ক্যান্সার কোষকে স্বাভাবিক কোষে পরিণত করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন দক্ষিণ কোরিয়ার
এবার দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষকেরা ক্যান্সার চিকিৎসায় একটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এই প্রযুক্তিতে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করার পরিবর্তে সেগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে।
বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও প্রায় সকল ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে মূলত ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো ধ্বংস করা হয়। তবে এই পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন- ক্যান্সার কোষগুলো প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করতে পারে এবং এই প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক সুস্থ কোষও ধ্বংস হতে পারে।
দ্য কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (কেএআইএসটি) গত ২০ ডিসেম্বর ঘোষণা করেছে, বায়ো অ্যান্ড ব্রেইন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক কোয়াং-হিউন চো এর নেতৃত্বে একটি গবেষণা দল একটি যুগান্তকারী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এই প্রযুক্তি ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস না করে তাদের পরিবর্তন করে কোলন কোষগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে। ফলে গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচা যাবে।
আমরা জানি, অসংখ্য ছোট ছোট কোষ দিয়ে মানুষের শরীর তৈরি হয়। নির্দিষ্ট সময় পরপর এসব কোষ মারা যায়। পুরনো কোষের জায়গায় জন্ম নেয় নতুন কোষ। দেহের কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। তবে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই কোষের বিভাজন চলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে।
গবেষক দলটি লক্ষ্য করেছেন, অনকোজেনেসিস বা ক্যান্সার হওয়ার প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক কোষগুলো তাদের স্বাভাবিক পরিবর্তনের ধারা থেকে পিছিয়ে যায়। অর্থাৎ, এই কোষগুলো স্বাভাবিক পরিবর্তনের ধারা না মেনে অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করতে শুরু করে, যা ক্যান্সারের সূচনা করে।
এই ধারণা থেকে তারা একটি 'ডিজিটাল টুইন' তৈরি করেছেন, যা স্বাভাবিক কোষের বিভাজনের ধারার সঙ্গে সম্পর্কিত জেনেটিক নেটওয়ার্কের ডিজিটাল কপি বা 'ডিজিটাল টুইন' তৈরি করে।
এটি একটি ভার্চুয়াল মডেল বা সিমুলেশন। এটি মূলত কোষের পরিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য একটি ডিজিটাল মডেল তৈরি করা। এরপর সিমুলেশন বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষকরা ধাপে ধাপে সেই গুরুত্বপূর্ণ মলিকুলার সুইচগুলো শনাক্ত করেছেন, যেগুলো স্বাভাবিক কোষের পরিবর্তন ঘটায়। এই মলিকুলার সুইচগুলো শনাক্ত করে তারা ক্যান্সার কোষগুলোকে স্বাভাবিক কোষে পরিণত করার উপায় খুঁজতে থাকেন।
এরপর এই মলিকুলার সুইচগুলো কোলোন ক্যান্সারের কোষগুলোতে প্রয়োগ করে তারা ক্যান্সার কোষগুলো স্বাভাবিকের মতো অবস্থায় ফিরে যেতে দেখেন।
মলিকুলার এবং সেলুলার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি প্রাণী নিয়ে করা গবেষণায় এই পরীক্ষার ফলাফল নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এই গবেষণা দেখায় যে, ক্যান্সার কোষের জেনেটিক নেটওয়ার্কের ডিজিটাল টুইন বিশ্লেষণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে ক্যান্সার কোষ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।
এই গবেষণার ফলাফল ক্যান্সার চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রফেসর কুয়াং-হিউন চো বলেছেন, 'ক্যান্সার কোষকে আবার স্বাভাবিক কোষে পরিণত করা একটি চমকপ্রদ ঘটনা। এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, ক্যান্সার কোষকে ধাপে ধাপে স্বাভাবিক কোষে পরিণত করা সম্ভব।'
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, 'এই গবেষণা ক্যান্সার কোষকে স্বাভাবিক কোষে পরিণত করার মাধ্যমে, রিভার্স ক্যান্সার থেরাপির একটি নতুন ধারণা উপস্থাপন করেছে। এটি স্বাভাবিক কোষের পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করে ক্যান্সার রিভার্স থেরাপির জন্য লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করবে।'
এই গবেষণার ফলাফল 'বায়োরিভার্ট' কোম্পানিতে স্থানান্তরিত হবে এবং এটি ব্যবহার করে ক্যান্সার রিভার্স থেরাপির উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।