নীতি পুলিশের অবস্থা অস্পষ্ট, ইরানি নারীদের হিজাব পরা কি এখনও বাধ্যতামূলক?
ইরানের 'নীতি পুলিশ' বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত এখনও ঝুলন্ত অবস্থায় থাকলেও ইসলামী প্রজাতন্ত্র আইনের অধীনে সেদেশের নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলকই থাকছে।
যদিও স্থানীয় সময় শনিবার ইরানের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মন্তেজারি ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানের নীতি পুলিশ বাহিনী বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই বাহিনীর পরিবর্তে এখন থেকে দেশটির বিচারব্যবস্থা দেশের মানুষের আচরণ পর্যবেক্ষণ করবে।
তবে রোববার, নীতি পুলিশ বিলুপ্তির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দেওয়া বক্তব্য অস্বীকার করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার আরবি আউটলেট আলালাম নিউজ। খবর এবিসি নিউজের।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার মন্তাজেরি বলেছিলেন, ইরানের সংসদে এবং দেশটির সাংস্কৃতিক বিপ্লব বিষয়ক সুপ্রিম কাউন্সিলে নারীদের হিজাব আইনটি এখনও বিবেচনাধীন রয়েছে; ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।
ইরানের নারীদের কঠোরভাবে সে দেশের ইসলামী আইন মেনে চলতে হয়। প্রত্যেক নারীকে রাষ্ট্র নির্ধারিত ড্রেস কোড তথা যথাযথভাবে হিজাব পরার নিয়ম মানতে হয় মাত্র সাত বছর বয়স থেকেই। নয়তো মেয়ে শিশুদের স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয় না, অফিস-আদালত কিংবা ব্যাংক থেকে নারীরা সেবা নিতে পারেন না, এমনকি যথাযথভাবে হিজাব না পরলে নারী রোগীদের হাসপাতালেও ভর্তি নেওয়া হয় না ইরানে। আর এ বিষয়গুলো ঠিকঠাকভাবে মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করে সেদেশের নীতি পুলিশ।
তবে, সরকারের নীতি পুলিশ বাতিলের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি কীভাবে পরিবর্তন হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ নীতি পুলিশ বিলুপ্ত করা হলেও ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্র আইনের অধীনে নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলকই থাকছে।
সেইসঙ্গে প্রতিবাদকারী ও এক্টিভিস্টরা সতর্ক করছেন, প্রতিবাদের মুখে এখন সরকার নীতি পুলিশ বিলুপ্ত করলেও পরবর্তীতে দেশে হয়তো একই বাহিনীর উত্থান ঘটবে ভিন্ন নামে। কারণ এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে ইরানে। নীতি পুলিশ বাহিনী নিজেই অন্য আরেকটি বিলুপ্ত বাহিনীর নতুন রূপ ছিল। ইরানী পুলিশের বিলুপ্ত বিভাগ 'সার-আল্লাহ পেট্রোল'-এর পরিবর্তিত রূপ হলো এখনকার নীতি পুলিশ।
টানা প্রায় তিনমাস বিক্ষোভ এবং দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ইরানের সরকার কিছুটা নরম হয়েই নীতি পুলিশ বিলুপ্তির বিষয়ে ভাবছে। আন্দোলনকারীদের জন্য এটি একটি বড় জয়।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২২ বছরের তরুণী মাহসা আমিনিকে ইসলামী আইন অনুযায়ী ড্রেস কোড না মানার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে ইরানের নীতি পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশের হেফাজতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই তরুণী। এরপর হাসপাতালে ভর্তির কয়েকদিনের মাথায় মৃত্যু হয় মাহসা আমিনির। পুলিশের দাবি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মাহসা। অন্যদিকে মাহসার পরিবার জানায়, কখনোই হৃদরোগ আক্রান্ত ছিলেন না তিনি।
পুলিশের হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই ইরানীরা ফুঁসে ওঠেন হিজাব আইন বাতিল ও সরকারবিরোধী বিক্ষোভে। আন্দোলনে আসা অনেক নারীদের নিজেদের হিজাব ছিঁড়ে এবং জনসমক্ষে চুল কেটে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইরানী নারীদের ব্যক্তি স্বাধীনতার এই অন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
এনজিও ইরান হিউম্যান রাইটসের তথ্যমতে, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে ৬০ জন শিশুসহ কমপক্ষে ৪৪৮ জন নিহত হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে।
গতমাসে জাতিসংঘ ঘোষিত তথ্যানুসারে, বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাংবাদিক এবং স্কুলের শিশুসহ ইরানজুড়ে আনুমানিক ১৪ হাজার লোককে গ্রেপ্তার করেছে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী।