বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে নেপালে প্রতিষ্ঠান চালুর পরিকল্পনা করছে পিটিসি ইন্ডিয়া
বাংলাদেশ ও ভারতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সমৃদ্ধ প্রতিবেশী দেশ নেপালে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরিকল্পনা করছে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড।
তবে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'পিটিসি ইন্ডিয়ার নেপালে একটি নতুন কোম্পানি স্থাপন করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তবে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আনা নিয়ে আমরা নেপালের সঙ্গে আলোচনা করছি'।
তিনি বলেন, 'জলবিদ্যুৎ সস্তা এবং এর মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে বিধায় এ ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'
তবে এক্ষেত্রে ভারত হয়ে বিদ্যুৎ আনার জটিলতা রয়েছে যেটা ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে বলে তিনি জানান।
পিটিসি ইন্ডিয়ার সিএমডি রাজীব কে মিশরা ভারতীয় গণমাধ্যম মিন্ট-কে বলেন, 'পিটিসি ইন্ডিয়া বোর্ড নেপালে একটি নতুন ট্রেডিং কোম্পানি শুরু করার জন্য আমাদের অনুমোদন দিয়েছে। ভারতের ট্রেডিং কোম্পানি হিসেবে আমরা ভূটান, বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে দীর্ঘদিন ব্যবসা করেছি, তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছি। প্রথমবারের মতো আমরা নেপালে প্রতিষ্ঠান চালু করার চেষ্টা করছি।'
তিনি আরও বলেন, নেপালের নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে আগামী ৩-৫ বছরে ভারতে প্রায় ৫,০০০ মেগাওয়াট উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
'চলতি বছর প্রথমবারের মতো নেপাল গত তিন-চার মাসে ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করেছে। সামনে এটি আরও বাড়বে। নেপালের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ যদি ভারত ও বাংলাদেশে আনতে হয়, সেজন্য একজন সমন্বয়কারী থাকতে হবে যার পকেট ভারী আবার ৫,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনাও করতে পারবে,' বলেন তিনি।
গত ২৬ আগস্ট কাঠমান্ডু পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, নেপাল এবং বাংলাদেশ ভেড়ামারায় অবস্থিত উচ্চ ভোল্টেজের ডিরেক্ট কারেন্ট পাওয়ার সিস্টেম ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০১৩ সালে ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে বহরমপুর-ভেড়ামারা ক্রস-বর্ডার পাওয়ার ট্রান্সমিশন লিঙ্ক উদ্বোধন করে যা প্রাথমিকভাবে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিনিময় উপযোগী।
গত মাসে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতার জন্য গঠিত সচিব-স্তরের জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি (জেএসসি)-তে গৃহীত সমঝোতা অনুসারে, নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম-কে বহরমপুর-ভেড়ামারা ক্রস-বর্ডার ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে ত্রিপক্ষীয় জ্বালানি ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি করার অনুরোধ জানাবে।
নেপালের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে চতুর্থ জেএসসি বৈঠকের সময় নেপালের কর্নালি নদীর ৯০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি সম্পন্ন করার আগ্রহ প্রকাশ করে, যা নিয়ে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারতের জিএমআর গ্রুপ কাজ করবে।
২০১৯ সালে জিএমআর এবং বাংলাদেশ একটি জ্বালানি ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষর করে এবং স্বাক্ষরিত পিপিএ পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশে মন্ত্রিসভায় জমা দেওয়া হয়।
এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নেপাল এবং বাংলাদেশ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে একটি ডেডিকেটেড ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি করতে সম্মত হয়েছিল। এছাড়া ঢাকা নেপালে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উন্নয়নেও আগ্রহ প্রকাশ করে।
বর্তমানে বাংলাদেশ বহরমপুর-ভেড়ামারা এবং ত্রিপুরা-কুমিল্লা ক্রস-বর্ডার গ্রিড লাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ১,১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে।
তবে দেশে আরও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আরও উচ্চ ক্রস-বর্ডার ট্রান্সমিশন লাইনের প্রয়োজন যার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে জ্বালানি আমদানি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে যাতে ৬০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি মিশ্র বিদ্যুৎও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে ৫২ শতাংশ, লিকুইড ফুয়েল থেকে ৩২ শতাংশ এবং কয়লা থেকে ৮ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বাকি ৮ শতাংশ বিদ্যৎ আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।