যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক বিমানে ফেরত পাঠানো হলো অবৈধ ১০৪ ভারতীয় অভিবাসীকে
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/06/s4sywh6i2vp5lhnwj7qjnqh64y.jpg)
অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা ভারতীয় নাগরিকদের বহনকারী একটি নির্বাসন ফ্লাইট পাঞ্জাবের অমৃতসরে এসে পৌঁছেছে। টেক্সাস থেকে ছেড়ে আসা সামরিক উড়োজাহাজটি মঙ্গলবার রাতে ভারতের মাটিতে পৌঁছায়। খবর বিবিসি'র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের গণনির্বাসনকে তার প্রশাসনের অন্যতম প্রধান নীতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র অবৈধভাবে প্রবেশ করা প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় নাগরিককে চিহ্নিত করেছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে দেশটি 'যা যথাযথ, তাই করবে' এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিতদের গ্রহণ করবে।
পাঞ্জাবের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্বাসিতদের গ্রহণ করারর জন্য বিশেষ কাউন্টার স্থাপন করা হয়েছে এবং তাদের সাথে 'বন্ধুত্বপূর্ণ' আচরণ করা হবে।
ফ্লাইটটিতে মোট ১০৪ জন নির্বাসিত ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। নিয়মিত যাত্রীদের থেকে আলাদাভাবে তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়। এরপর বাসে করে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, উত্তর প্রদেশ ও গুজরাটসহ নিজ নিজ রাজ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
ট্রাম্প প্রশাসন ক্রমশই মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ ব্যবহার করে নির্বাসিতদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে নির্বাসন নতুন কিছু নয়। ২০২৪ অর্থবছরে চার্টার ও বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে এক হাজারের বেশি ভারতীয় নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই) একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে করে ১০০-র বেশি ভারতীয় নাগরিককে নির্বাসিত করে। তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আইনগত অনুমতি ছিল না। এটি ভারতে নির্বাসনের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার অংশ।
ওই ফ্লাইটেও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী ছিলেন এবং এটি পাঞ্জাবে পাঠানো হয়েছিল, যা অনেক নির্বাসিতের জন্মস্থান। তবে, নির্দিষ্ট শহর বা জেলার কোনো তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া অভিবাসীদের বড় অংশ পাঞ্জাব ও পার্শ্ববর্তী হরিয়ানা রাজ্যের বাসিন্দা। রাজ্যগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা রয়েছে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাট থেকেও অনেকে বিদেশে পাড়ি জমান।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সহকারী সচিব রয়েস বার্নস্টাইন মারে অক্টোবরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতীয় নাগরিকদের নির্বাসন ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে আমাদের ক্রমবর্ধমান সাক্ষাতের প্রতিফলন।'
'সাক্ষাৎ' বলতে বোঝানো হয় এমন পরিস্থিতি, যখন কোনো অবৈধ অভিবাসীকে মেক্সিকো বা কানাডার সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় মার্কিন কর্তৃপক্ষ আটক করে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আইসিই-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫ হাজার ৪৭৭ ভারতীয়কে নির্বাসিত করা হয়েছে। ২০২০ সালে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০০ জন নির্বাসিত হন।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীর সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের নতুন তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭ লাখ ২৫ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী রয়েছেন, যা মেক্সিকো ও এল সালভাদরের অভিবাসীদের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ।
তবে, মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট (এমপিআই) এই সংখ্যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার বলে জানিয়েছে, যা ভারতের অবস্থানকে পঞ্চম স্থানে নামিয়ে আনে। বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ এবং বিদেশে জন্ম নেওয়া জনসংখ্যার ২২ শতাংশ অননুমোদিত অভিবাসী।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সম্প্রতি বলেছেন, ভারত 'অবৈধ অভিবাসনের বিপক্ষে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে, বিশেষ করে যখন এটি সংগঠিত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত।'
তিনি আরও বলেন, 'ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসন ও চলাচল সহযোগিতার অংশ হিসেবে, উভয় দেশই অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধের পাশাপাশি ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসনের পথ সুগম করতে কাজ করছে। আমরা এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী।'
তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, 'ভারতে নির্বাসিতদের ফেরত পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জাতীয়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করবে ভারত সরকার।'
গত বছর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে ১ লাখ ৭১ হাজার অভিবাসীকে ১৯২টি দেশে নির্বাসিত করা হয়েছিল।