যক্ষ্মার টিকা করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি কমায় ৬ গুণ, দাবি গবেষকদের
যক্ষ্মার টিকার বৈজ্ঞানিক নাম ব্যাকিলাস ক্যালমাটে-গুয়েরিন জ্যাব, সংক্ষেপে যাকে 'বিসিজি জ্যাব' বলা হয়। করোনাভাইরাস মোকাবিলাতেও এটি কার্যকর ফল দিতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের বিশেষজ্ঞরা তাদের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, যেসব দেশে ব্যাপক আকারে যক্ষ্মার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে, সেখানে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার ৫ দশমিক ৮ গুণ কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।
বিসিজি ভ্যাকসিন ফুসফুসে যক্ষ্মার জীবাণু প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ২০০৫ সালে ফুসফুসের ইনফেকশন কমার প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যে এই টিকার প্রয়োগ বন্ধ করা হয়। তবে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের দাবি, যক্ষ্মার টিকা থাকলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আরও শক্তিশালী হয়। এর ফলে অনেকের দেহে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঝুঁকিও হ্রাস পায়।
এই প্রেক্ষিতেই গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে, যেসব দেশে এই টিকার ব্যাপক প্রয়োগ নেই, তাদের তুলনায় যেসব দেশে রয়েছে, সেখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও এতে মৃতের হার অনেক কম। গবেষণাপত্রটি জমা দেওয়া হলেও এখনো অবশ্য জনস হপকিন্সের শীর্ষ শিক্ষক ও বৈজ্ঞানিকেরা এটি পরীক্ষা করে দেখেননি।
তবে বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতি ১০ লাখ মানুষের মাঝে গড় মৃত্যুহার এই গবেষণায় তুলনা করে দেখানো হয়। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে মৃত্যুহারে শীর্ষে থাকা যেসব দেশের জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যের স্বচ্ছতা রয়েছে, সেসব দেশ থেকেই গবেষণার তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গবেষক দল ওই দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা এবং বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সংখ্যাকেও অন্যতম প্রভাবক হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছেন। তাদের মতে, এই দুটি প্রভাবক মৃত্যুহার নিয়ে গবেষণার মূল পর্যবেক্ষণ বা সার্বিক চিত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
যক্ষ্মার টিকা ফুসফুসে অন্যান্য রোগের ভাইরাস প্রতিরোধে যে বেশ কার্যকর প্রভাব রাখছে, গবেষণাপত্রে সেটিও স্বীকার করা হয়েছে।
এদিকে একই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত জনস হপকিন্সের আরেকটি টিম যক্ষ্মার টিকা প্রয়োগ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় কি না- তা নিয়ে গবেষণা করছেন। বর্তমানে স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিই পরে রোগীদের চিকিৎসা করতে বাধ্য হচ্ছেন। তারপরও ভাইরাসটির সংক্রমণে অনেকে মারা যাচ্ছেন। এই অবস্থায় যক্ষ্মার টিকা তাদের দেহে কতটুকু রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অবস্থিত মারডক চিলড্রেনস রিসার্চ ইন্সটিটিউড এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।