আর নেই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, ভালো পর্যটন মৌসুমের আশায় ট্যুর অপারেটররা
করোনা মহামারির সময় দেওয়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে দুই বছর পর। এতদিন পর বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশ ভ্রমণ শুরু করায় চলতি শীতের মৌসুমে ভালো ব্যবসার আশা করছে অভ্যন্তরীণ ট্যুর অপারেটররা।
ট্রাভেল অপারেটররা জানান, এই পর্যটকদের বেশিরভাগই আসছেন জাপান, ইতালি, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ার অন্যান্য কিছু দেশ থেকে।
করোনার কারণে দুই বছর পর্যটন বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর বিদেশি পর্যটকদের ওপর থেকে সব ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বাংলাদেশ। এতে করে শীতকালীন পর্যটনের বুকিং দিয়ে লাভবান হবেন ট্যুর অপারেটররাও।
তবে অপারেটররা বলছেন, ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা যদি কয়েক মাস আগে তুলে নেওয়া হতো, তাহলে বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে আরো বেশি সাড়া পাওয়া যেত।
যদিও বিমান ভাড়াসহ এ দুই বছরে অন্যান্য ভ্রমণ খরচ বেড়েছে, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে প্যাকেজের খরচ বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছেন অপারেটররা।
বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অভ্যন্তরীণ ট্যুর অপারেটিং এজেন্সি বেঙ্গল ট্যুরস ইতোমধ্যে ৬০০ জনেরও বেশি বিদেশি পর্যটকের বুকিং নিশ্চিত করেছে। এ বছরের অক্টোবর থেকে সামনের বছরের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভ্রমণ করবেন তারা।
বেঙ্গল ট্যুরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বুকিং নেওয়াদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ পর্যটক জাপানি। বাকিরা বেশিরভাগই আসবেন ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে। বিভিন্ন গ্রুপ ট্যুর প্যাকেজ নিয়েছেন তারা।"
বিমানের খরচ বাদে একটি গ্রুপ প্যাকেজের অধীনে একজন পর্যটকের প্রতিদিনের খরচ পড়ে ৭৫ থেকে ৮৫ ডলার।
বেঙ্গল ট্যুর ২০২৩-২৪ মৌসুম থেকে খরচ বাড়াবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা এই বছর আমাদের লাভের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছি যাতে অতিথিরা দীর্ঘ বিরতির পরে বাংলাদেশে নির্দ্বিধায় আসেন।"
পর্যটকরা সাধারণত ৭ থেকে ১৫ দিনের প্যাকেজ নেয় বলে জানান মাসুদ।
মাসুদের পাশাপাশি রিভারেইন ট্যুরের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুল ইসলাম বুলু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের সংস্থার মাধ্যমে এই বছরের নভেম্বরে সাতজন ব্রিটিশ পর্যটক আসবেন। এছাড়া নয়জন ইতালীয় পর্যটকের একটি দল আগামী বছরের মার্চে বাংলাদেশে আসবে।"
তিনি আরো বলেন, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলতে এত সময় লেগেছে বিধায় অনেক পর্যটকই ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশগুলোকে বেছে নিয়েছেন।
বিস্তৃত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল পর্যটন ব্যবস্থা, বিমানবন্দরের অবকাঠামো, ভিসার জটিলতা, সামাজিক বিধিনিষেধ এবং আরামদায়ক পরিবহন সুবিধার অভাবের কারণে বাংলাদেশ এখনও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে ওঠেনি।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) কাছে ২০১৯ সালের পর দেশে আসা পর্যটকের কোনো তথ্য নেই।
বিটিবি অনুসারে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে তিন লাখ বিদেশি পর্যটক আসে- যা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ।
এর আগে ২০১৮ সালে ২ লাখ ৪৮ হাজার, ২০১৭ সালে ২ লাখ ২ হাজার। ২০১৬ সালে ১ লাখ ৬৯ হাজার এবং ২০১৫ সালে ১ লাখ ১৮ হাজার বিদেশি পর্যটক আসে দেশে।
২০১৯ সালে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ২৪; পর্যটন বোর্ডের মতে, যা ঐ বছর মোট আগত পর্যটকের ৮৯%।
অভ্যন্তরীণ ট্যুর অপারেটর এবং প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক রহমান টিবিএসকে বলেন, "কোভিডপূর্ব সময় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে মাত্র ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার বিদেশি বাংলাদেশে আসেন।"
তৌফিকের আরেক পরিচয় তিনি জার্নি প্লাসের প্রধান নির্বাহী। তিনি বলেন, "বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আটজন ভারতীয় বাংলাদেশে রয়েছেন। এছাড়া ২৭ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৯ জনের একটি দল আসছে। তাদের মধ্যে ২৭ জন ব্রিটিশ এবং দুজন অস্ট্রেলিয়ান।"
"আর্জেন্টিনা এবং ফিনল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে; কেউ কেউ ইতোমধ্যে ভ্রমণ নিশ্চিতও করেছে," যোগ করেন তিনি।
ট্যুর অপারেটরদের মতে, বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা প্রধানত দেশের তিনটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট পরিদর্শন করেন- সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহার। এছাড়াও শ্রীমঙ্গল এবং রাজধানী ঢাকায় যান তারা।
কিছু পর্যটক পার্বত্য চট্টগ্রাম, বগুড়া মহাস্থানগড়ের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং কুষ্টিয়ার লালন শাহের মাজারও ভ্রমণ করেন।
ঢাকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে পর্যটকরা প্রধানত সদরঘাট, পুরান ঢাকার ভাসমান দোকান, শাঁখারি বাজার, লালবাগ কেল্লা, তারা মসজিদ, সংসদ ভবন, শহীদ মিনার এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর দেখতে চান।
গত দুইটি বছর কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পর্যটকরা খুব কমই এখানে এসেছেন। যারা এসেছেন তারাও হয় ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে কাজ করেন, প্রবাসী বাংলাদেশি (নন-রেসিডেন্ট) অথবা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আসেন।
বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড কর্তৃক সংগৃহীত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত বছর অভ্যন্তরীণ দর্শনার্থীদের কাছ থেকে আয়ের পরিমাণ ছিল ২,২৭৯ কোটি টাকার সামান্য বেশি; ২০২০ সালে এই পরিমাণ ছিল ১,১৯৬ কোটি টাকা।