নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস
দেশের 'ট্যাক্স রিফর্মেশন' বা কর সংস্কারের পরিকল্পনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে 'খুব দ্রুত, অনেক দূরে' চলে যাওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
লিজ ট্রাস যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্র এক মাসের হয়েছে। এই সময়ে তার নেতৃত্ব 'সম্পূর্ণ নিখুঁত ছিল না' বলে স্বীকার করার পাশাপাশি নিজের ত্রুটিগুলো 'শুধরে' নিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে জানান, তিনি পদত্যাগ করবেন না বরং টোরিদের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনেও নেতৃত্ব দেবেন।
তিনি বলেন, "আমি লেগে আছি, কারণ আমি এই দেশের সেবা করার জন্য নির্বাচিত হয়েছি, এবং এটি করতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।"
"আমি দায় স্বীকার করতে চাই এবং যে ভুলগুলো হয়েছে তার জন্য আমি দুঃখিত... আমরা খুব দ্রুত অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছিলাম; তবে এখন পথ পরিবর্তন না করা দায়িত্বজ্ঞানহীন হবে," বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে, দেশের বাজারকে পুনরায় স্থিতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের নেওয়া সংস্কার পরিকল্পনার বেশিরভাগই বাতিল করেন তারই নতুন নিযুক্ত অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। এরপর নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর পরিপ্রেক্ষিতে, এখন তিনি শুধু নামেই প্রধানমন্ত্রী কিনা জানতে চাইলে ট্রাস বলেন, তিনি হান্টকে নিয়োগ দিয়েছেন কারণ তিনি জানতেন তাকে দিক পরিবর্তন করতে হবে।
বিবিসিকে তিনি বলেন, দেশে করের সমস্যা মোকাবেলা এবং জ্বালানি খরচের ব্যাপারে সাহায্য করতেই সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি খুব দ্রুতই অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছিলেন, যা ঠিক হয়নি।
তবে প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি পুনরায় ব্যক্ত করে বলেন, "আমি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এটিকে বাস্তবায়ন করতে আমাদের বিকল্প উপায় ভাবতে হবে।"
কর ইস্যুকে কেন্দ্র করে জটিলতা সৃষ্টি হলে চলতি অক্টোবরের ১৪ তারিখ অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্র কোয়াসি কোয়ার্টেংকে সরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। নতুন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন জেরেমি হান্ট। শুক্রবার নিয়োগ পেয়ে সোমবারেই প্রধানমন্ত্রীর অধিকাংশ সংস্কার পরিকল্পনা বাতিল করেন তিনি।
হান্ট বলেন, "প্রধানমন্ত্রী এবং আমি গতকাল তিন সপ্তাহ আগের নেওয়া প্রবৃদ্ধি পরিকল্পনার প্রায় সমস্ত কর ব্যবস্থাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছি।"
এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীরা।
পর পর দুটি বাজেট বিতর্কের পর, প্রধানমন্ত্রীর নিজের দলেরই বেশ কয়েকজন এমপি তার পদত্যাগের দাবি তুলেছেন। তবে ট্রাস পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না বরং দেশের সেবা করে যাবেন।
নতুন অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্টের আকস্মিক এই পদক্ষেপে কনজারভেটিভ সাংসদ রজার গেল সহ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, হান্টই কি তাহলে যুক্তরাজ্যের 'ডি ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী"! এ নিয়ে নানান ধরনের রসিকতাও চলছে ব্রিটিশ মিডিয়াজুড়ে।
অর্থমন্ত্রী সরকারের বাইরে থেকে ৪ জন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে একটি অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। শেয়ারহোল্ডার লভ্যাংশের ওপর কর কমানোর প্রস্তাব বাতিলের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য পরিকল্পিত কর-মুক্ত কেনাকাটা ও অ্যালকোহলের ওপর শুল্ক স্থগিতের পরিকল্পনাও বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।