বাইডেনকে যুদ্ধাপরাধী বলার ব্যাখ্যা দিলেন পিংক ফ্লয়েডের রজার ওয়াটার্স
আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে যুদ্ধাপরাধী বলেছেন বিখ্যাত গায়ক ও পিংক ফ্লয়েডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রজার ওয়াটার্স। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন'কে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই সম্বোধনের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
গত শনিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে সিএনএন। সেখানে রজার ওয়াটার্স বলেছেন, ইউক্রেনে সংঘাত উস্কে দিয়ে 'অনেক বড় অপরাধ করেছেন' জো বাইডেন– তাই আমি তাকে যুদ্ধাপরাধী ভাবি।
সিএনএন এর হয়ে সাক্ষাৎকারটি নেন মাইকেল স্মেরকোনিশ। জীবন্ত এই রক কিংবদন্তি সেখানে তার নিজস্ব শান্তিকামী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি খোলামেলাভাবেই তুলে ধরেন।
সম্প্রতি 'দিস ইজ নট এ ড্রিল' বা 'এটি নিছক (সামরিক) মহড়া নয়' নামে একটি কনসার্ট ট্যুর করেছেন রজার্স। কনসার্টে প্রদর্শিত হয়েছিল অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি, যার মধ্যে জো বাইডেনের ছবিও ছিল। প্রেসিডেন্টের ছবিতে ক্যাপশন ছিল– এই যুদ্ধাপরাধী কেবল তার (শান্তিবিনাশী) কাজ শুরু করেছে।
স্মেরকোনিশকে এসবের ব্যাখ্যা দিয়ে রজার ওয়াটার্স বলেন, 'জো ইউক্রেনে যুদ্ধের আগুন উস্কে দিচ্ছেন। এটি অনেক বড় অপরাধ। আমেরিকা কেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে (রাশিয়ার সাথে) শান্তি আলোচনা শুরুর জন্য চাপ দিচ্ছে না? তার বদলে এই জঘন্য, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধকে জিইয়ে রেখে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে কী লাভ হচ্ছে?'
আলোচনার এক পর্যায়ে স্মেরকোনিশ মন্তব্য করেন রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়েছে। এর প্রতিবাদ করে রজার ওয়াটার্স বললেন, এই সংঘাতকে অবশ্যই ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে হবে।
'আপনি ইতিহাসের দিকে তাকান…এই যুদ্ধ আসলে রাশিয়ার সীমান্তের দিকে ন্যাটো জোট বিস্তারের প্রতিক্রিয়া। অথচ ন্যাটো বলেছিল, তারা রাশিয়াকে কখনো ঘেরাও করবে না'।
একথার মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের সময়ের দিকে নির্দেশ করেন রজার্স। ওই সময়ে পশ্চিমাদের সাথে আলোচনা করে পূর্ব ইউরোপ থেকে সেনা প্রত্যাহার করে মস্কো। বিনিময়ে ন্যাটো রাশিয়ার নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে না ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচভকে।
২০০৮ সালে ইউক্রেন ও জর্জিয়াকে ন্যাটোর পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বুখারেস্টে ন্যাটো সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ইউক্রেন নিয়ে সংঘাত আসলে ওই বছর থেকেই শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ওয়াটার্স।
এই সাক্ষাৎকারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণ নিয়ে পিঙ্ক ফ্লয়েডের বিশ্বখ্যাত গায়ক ও মাইকেল স্মেরকোনিশের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। তার মতে, আমেরিকা নিজেকে বিশ্বের উদ্ধারকর্তা দাবি করতে পারে না; কারণ ১৯৪১ সালে জাপান পার্ল হারবারে হামলা করার আগে দেশটি যুদ্ধে যোগ দেয়নি। কিন্তু, সিএনএন সাংবাদিক স্মেরকোনিশ দাবি করেন, ওই হামলা নাহলেও আমেরিকা অবশ্যই যুদ্ধে জড়াতো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির জয়ের জন্য সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকেই সিংহভাগ কৃতিত্ব দেন রজার। তিনি বলেন, 'আমেরিকা যে সময় যুদ্ধে নামে- তখন মিত্রশক্তির জয় প্রায় সুনিশ্চিত। আমাদের সবাইকে নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচাতে ২ কোটি ৩০ লাখ রাশিয়ান জীবন উৎসর্গ করেছে'।
তখন স্মেরকোনিশ বলেন, তাহলে তো এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে রাশিয়ার শিক্ষা নেওয়ার কথা; তাদের ইউক্রেনে হামলা করা একদমই উচিত নয়- আপনি কি এই যুক্তি মানেন?
রজার ওয়াটার্স পাল্টা প্রশ্ন করেন, 'চীন যদি মেক্সিকো ও কানাডায় (আমেরিকার দুই বড় প্রতিবেশী) পরমাণু অস্ত্র-সজ্জিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতো–তাহলে আমেরিকা কী করতো?'
পরে তাইওয়ান ইস্যুতেও তাদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়।
- সূত্র: আরটি