সফরসঙ্গী হতে চাকরি ছেড়েছিলেন বাবা; দীর্ঘদিন স্পন্সর না পেয়েও দাবায় সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গুকেশ
মাত্র সাত বছর বয়সে গুকেশ ডম্মারাজু দাবায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার পিতা-মাতাও ছেলের এই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন। এরপর ১১ বছর পর মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি দাবায় সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
বিশ্বনাথন আনন্দের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে গুকেশ এই অনন্য কীর্তি গড়লেন। তবে তার এই যাত্রা খুব একটা সহজ ছিল না। পিতা-মাতার অজস্র আত্মত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম ও হার না মানা দৃঢ় মানসিকতায় তিনি এই সাফল্য অর্জন করেছেন।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় পর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে গুকেশ বলেন, "সাত বছর বয়সে যখন আমি দাবা খেলা শুরু করি তখন থেকেই এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আমার থেকেও স্বপ্নটি আমার পিতা-মাতার জন্য বড় ছিল।"
গুকেশের স্বপ্ন পূরণের যাত্রায় সঙ্গী হতে বাবা রজনীকান্তকে ২০১৭-১৮ সালে ইএনটি সার্জনের চাকরি ছাড়তে হয়েছিল। তখন সংসারের পুরো দায়িত্ব সামলাতে হয় মাইক্রোবায়োলজিস্ট মা পদ্মাকে।
চাকরি ছেড়ে দিয়ে গুকেশের সাথে তার বাবা দেশ বিদেশের নানা প্রতিযোগিতার সঙ্গী হয়েছেন। তখন আর্থিকভাবেও বেশ হিমশিম খেতে হয়েছিল তাদের।
গুকেশ বলেন, "আমাদের পরিবার খুব সচ্ছল ছিল না। তাই তাদের অনেক আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কিন্তু আমি তখন সেটা বুঝতে পারিনি। ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মাঝে আমরা এত সংকটে ছিলাম যে, আমার বাবা-মায়ের পরিচিতরা আমাকে স্পন্সর করেছিল। আমি যেন শুধুমাত্র টুর্নামেন্ট খেলতে পারি তাই আমার বাবা-মাকে জীবনধারায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। তারা সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন।"
গুকেশ ২০১৩ সালে দাবায় ক্যারিয়ার শুরু করেন। তখন দিনে এক ঘণ্টা ও সপ্তাহে তিনদিন তিনি প্রশিক্ষণ নিতেন। একই বছর বিশ্বনাথন আনন্দ নরওয়ের দাবাড়ু ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব হারিয়েছিলেন।
বয়সভিত্তিক নানা পর্যায় পার করে গুকেশ ২০১৭ সালে ফ্রান্সে এক আসরে অংশ নেন। যেখানে তিনি ইন্টারন্যাশনাল মাস্টারের খ্যাতি অর্জন করেন।
গুকেশ অনূর্ধ্ব ৯ এশিয়ান স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। আর ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব ১২ ইয়ুথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপেও তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন।
দাবার প্রতি তীব্র আকর্ষণের ঝোঁক থেকে চতুর্থ শ্রেণি থেকেই নিয়মিত আর স্কুলে যাননি গুকেশ। বরং এই খেলাতেই পারদর্শিতা অর্জন করতে ছেলেকে মনোযোগী করেন তার পিতা-মাতা।
২০১৯ সালে নয়াদিল্লির এক আসরে গুকেশ দাবার ইতিহাসে তৎকালীন সময়ের দ্বিতীয় কনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টারের স্বীকৃতি লাভ করেন। তবে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিমন্যু মিশ্র তাকে সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নেন।
খুব দ্রুত নানা আসরে সাফল্য পেতে থাকলেও গুকেশ প্রথমদিকে তেমন কোনো স্পন্সর পাচ্ছিলেন না। সেক্ষেত্রে নিজের পাওয়া প্রাইজমানির অর্থ ও পিতা-মাতার উত্তোলনকৃত ক্রাউড ফান্ডিংয়ের অর্থ খরচ করে তাকে খেলা চালিয়ে যেতে হয়েছিল।
এতসব চ্যালেঞ্জ থাকার পরেও নিজের আইডল আনন্দকে সরিয়ে ভারতের র্যাংকিংয়ে এক নম্বরে উঠে আসেন গুকেশ। অন্যদিকে করোনাকালীন ওয়েস্টব্রিজ-আনন্দ চেস একাডেমিতে তিনি নিজেকে আরও দক্ষ করতে থাকেন।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান