ঋষি সুনাকের স্ত্রী: কে এই অক্ষতা মূর্তি? বিলিয়নিয়ার ফ্যাশন ডিজাইনার
ব্রিটেনের মসনদে এই প্রথম কোনো ভারতীয় বংশোদ্ভূত বসলেন। বরিস জনসন এবং পেনি মর্ডন্ট সরে দাঁড়ানোয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসলেন ঋষি সুনাক। তার স্ত্রীর পরিচয়ও জগৎজোড়া; ভারতের বিল গেটস খ্যাত ধকুবের নারায়ণ মূর্তির মেয়ে তিনি। বিবিসি অবলম্বনে।
কয়েক বিলিয়নের উত্তরাধিকারী অক্ষতা মূর্তি যুক্তরাজ্যে তার 'নন-ডোমিসাইল' স্ট্যাটাসের জন্য বছরের শুরুর দিকে বেশ আলোচনায় এসেছিলেন। যুক্তরাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ায় দেশটির বাইরে থেকে অর্জিত কোনো আয় বা সম্পদের ওপর কর দিতে হতো না তাকে। এ নিয়ে সমালোচনার পর অবশ্য যুক্তরাজ্যের বাইরে উপার্জিত আয়ের ওপরে কর দিতে সম্মত হয়েছিলেন তিনি।
প্রচুর সম্পদশালী হওয়ার পরেও মিডিয়ার সামনে সবসময় নম্রতা বজায় রেখেছেন অক্ষতা।
২০১৩ সালের প্রকাশিত মেয়েকে লেখা এক চিঠিতে নারায়ণ মূর্তি বলেন, ১৯৮০ সালের এপ্রিলে এক সহকর্মীর কাছ থেকে হুবলিতে থাকাকালীন অক্ষতার জন্মের খবর তিনি পেয়েছিলেন। তখন বাড়িতে একটি টেলিফোন রাখার সামর্থ ছিল না তার।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, "তোমার মা এবং আমি তখন অল্প বয়সী ছিলাম; নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ায় তখন আমরা সংগ্রাম করছিলাম।"
খুব ছোটবেলা থেকেই দাদা-দাদীর সঙ্গে থাকতেন অক্ষতা। কারণ এ সময় তার মা সুধা মূর্তি এবং বাবা মুম্বাইতে নিজেদের কর্মজীবন শুরু করেছেন।
এর বছরখানেক পর আইটি পরিষেবা সংস্থা ইনফোসিস প্রতিষ্ঠা করেন নারায়ণ মূর্তি। এই প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আবির্ভাব হওয়ার মাধ্যমেই ভাগ্য খুলে যায় মূর্তি পরিবারের।
সুধা এবং নারায়ণ মূর্তি তাদের দুই সন্তানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতে ছোটবেলা থেকেই তাদেরকে বেশ নিয়মের মধ্যে রেখেছিলেন। নারায়ণ মূর্তি একবার বলেছিলেন, পড়াশোনা, আলোচনা এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ যেন ঠিকভাবে হয় সেজন্য বাড়িতে কোনো টিভি রাখেননি তিনি।
ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাইভেট লিবারেল ক্লেরমন্ট ম্যাককেনা কলেজে অর্থনীতি এবং ফ্রেঞ্চ পড়তে যান অক্ষতা। ডিলোয়েট এবং ইউনিলিভারে কাজ করার আগে একটি ফ্যাশন কলেজ থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএও পড়েন এই ধনকুবের কন্যা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই ঋষি সুনাকের সঙ্গে তার পরিচয়। এরপর ২০০৯ সালে বিয়ে করেন তারা। তাদের দুই কন্যা সন্তানও রয়েছে।
২০১১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজের ফ্যাশন হাউজ 'অক্ষতা ডিজাইন' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। তবে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছর তিনেকের মধ্যেই ধসে যায় সেই ব্যবসা।
এরপর ২০১৩ সালে ঋষি এবং অক্ষতা দুজনে মিলে ক্যাটামারান ভেঞ্চারস-এর লন্ডনভিত্তিক শাখা চালু করেন। কোভিড মহামারিকালীন রাজস্ব কমে যাওয়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই সংস্থাটিকেও মূল প্রশাসনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
তবে অন্যান্য ব্যবসায়ে তেমন নাম করতে না পারলেও বাবার সম্পত্তিতে বিশাল ভাগ রয়েছে অক্ষতার। সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইনফোসিসের ০.৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৭০০ মিলিয়ন পাউন্ড।
২০২১ সালে সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের চেয়েও ধনী অক্ষতা মূর্তি। ব্রিটেনের ২৫০ জন ধনী ব্যক্তির তালিকায় নাম রয়েছে তার। তবে, তার এই আয়ের উৎস যুক্তরাজ্য নয় বলে, এরজন্য তাকে সেদেশে কর দিতে হতো না। 'নন-ডোমিসাইল' স্ট্যাটাস ভোগ করছেন তিনি। অর্থাৎ, ব্রিটেনের স্থায়ী নাগরিক না হওয়ায় সে দেশের বাইরে থেকে উপার্জিত আয়ের ওপর কর দিতে হবে না তাকে।
এ নিয়ে তখন শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সমালোচনার জেরে গত এপ্রিলে অক্ষতা জানান, বিশ্বজোড়া নিজের সমস্ত সম্পদ ও আয়ের ওপর যুক্তরাজ্যে কর দেবেন তিনি। এটি দিতে তিনি বাধ্য নন; কিন্তু যুক্তরাজ্যকে ভালবেসেই তিনি এই কর দেবেন।
অক্ষতা-ঋষি দম্পতির বিলাসবহুল জীবন বহুবার এসেছে ব্রিটিশ মিডিয়ার চর্চায়। গত অগস্টে যুক্তরাজ্যের এক এস্টেটে শুধু সুইমিং পুলের জন্যই ৪ লাখ পাউন্ড ব্যয় করেছিলেন তারা। সংবাদ সংস্থা এএফপি'র প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রচারাভিযানে বিশ্বে অন্যতম দামী ব্র্যান্ড প্রাডা-এর তৈরি লোফার পরতেন সুনাক।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে অক্ষতা মূর্তি এবং ঋষি সুনাক কমপক্ষে চারটি বাড়ির মালিক। এরমধ্যে লন্ডনের কেনসিংটনে একটি পাঁচ বেডরুমের বাড়িও রয়েছে তাদের, যার আনুমানিক মূল্য ৭০ লাখ পাউন্ড। এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা মআনিকাতেও তাদের বাড়ি রয়েছে।