দ্য হজ ট্রেইল: কেমন ছিল প্রাচীন হজ যাত্রা, বিপদসংকুল মরুপথ? ঘরে বসেই সেই সফরে শামিল হওয়া যায় যে গেমে
চলতি বছর ৭ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে হজ। হজের প্রথম অংশ খুব সহজ। জেদ্দার বিমানে চেপে বসে বসতে হবে। তারপর বিমান অবতরণ করবে একটি বিশেষ টার্মিনালে।
এরপর হজযাত্রীদের মক্কার শেষ ৮৫ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয় বাস বা ট্যাক্সিতে। কিন্তু কয়েক দশক আগপর্যন্তও এই সফর ছিল ভীষণ কঠিন, ব্যয়বহুল ও বিপদসংকুল। একেকটা সফরে প্রায়ই কয়েক মাস লেগে যেত। সবাই এই সফর শেষ করতে পারত না।
বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই একশো বছর আগেও দামেস্ক হজযাত্রীরা পবিত্র মক্কায় সফর করতেন উটের কাফেলায় করে। ওই সময় দামেস্ক থেকে মক্কায় পৌঁছতে অন্তত ৪০ দিন লাগত। সফরকালে শুষ্ক মরু আর পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মারা যেতেন বহু হজযাত্রী।
তবে সেসব কষ্টের দিন এখন অতীত। এখন বিমানে চেপে বসলে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টায়ই পৌঁছে যাওয়া যায় মক্কায়।
তবে শৈশবের একটি কম্পিউটার গেমের কথা মনে পড়ায় সেই অতীতকে ফের জীবন্ত করে তোলার উপায় খুঁজছিলেন টাইলার কিন। কিন ইসলামের ইতিহাসের শিক্ষক, পড়ান সেন্ট্রাল কানেকটিকাট স্টেট ইউনিভার্সিটিতে।
যে গেমের কথা মনে করে কিনের অতীতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে হয়, সেটির নাম 'অরিগন ট্রেইল'। গেমটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালে।
অরিগন ট্রেল ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়কার সামরিক জীবনের সঙ্গে মার্কিন স্কুলশিক্ষার্থীদের একটি প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
গেমটির কাহিনি গড়ে উঠেছে একদল বসতি স্থাপনকারীদের ঘিরে। কাভার্ড ওয়াগনে করে মিসৌরি থেকে অরিগনে যাচ্ছিল দলটি। গেমারকে রসদ ও পানি খুঁজে বের করতে হয়, সওদা করতে হয়। মোদ্দা কথা, বেঁচে থাকতে হয়। এই সফরে অজস্র উপায়ে মানুষ মারা যেত।
সেই গেমটির কথা মাথায় রেখে নতুন একটি গেম তৈরি করেছেন টাইলার কিন। এক বন্ধুর সঙ্গে মিলে ১৭ শতকের অটোমান হজযাত্রীদের ভ্রমণ-বৃত্তান্ত ব্যবহার করে তিনি তৈরি করেছেন 'দ্য হজ ট্রেইল'।
এটি ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তর তথ্য সংবলিত ব্রাউজারভিত্তিক স্ট্র্যাটেজি গেম। গেমাররা অটোমান রাজকন্যা (সবচেয়ে সহজ) থেকে শুরু করে দরিদ্র বিধবা (সবচেয়ে কঠিন) পর্যন্ত পাঁচটি ভূমিকা থেকে যেকোনো একটি থেকে বেছে নিতে পারেন। ভ্রমণসঙ্গী, ভাড়াটে সৈন্য ও সাদা জিরফ্যালকনের (ছবিতে দেখানো হয়েছে) মতো প্রাণীরা সাহায্য করতে পারে।
অরিগন ট্রেইলের মতো দ্য হজ ট্রেইলেও অনেক রকমের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। দস্যুরা তীর্থযাত্রীদের খাদ্য, অর্থ ও মালামাল চুরি করে। পানি সবসময় পরিষ্কার থাকে না। আবার খারাপ ব্যবসার ফলে গেমারকে সর্বস্বান্তও হয়ে যেতে হতে পারে।
গেমটি কখনও কখনও একটু বেশিই কঠিন হয়ে গেলেও টাইলার কিনের স্নাতকের শিক্ষার্থীরা অল্পদিনের মধ্যেই দ্য হজ ট্রেইলে মশগুল হয়ে গেছে।
কঠিন হওয়া সত্ত্বেও এ গেম থেকে শিক্ষার্থীরা মজায় মজায় শিখতে পারছে। শত পৃষ্ঠার বই পড়ে ইতিহাস মুখস্থ করার চেয়ে গেমের মাধ্যমে ওই সময়ের ইতিহাস জানাটা তাদের কাছে অনেক বেশি আনন্দদায়ক ও সহজ।
দূর মালয়েশিয়া ও আনাতোলিয়ার শিক্ষকরাও অনলাইনে দ্য হজ ট্রেইল খেলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। নিজেদের ক্লাসেও শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য গেমটি ব্যবহার করছেন তারা।
টাইলার কিনের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার উদ্দেশ্যে বানানো বিনামূল্যের এই গেমটিকে আরও ছড়িয়ে দেওয়া।
গেমটির মূল আবেদন তার অভিনব গ্রাফিক্সে নয়, বরঞ্চ বহুস্তরীয় টেক্সচারে। প্রত্যেক স্টপেজে গেমাররা এলাকার মাজারগুলো দেখার সুযোগ পায়। কফিহাউসে বসে আড্ডা দিতে পারে, সামনের রাস্তা সম্পর্কে দরকারি তথ্য জেনে নিতে পারে, কিংবা পণ্যের সওদা করতে স্থানীয় বাজারে যেতে পারে। প্রায়ই সময়মতো সওদা করা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। আবার আছে নানা বিপদ। এমনকি রসদ নিয়েও পড়তে হয় ঝামেলায়।
চলতি বছর সৌদি আরব মাত্র ১০ লাখ মানুষকে প্রকৃত হজ করার সুযোগ দিচ্ছে। মহামারির আগে ২৫ লাখ মানুষ হজ করার সুযোগ পেত। আর যারা অমুসলিম কিন্তু হজ ও ইসলামি দুনিয়া সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য হজের দরজা চিরকালই বন্ধ থাকবে।
তবে দ্য হজ ট্রেইল আপনাকে ঘরে বসেই বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যাত্রার কিছু মহিমা ও বিপদের অভিজ্ঞতার স্বাদ পাইয়ে দেবে।
- সূত্র: দি ইকোনমিস্ট