বাংলাসহ ১০ ভাষার রেডিও সম্প্রচার বন্ধ: খরচ বাঁচাতে ৩৮২ পদ কমাবে বিবিসি
বিবিসি বাংলাসহ ১০টি ভাষার রেডিও সম্প্রচার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিবিসি। নিজেদের আন্তর্জাতিক পরিষেবার জন্য বছরে ২৮.৫ মিলিয়ন পাউন্ড সঞ্চয়ের চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। সে কারণেই ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ৩৮২টি পদ রহিত করার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় গণমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি)।
তবে কোনো ভাষার পরিষেবা বন্ধ হচ্ছে না, বরং অনলাইন পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হবে কয়েকটি।
বাংলার পাশাপাশি যেসব রেডিও পরিষেবা বন্ধ হতে চলেছে, সেগুলো হলো- আরবি, ফারসি, চীনা, কিরগিজ, উজবেক, ইন্দোনেশীয়, তামিল ও উর্দু। বিবিসির যেসব ভাষা পরিষেবা অনলাইনভিত্তিক হয়ে যাবে সেগুলো হলো- চীনা, গুজরাটি, ইগবো, তামিল, ইন্দোনেশিয়ান, উর্দু এবং ইওরুবা।
তাছাড়া, সিবিবিসি এবং বিবিসি ফোরকেও অনলাইন পরিষেবায় যুক্ত করার কথা রয়েছে। এর ফলে বছরে ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড সঞ্চয় হতে যাচ্ছে বিবিসির।
১৯৪১ সালের ১১ই অক্টোবর বাংলায় ১৫ মিনিটের সাপ্তাহিক সম্প্রচার শুরুর মাধ্যমে বিবিসি বাংলার রেডিও কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে সংবাদ সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৬৫ সালে।
বিবিসি জানিয়েছে, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে এই কঠিন সিদ্ধান্তে যেতে বাধ্য হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে কোনো ভাষার পরিষেবাই পুরোপুরি বন্ধ হবে না এবং রাশিয়া, ইউক্রেন, আফগানিস্তানের মতো দেশের মানুষও যেন বিবিসির সংবাদ সেবা পায়, সেজন্য বিপদের সময়েও ওয়ার্ল্ড সার্ভিস অব্যহত থাকবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের পরিচালক লিলিয়ান ল্যান্ডর বলেন, "বিশ্বব্যাপী বিবিসির ভূমিকা কখনোই কম ছিল না। বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ নির্ভরযোগ্য ও নিরপেক্ষ সংবাদের জন্য বিবিসির ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে যেসব দেশে সংবাদ কম পৌছায়। তবে আমরা আমাদের পাঠক-দর্শকদের সেরা সাংবাদিকতা উপহার দিয়েই যাবো।"
তিনি জানান, ডিজিটাল সেবার পরিধি বৃদ্ধি করতে তারা 'বাধ্য হয়েছেন।'
এদিকে, বিবিসির কিছু ভাষার পরিষেবা কার্যালয় লন্ডন থেকে সরিয়ে সংশ্লিষ্ট শ্রোতাদের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হবে। যেমন—থাই পরিষেবা ব্যাংককে, কোরীয় পরিষেবা সিউলে, বাংলা পরিষেবা ঢাকায় এবং ফোকাস অন আফ্রিকা টিভি বুলেটিন পরিষেবা নাইরোবিতে স্থানান্তর করা হবে।
আবার রেডিও সম্প্রচারের পরিবর্তে আরবি ও ফারসি ভাষায় টিভি সম্প্রচার চালু রাখবে বিবিসি। আরবি ও ফারসি ভাষার ডিজিটাল সামর্থ্য বাড়াতেও বিনিয়োগ করা হবে।
বিবিসির এসব নতুন পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে এখন প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও ট্রেড ইউনিয়নের সাথে আলোচনা-পরামর্শ করা হবে। সম্প্রচার ইউনিয়ন বেকটু'র প্রধান, ফিলিপা চাইল্ডস বলেছেন, বিবিসির প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো দেখে তারা হতাশ।
ফিলিপা আরও বলেন, "আমরা স্বীকার করছি যে পরিবর্তিত মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতেই হবে বিবিসিকে। কিন্তু আবারও সরকারে দুর্বলভাবে মূল্যায়িত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লাইসেন্স ফি আটকে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে তহবিল নিয়ে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ এই প্রস্তাবগুলোকে অনিবার্য করে তুলেছে।
সূত্র: বিবিসি