ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনা: সেই অলৌকিক শিশুর দায়িত্ব নিল ছোটমনি নিবাস
ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাক চাপায় মৃত মায়ের পেট থেকে সড়কে জন্ম নেওয়া সেই নবজাতকের দায়িত্ব নিয়েছে রাজধানীর আজিমপুর ছোটমনি নিবাস।
আজিমপুর ছোটমনি নিবাসে পাঠানো হয়েছে। শিশুটিকে লালন পালনে পরিবারের সামর্থ্য না থাকায় জন্মের ১৪ দিন পর চিকিৎসা শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মমেক) থেকে শুক্রবার সকালে শিশুটিকে হস্তান্তর করে চিকিৎসকরা।
তার দাদার সামর্থ্য হলে শিশুটি সুস্থ হওয়ার এক বছরের মধ্যে পরিবার নিতে পারবে। অন্যথায়, ৬ বছর পর্যন্ত শিশুটি সেখানে থাকতে পারবে। সেখানে গিয়ে তার দাদা শিশুটিকে দেখে আসতে পারবেন। প্রয়োজন হলে আঠারো বছর পর্যন্ত সরকারের তত্ত্বাবধানে শিশুটি থাকতে পারবে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু আব্দুল্লাহ মো.ওয়ালিউল্লাহ।
শুরু থেকেই সবার সহযোগিতা পেয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে শিশুটির দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু বলেন, আমি সবার প্রতি চিরকতৃজ্ঞ, "বিশেষ করে সাংবাদিক, প্রশাসন এবং চিকিৎসকরা আমাদের পাশে না দাঁড়ালে এতো মূল্যায়িত কোনদিন হতে পারতাম না। আমি নিজেও প্রতিবন্ধী। আমার আরো দুইটা নাতি রয়েছে সকলে একটু খোঁজ খবর রাখলে আশা করি ভালো থাকব।"
গত ১৬ জুলাই ত্রিশালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মা, বাবা এবং বোন মারা গেলেও অলৌকিকভাবে ভূমিষ্ঠ হয় এই নবজাতক।
চলতি মাসের ১৬ জুলাই আলট্রাসোনগ্রাম করতে এসে ট্রাকের চাকায় পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ত্রিশাল উপজেলার রাইমনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৪০), তার অস্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না আক্তার (৩০), মেয়ে সানজিদা আক্তারকে (৬)।
এ সময় ট্রাক চাপায় মৃত রত্নার গর্ভ থেকে কন্যাশিশুর জন্ম হয়। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে বাংলাদেশ কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে শহরের লাবীব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিশুটির শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় ১৮ জুলাই রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনআইসিউ বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে শিশুটির চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়।
শিশুটির জন্ডিস, শ্বাসকষ্ট এবং রক্তস্বল্পতা ভালো হওয়ায় ছুটি দেয় চিকিৎসকরা। তবে ডান হাত এবং পায়ের ভাঙা ভালো হতে আরো দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা.নজরুল ইসলাম বলেন, এমন একটা শিশুকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া গর্বের বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো শিশুটিকে সুস্থ করে আমরা বিদায় দিতে পারছি। আজ শিশুটি চলে যাওয়ায় একটুখানি খারাপ লাগছে। যেখানে থাকুক ভালো থাকুক সেই দোয়া করি।
শিশুটি গত ২৬ জুলাই সুস্থ হয়ে ওঠলে তার লালন পালনের দায়িত্ব নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। শিশুটিকে লালন পালনে দাদার সামর্থ্য নেই, জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের এমন প্রতিবেদনে ঢাকার আজিমপুর ছোটমনি নিবাসে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু আব্দুল্লাহ মো.ওয়ালিউল্লাহ।
সমস্ত প্রক্রিয়া শেষে হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।