রাবি শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু, স্বামী গ্রেপ্তার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী রিক্তা আক্তারের (২১) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (২৯ জুলাই) দিবাগত রাতে রিক্তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তার স্বামী আব্দুল্লাহ ইশতিয়াক রাব্বি। হাসপাতালে তিনি জানান, রিক্তা গলায় ফাঁস দিয়েছেন। পরে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রিক্তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে রিক্তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ মৃতের পরিবারের সদ্যদের। পরিবারের পক্ষ থেকে রাব্বির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শনিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে নিহতের বাবা লিয়াকত আলী জোয়ার্দ্দার বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ ইশতিয়াক রাব্বিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে বিকেলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
মৃতের সহপাঠী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ধরমপুর পূর্বপাড়ার একটি বাসায় স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন রিক্তা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার জোতপাড়া গ্রামে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, 'এ ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি মেডিকেলে গিয়েছি। একজন শিক্ষার্থীর অকালমৃত্যু কখনোই কাম্য নয়। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি'।
সহপাঠীরা জানান, দুই বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ইশতিয়াক রাব্বির সঙ্গে রিক্তার বিয়ে হয়। কলেজজীবন থেকেই তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বছরখানেক ধরে তারা ধরমপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।
রিক্তার স্বামী আব্দুল্লাহ ইশতিয়াক রাব্বির বন্ধু ও ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমিন ইসলাম বলেন, 'কয়েক দিন যাবৎ ওদের মধ্যে একটু ঝামেলা চলছিল। শুক্রবার বিকেলে রাব্বি আমাদের বলে তার বউ নাকি সামাজিক মাধ্যমে ফেইক আইডি খুলে অন্য একটা ছেলের সাথে কথা বলে। এনিয়ে দুপুরে ওদের দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটিও হয়।'
গ্রেপ্তারের আগে আব্দুল্লাহ ইশতিয়াক রাব্বি গণমাধ্যমকে বলেন, 'রিক্তা আত্মহত্যা করার জন্য গলায় ফাঁস দেয়। আমি ও আমার বন্ধু মিলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন'।
তবে বিষয়টি সন্দেহজনক বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে নিহতের যেসব লক্ষণ আমরা দেখেছি তাতে এটিকে আত্মহত্যা মনে হয়নি। তবে এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে।
নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, 'পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মৃতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা- তা স্পষ্ট হবে'।