জাতীয় সংগীত গাইতে অস্বীকৃতি: চাপে ছিলো না ইরানের ফুটবল দল
ইরানের স্ট্রাইকার মেহদি তারেমি জানালেন, কাতার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে খেলোয়াড়রা জাতীয় সঙ্গীত গাইতে অস্বীকৃতি জানালেও কোনোদিক থেকে ইরানের জাতীয় ফুটবল দল কোনও চাপের মধ্যে ছিল না। খবর রয়টার্সের।
গত সোমবার (২১ নভেম্বর) ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০২২ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো মাঠে নামে ইরানের ফুটবল দল।
তবে দেশটিতে চলমান সরকার-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে খেলা শুরু হওয়ার আগে দলের খেলোয়াড়েরা তাদের জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ ঘটনা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলোতে উঠে আসে।
সেদিন কাতারের দোহায় খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ইরানের জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠলে ১১ জন খেলোয়াড় পুরোটা সময় নির্বিকার ও ভাবলেশহীন মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এদিকে জাতীয় সংগীত বেজে ওঠার সময়ে খেলোয়াড়দের নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকার ঘটনায় সেদিনের ইরান বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচটি ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার ওয়েলসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে নামার আগে সংবাদ সম্মেলনে তারেমি বলেন, তিনি আগে ভেবেছিলেন এ প্রসঙ্গে কিছু বলবেন না, কিন্তু আজ (গতকাল) উত্তর দেবেন।
তিনি বলেন, "আমরা চাপে নেই। একটি ফুটবল টুর্নামেন্টে ফুটবল সাংবাদিকদের অবশ্যই সম্মান প্রদর্শন করতে হবে এবং ফুটবলের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, এমন প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে হবে।"
তবে ইরানের কোচ কার্লোস কুইরোজ বলেন, খেলাকে ঘিরে রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার মিডিয়ার রয়েছে।
এই পর্তুগিজ কোচের ভাষ্যে, "রাজনৈতিক প্রশ্ন করা কি ন্যায়সঙ্গত? এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। পাশাপাশি কোনো প্রশ্নের উত্তর না দেওয়াটা কিন্তু আমাদের অধিকার। আপনাদের আমাদের অবস্থানকে সম্মান এবং বুঝতে হবে।"
"সবারই ইরানের ৩ হাজার বছর পুরনো ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানকে সম্মান করা উচিত। ইরানীরা শিক্ষিত, নম্র এবং ঠিক বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মতোই।"
তবে ৬৯ বছর বয়সী কোচ এও বলেছেন, খেলোয়াড়দের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন করা মিডিয়ার অনুচিত।
কুইরোজের ভাষ্যে, "অদ্ভুত যে আপনারা এই একই প্রশ্ন অন্যান্য দেশের খেলোয়াড় বা কোচদের করেন না! তাদের মধ্যে অনেকে নিজের দেশেই এসব প্রসঙ্গে কখনো কথা বলে না।"
"(ইরানি) খেলোয়াড়দের অন্য দলের মতো ফুটবল খেলতে দিন, তারা ভক্তদের শত্রু নয়।"
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনি নামক এক ২২ বছর বয়সী তরুণীর মৃত্যু হলে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ ইরানিরা। কুর্দি বংশোদ্ভুত আমিনি তেহরানে গ্রেপ্তার হওয়ার তিনদিন পরে মারা যান।
ইসলামিক রিপাবলিক দেশটিতে নারীদের জন্য বিদ্যমান পোশাক বিষয়ক বিধিবিধান ভঙ্গ করার অভিযোগে মাশা আমিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
চলমান এ আন্দোলনের সমর্থনে ইরানের অনেক খেলোয়াড় জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়া ও বিজয় উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ইরানে বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৪০০-এর মতো মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে নরওয়ের অসলোভিত্তিক সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস।