২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী পরিবার: ফের শীর্ষে উঠে এসেছে ওয়ালটনের নাম
এনডব্লিউ সেকেন্ড স্ট্রিটের ছোটোখাটো ইটের ভবনটি দেখে এর মালিকদের বিপুল সম্পদের কথা কল্পনা করা যায় না। ভবনটি আরকানসাসের ডাউনটাউন বেন্টনভিল শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। বাড়িটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য ওয়ালটন এন্টারপ্রাইজেসের সদর দপ্তর এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য পরিবারের সব সম্পদের তত্ত্বাবধানকেন্দ্র।
এই বেসরকারি বিনিয়োগ অফিসের মাধ্যমেই ওয়ালমার্ট ইনকর্পোরেটেডের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটনের বংশধররা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাদের অর্জিত সম্পদ কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলেছেন।
৬২ বছর আগে প্রথম ওয়ালমার্ট খোলা হয়। এর পর থেকে এই পরিবারকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে ওয়ালটন পরিবারের সম্পদ রেকর্ড ৪৩২.৪ বিলিয়ন ডলার, যা তাদের আবারও ব্লুমবার্গের করা বিশ্বের ধনাঢ্য পরিবারের তালিকার শীর্ষে নিয়ে গেছে।
তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো: ওয়ালমার্ট শেয়ার। ২০২৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ৮০% বৃদ্ধি পেয়েছে, এর ফলে তাদের সম্পদ মাত্র ১২ মাসে ১৭২.৭ বিলিয়ন ডলার বেড়ে গেছে। অর্থাৎ, তাদের সম্পদ দৈনিক ৪৭৩.২ মিলিয়ন ডলার বা প্রতি মিনিটে ৩২৮,৫৭৭ ডলার বেড়েছে। এর ফলে এবার তারা ২০২৩ সালে ব্লুমবার্গ তালিকায় শীর্ষে থাকা এমিরাতি রাজপরিবারকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এই ধনসম্পদের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন স্যাম ওয়ালটন। তিনি কৌশলগতভাবে তার সন্তানদের মধ্যে সম্পদ ভাগ করে দেন, যাতে পরিবারটি একত্রে থাকে এবং তাদের সম্পদ ক্রমাগত বাড়তেই থাকে।
১৯৯২ সালে তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা একটি মূল নীতি অনুসরণ করে আসছেন, তা হলো: একত্রে থাকা।
তাদের ওয়ালমার্ট শেয়ারের তত্ত্বাবধান করে ওয়ালটন এন্টারপ্রাইজেস।
এই একটি কৌশলের মাধ্যমে ওয়ালটন পরিবারের মতো আরও অনেক পরিবার সফল হয়েছে। বড় বড় সম্পদশালী পরিবারগুলো একত্রে থাকলে, সেগুলোর মুনাফা বেশি হয় এবং নিয়ন্ত্রণও ভালোভাবে করা যায়।
উদাহরণস্বরূপ- বিলাসবহুল ব্র্যান্ড হার্মিস এবং ওষুধ প্রস্তুতকারক রোচের পরিবারের সদস্যরাও পারিবারিক চুক্তির মাধ্যমে তাদের প্রতিপত্তি ধরে রেখেছেন।
ওয়ালটন পরিবারের মতো ব্লুমবার্গের তালিকায় থাকা ২৫টি পরিবারের বেশিরভাগই এ বছর শক্তিশালী বাজারের কারণে আরও ধনী হয়েছে। সম্মিলিতভাবে তারা ৪০৬.৫ বিলিয়ন ডলার লাভ করেছে। এই তালিকায় রয়েছে অনেকগুলো পরিচিত নাম: জনসন (মিউচুয়াল ফান্ড এবং অবসর অ্যাকাউন্ট), থমসন (মিডিয়া), মঙ্গল এবং ফেরেরো (ক্যান্ডি)।
তালিকায় নতুন যোগ হওয়া পরিবারের মধ্যে রয়েছে অফার পরিবার, যার সম্পদ একটি ইসরায়েলি শিপিং কোম্পানি থেকে শুরু হয়েছিল এবং চেরাভানন্ট নামের একটি থাই পরিবার, যারা ফিশ ফার্ম এবং ৭-ইলেভেন দোকানসহ একটি বড় কনগ্লোমারেট পরিচালনা করেন।
অর্থ পরিবারকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে। আবার এই অর্থই পরিবারকে একত্রে ধরে রাখতেও সহায়তা করতে পারে।
বছরের পর বছর ধরে ওয়ালটন পরিবার ধীরে ধীরে ওয়ালমার্ট শেয়ার বিক্রি করে নিজেরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছেন। বর্তমানে এই পরিবারের মোট সম্পদের ৭০ শতাংশই আসে ওয়ালমার্ট থেকে।
স্যাম ওয়ালটনের বংশধরদের আর ওয়ালমার্টে সরাসরি ভূমিকা নেই। তার ছেলে রব ৮০ বছর বয়সে ২০২৪ সালে বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার জামাতা ও ওয়ালমার্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান গ্রেগ পেনার রবের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। বর্তমানে এই পরিবার অন্য ক্ষেত্রেও তাদের অর্থ বিনিয়োগ করছেন।
রব ওয়ালটন, তার মেয়ে ক্যারি এবং তার স্বামী পেনার ২০২২ সালে এনএফএল-এর ডেনভার ব্রঙ্কোসের জন্য সেসময়ের রেকর্ড ৪.৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিলেন।
স্যাম ওয়ালটনের মেয়ে অ্যালিস ওয়ালটন (৭৫) বেন্টনভিলে একটি শীর্ষস্থানীয় শিল্পকলা মিউজিয়াম স্থাপন করেছেন, যা শহরটিকে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করেছে।
স্যামের নাতি লুকাস ওয়ালটন (৩৮) তার কিচু সম্পদ 'বিল্ডার্স ভিশন' প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিনিয়োগ করছেন।
অ্যাকুইল্যান্সের ক্লায়েন্ট অপারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোল ক্ল্যাবাগ বলেছেন, আপনি যখন কোনো মানুষকে তার নিজস্ব আগ্রহ অনুসারে সম্পদ ব্যবহার ও বিনিয়োগ করতে দেবেন, তখন তা থেকে শুধু আর্থিক লাভই নয়, আরও অনেক কিছু পাওয়া যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'এটি তাদের মধ্যে সম্পদ সংরক্ষণের দায়বদ্ধতার অনুভূতিও জন্ম দেয়।'
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি