধীর হয়েছে। খবর বিবিসি'র।
যখন কোনো ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছেন বা জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে অসহনীয় কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটান, তখন তাকে সেই কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রাণনাশে সহায়তাকেই ইউথেনেশিয়া বা সহজ মৃত্যু বলা হয়।
২০১৬ সালে এই প্রক্রিয়া আইনগতভাবে বৈধ হওয়ার পর কানাডা পঞ্চম বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রথমবারের মতো ইউথেনেশিয়া চাওয়া ব্যক্তিদের জাতিগত পরিচয় সম্পর্কিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২০২৩ সালে কানাডায় প্রায় ১৫ হাজার ৩০০ জন ইউথেনেশিয়ার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করেছেন, যা দেশটির মোট মৃত্যুর ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২৭ সালের মধ্যে মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রেও এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আইন প্রণয়নের চেষ্টা চলছে।
কানাডার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর ইউথেনেশিয়ার হার ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি পূর্ববর্তী বছরে গড় ৩১ শতাংশ বৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম। তবে, কেন এই বৃদ্ধির হার কমেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রায় ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীর স্বাভাবিক মৃত্যু প্রত্যাশিত ছিল। অবশিষ্ট ৪ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছিলেন, যেখানে প্রাকৃতিক মৃত্যু আসন্ন ছিল না।
ইউথেনেশিয়ার আবেদনকারীদের গড় বয়স ছিল প্রায় ৭৭ বছর, এবং ক্যানসার ছিল সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
প্রথমবারের মতো, জাতিগত তথ্য সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি দেখায় যে ৯৬ শতাংশ ইউথেনেশিয়া প্রাপ্ত ব্যক্তি শ্বেতাঙ্গ, যা কানাডার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ। এশীয়দের মধ্যে এই হার ছিল মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
কুইবেক প্রদেশে ইউথেনেশিয়ার হার সবচেয়ে বেশি। কানাডার মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ এ প্রদেশে বাস করে এবং এখানে দেশের মোট মৃত্যুর ৩৭ শতাংশ ইউথেনেশিয়ায় ঘটেছে। কেন কুইবেকে এই হার বেশি, তা জানতে কুইবেক সরকার ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে একটি গবেষণা শুরু করেছে।
ইউথেনেশিয়ার ক্ষেত্রে কানাডা এখনও নেদারল্যান্ডসের পেছনে রয়েছে, যেখানে এই পদ্ধতি ৫ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সংসদে একটি বিল পাস হয়েছে, যা মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত এমন অসুস্থ রোগীদের ইউথেনেশিয়ার অনুমতি দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে, এই বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কিছু আইনপ্রণেতা কানাডার উদাহরণকে সতর্কবার্তা হিসেবে তুলে ধরেছেন।
কানাডার ইউথেনেশিয়া প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। কিছুক্ষেত্রে দেখা গেছে, মানসিক অসুস্থতা বা অন্য জটিল পরিস্থিতিতে থাকা মানুষদের ইউথেনেশিয়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এক মহিলার ইউথেনেশিয়া আবেদন মঞ্জুর করা হয়, যিনি বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রতি অতিসংবেদনশীল এবং নিরাপদ আবাসনের অভাবে ছিলেন। আরেক ক্যানসার রোগী অভিযোগ করেন, তাঁর অস্ত্রোপচারের সময় তাঁকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ইউথেনেশিয়ার প্রসঙ্গ তোলা হয়।
কানাডিয়ান সংবাদমাধ্যম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে এমন ঘটনাও তুলে ধরেছে, যেখানে অনেকে হাউজিং বা সুবিধার অভাবে ইউথেনেশিয়া বিবেচনা করছেন।
সরকার বলেছে, কঠোর যোগ্যতার ভিত্তিতেই এই প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। তবে সমালোচকরা মনে করেন, এটি দ্রুতগতিতে বাড়ছে এবং আরো নিয়ন্ত্রণ দরকার।