হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে
চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ১২ শয্যা বরাদ্দ ছিল। রোগী বেড়ে যাওয়া সেপ্টেম্বর মাসে ৫০ শয্যার ডেঙ্গু সেল গঠন করা হয়। তারপরও রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালটি। বর্তমানে শিশু হাসপাতালে ৫০ বেডের বিপরীতে ৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে।
শুধু শিশু হাসপাতাল নয়, রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত অন্যান্য হাসপাতালগুলোও। ডেঙ্গু রোগীদের শয্যা সংকটের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যসচিবও। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিরোধ ও ডেঙ্গুর হটস্পটে অভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম টিবিএসকে বলেন, ডেঙ্গু সেলের বাইরেও আমাদের রোগী ভর্তি করতে হচ্ছে। গত মাসে আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ২৫৩ জন ভর্তি হলেও অক্টোবরের ১৭ দিনে ২০০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে রোগীর চাপ আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক টিবিএসকে বলেন, 'দুই সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী দ্বিগুণ বেড়েছে। বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে ১৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে, এর মধ্যে ৩০ জন শিশু। এভাবে ডেঙ্গু রোগী বাড়াটা অ্যালার্মিং। আমরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি না, কিন্তু ডেঙ্গুর কারণে অন্যান্য সাধারণ পরিষেবাগুলো ব্যাহত হচ্ছে, অন্যান্য রোগী সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় আমাদের হাসপাতাল প্রস্তুত আছে। রোগীর চাপ বেড়ে গেলে আলাদা ইউনিট করা হবে।'
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ-উন-নবী টিবিএসকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে দিনে গড়ে ৪০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতালে ১২৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। আমাদের হাসপাতালে শিশু ডেঙ্গু রোগীর জন্য ১৫ শয্যায় ১৭ শিশু রোগী ভর্তি আছে। রোগী বাড়লে মশারি দিতে সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালে আসা প্রায় ৭০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী কেরানিগঞ্জ এলাকার ও বাকিরা কামরাঙ্গিরচরের। ওই এলাকাগুলোতে মশা নিধনে গুরুত্ব দিলে রোগীর চাপ কমবে।
সারাদেশে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে ৩,০০৪ জন রোগী।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক এক সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ডা. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ডেঙ্গু রোগী আসছে কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির জায়গা নেই.
ডেঙ্গু প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে। চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বিশেষ করে রাজধানীর কোনো সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য শয্যা বরাদ্দ নেই। তারপরও প্রতিদিন অনেক রোগী আসছেন বলে জানান স্বাস্থ্য সচিব।
তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে কোনো শয্যা খালি নেই।
'তবে আমরা রোগীদের ফেরত পাঠাতে পারি না। এর জন্য হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু ইউনিট চালু করতে হবে। পর্যাপ্ত তরল সরবরাহ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশারি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। রোগী যদি মশারি না আনেন, তবে হাসপাতালকে এর ব্যবস্থা করতে হবে,' বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য সচিব বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিটি করপোরেশনগুলোকে দ্রুত হটস্পটে অভিযানের ব্যবস্থা করতে বলেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মিরপুরসহ ডেঙ্গুর অন্যতম হটস্পট এলাকায় মিরপুর লালকুঠি ও মহানগর হাসপাতালসহ কোভিডের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। .
ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৫৭ জন। এই সময় ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২ জন। এর আগের দিন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫ জন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৯৬ জন। এর মধ্যে চলতি মাসের ১৭ দিনে মারা গেছেন ৪১ জন।
চলতি বছর ডেঙ্গুর ১, ৩ ও ৪ সেরোটাইপে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। একাধিক সেরোটাইপে সংক্রমণ ঘটায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। এ বছর ডেঙ্গুতে রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে এবং মৃত্যু বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকি'সকেরা।
এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতদের ৬৪ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে মা্রা গেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং ডিজিএইচএসের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ডেন ৪ সেরোটাইপের কারণে এবার রোগীরা দ্রুত শকে চলে যাচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট জরুরি। জ্বর হলেই ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে এবং বেশি বেশি করে তরল খাবার খেতে হবে। প্রেশার কমে গেলে বা ঝুঁকিপূর্ণ কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।