ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং কতটা ধনী?
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/11/liyaan_oyenphen.jpg)
মাত্র দুই বছর আগে পার্ট-টাইম প্রকল্প হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও, ডিপসিকের সাফল্য এখন তার প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেংকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের একজন করে তুলতে পারে—অথবা তিনি শুধুই আরেকজন বিলিয়নিয়ার হয়ে থাকতে পারেন।
সাতজন স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞের মতে, ডিপসিকের মূল্য ১ বিলিয়ন থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে। গড় হিসেবে, প্রতিষ্ঠানটির মূল্য ২ বিলিয়ন থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে থাকতে পারে। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্স অনুযায়ী, এই মূল্যায়ন লিয়াংকে তার ৮৪ শতাংশ শেয়ারসহ এশিয়ার শীর্ষ প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের কাতারে নিয়ে যেতে পারে।
গ্লাসউইং ভেঞ্চার্সের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা অংশীদার রুদিনা সেসেরি বলেন, 'এমনকি রক্ষণশীল হিসাব করলেও, কোম্পানিটি মাত্র কয়েক মিলিয়ন ডলারের বর্তমান রাজস্বের ভিত্তিতেই বিলিয়ন ডলারের মূল্যায়ন পেতে পারে— ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির কথা তো ধরাই হয়নি।'
বোস্টনভিত্তিক এই ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা সেসেরি অ্যানথ্রোপিক ও ওপেনএআই-এর মতো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ডিপসিকের মূল্য অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার বলে মনে করেন।
অন্যদিকে, কানাডার ওয়াটারলু-ভিত্তিক টেলিকম কোম্পানি 'সুয়েট ফ্রি টেলিকম'-এর প্রতিষ্ঠাতা চাণক্য রামদেবের মূল্যায়ন আরও উচ্চাভিলাষী। তিনি মনে করেন, ডিপসিকের মূল্য ওপেনএআই-এর ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অন্তত অর্ধেক হতে পারে। যদিও এটি বেশ ব্যতিক্রমী একটি অনুমান, তবু এই হিসাব অনুযায়ী লিয়াংয়ের শেয়ারের মূল্য দাঁড়াবে ১২৬ বিলিয়ন ডলার, যা এনভিডিয়া কর্পোরেশনের প্রধান জেনসেন হুয়াংয়ের সম্পদের চেয়েও বেশি।
এআই শিল্পে নতুন শক্তি
ওপেনএআই ছাড়াও, অ্যামাজনের সমর্থনপুষ্ট অ্যানথ্রোপিকের বর্তমান মূল্য ৬০ বিলিয়ন ডলার, আর ফরাসি স্টার্টআপ মিস্ট্রাল এআই-এর মূল্য ৬ বিলিয়ন ডলার। অন্যরা ডিপসিকের তুলনা করছে চীনের ঝিপু এআই-এর সঙ্গে, যার মূল্য সর্বশেষ তহবিল সংগ্রহের সময় ৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক ব্লকচেইন স্টার্টআপ প্যাস্টেল নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেফরি ইমানুয়েল বলেন, 'ডিপসিকের সঠিক মূল্যায়ন করা কঠিন, কারণ এটি একটি গোপনীয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যা মূলত প্রতিষ্ঠাতার ট্রেডিং লাভ থেকে অভ্যন্তরীণভাবে অর্থায়ন পায়। ফলে এটি কীভাবে মূলধন সংগ্রহ করেছে, এর প্রকৃত রাজস্ব ও মুনাফা কেমন— সে সম্পর্কে খুবই কম তথ্য জানা যায়।'
ডিপসিকের প্রতিনিধিরা কোম্পানির মূল্য সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রায় রাতারাতি, ডিপসিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির খরচ, প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং চীনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে থাকার ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এর প্রভাব এতটাই বড় ছিল যে, গত মাসে এনভিডিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শেয়ারমূল্য পতন ঘটে। একই সঙ্গে, এটি চীনের শীর্ষস্থানীয় ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
লিয়াংয়ের উত্থান
এই সাফল্য লিয়াং ওয়েনফেংয়ের অভূতপূর্ব উত্থানের প্রতিফলন। এক সাবেক ইন্টার্ন তাকে 'নিঃসঙ্গ প্রযুক্তিপ্রেমী' বলে বর্ণনা করেছিলেন। ডিপসিক প্রতিষ্ঠার আগে তিনি একটি কোয়ান্ট হেজ ফান্ড গড়ে তোলেন, যা একসময় ১২ বিলিয়ন ডলার পরিচালনা করেছিল।
লিয়াং ১৯৮৫ সালে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশের ঝানজিয়াং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি হাংঝুর বিখ্যাত ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিক প্রকৌশল অধ্যয়ন করেন এবং সেখান থেকেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০২৩ সালে লিয়াং ডিপসিক প্রতিষ্ঠা করেন, যা তার হেজ ফান্ড 'ঝেজিয়াং হাই-ফ্লাইয়ার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট'-এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিভাগের একটি শাখা হিসেবে শুরু হয়। এই হেজ ফান্ডটি তিনি ও ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই প্রকৌশলী মিলে প্রতিষ্ঠা করেন। তারা ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় শিক্ষার্থী থাকতেই ট্রেডিং শুরু করেন।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্স অনুযায়ী, ডিপসিকের বাইরেও লিয়াংয়ের হাই-ফ্লাইয়ার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টে ৫১ শতাংশ মালিকানা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তুলনামূলক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে, এর মূল্য দাঁড়াতে পারে ৭১ মিলিয়ন ডলারে।
ডিপসিকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ইতোমধ্যেই শত শত কোম্পানি সীমাবদ্ধ করেছে। নিরাপত্তার কারণে অস্ট্রেলিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের সরকার সরকারি ডিভাইসে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
তবে চীনে ডিপসিকের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে বলে মনে করেন প্যাস্টেল নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ইমানুয়েল। তিনি বলেন, 'চীনের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ডিপসিকে বিপুল পরিমাণ কৌশলগত বিনিয়োগ করতে পারে, যদিও তা আপাতদৃষ্টিতে লাভজনক মনে নাও হতে পারে। এটি অনেকটা মাইক্রোসফটের ওপেনএআই-তে বিনিয়োগের মতো, যা শুরুতে অত্যধিক উচ্চমূল্য বলে মনে হলেও পরে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়।'