জিমি কার্টারের নামে ভারতের যে গ্ৰামের নাম
আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। তবে অনেকেই হয়তো জানে না, যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে কার্টারের নামে নামকরণ করা হয়েছিল ভারতীয় এক গ্রামের।
প্রায় ৫০ বছর আগে জিমি কার্টার এই গ্রামে সফর করেছিলেন। গ্রামবাসী তার সম্মানে নিজেদের গ্রামের নাম বদলে 'কার্টারপুরি' দিয়েছিল।
এখনও গ্রামটি তার সেই সফরের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে আসছে। এমনকি মৃত্যুর পরও তারা কার্টারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেননি।
কার্টার ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। গত রবিবার ১০০ বছর বয়সে প্রয়াত হন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ। আগামী বৃহস্পতিবার তাকে ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথেড্রালে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।
'কার্টারপুরি' বা 'কার্টারের গ্রাম' নামে পরিচিত এই ছোট্ট গ্রামটি দিল্লি থেকে প্রায় ২০ মাইল (৩২ কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত।
১৯৬০-এর দশকে জিমি কার্টারের মা লিলিয়ান এই গ্রামে অল্পকিছুদিনের জন্য নার্স ও স্বেচ্ছাসেবিকা হিসেবে কাজ করতে এসেছিলেন। তখন এই গ্রামের নাম ছিল দৌলতপুর নাসিরাবাদ। সেসময় কার্টারও তার স্ত্রী রোজালিনকে নিয়ে এই গ্রামে এসেছিলেন। তার ওই সংক্ষিপ্ত সময়ের উপস্থিতির স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতেই গ্রামের নাম বদলে 'কার্টারপুরি' রাখা হয়।
মতি রাম নামে এক বাসিন্দা কার্টার ও তার স্ত্রী রোজালিনকে নিয়ে গ্রামের মধ্য দিয়ে হেঁটে বেড়ানোর ম্মৃতিচারণ করেন।
তিনি বলেন, 'গ্রামবাসীরা তার স্ত্রীকে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিয়ে দিয়েছিল ... তিনি (কার্টার) একটি হুক্কা টানার চেষ্টা করেছিলেন।'
১৯৭৮ সালের ৩ জানুয়ারি কার্টারের সফরের কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল বলে কয়েকজন গ্রামবাসী বার্তা সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন।
সারা গ্রাম সাজানো হয়েছিল এবং এর প্রধান চত্বরে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল।
কার্টারদের সফরে গ্রামবাসী এতটাই মুগ্ধ হয়েছিল যে, তারা তার সম্মানে নিজেদের গ্রামের নাম পরিবর্তন করেছিল।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি সপ্তাহে কার্টারের মৃত্যুর খবর শুনে তার ফ্রেমে বাঁধানো ছবিতে ফুল শ্রদ্ধা জানায় গ্রামবাসী।
ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি কার্টারের মৃত্যুর পর এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে গ্রামটির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, 'তার প্রতি ভারতের গভীর শ্রদ্ধার একটি নিদর্শন' এটি।
তিনি এই সফরের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ছবিতে দেখা যায় রোজালিন ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে হাসছেন, আর কার্টার গ্রামবাসীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন।
এই সফরের পরে কার্টার গ্রামবাসীর উদ্দেশে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি গ্রামবাসীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।
আজও এই চিঠি ও কার্টারের সঙ্গে তোলা ছবিগুলো গ্রামটির সবচেয়ে মূল্যবান সামগ্রীর মধ্যে অন্যতম।