চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কেন উচিৎ নয় ন্যাটোর?
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/12/10/httpwww.ptinews.compti_cmsgall_c_0.jpg)
গত সপ্তাহে রোমানিয়ার বুখারেস্টে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনে এজেন্ডার শীর্ষে ছিল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। বাইডেন প্রশাসনের প্ররোচনায় চীনও ন্যাটো আলোচনার কেন্দ্রে ছিল, বিশেষ করে এশিয়ার এই বৃহত্তম শক্তি সম্পর্কে জোটের অন্য দেশগুলোর নড়বড়ে ভাব থামানোর জন্য। খবর এশিয়ান টাইমসের।
বাইডেন প্রশাসন কিছুটা হলেও সফল হয়েছে, মার্কিন এবং ন্যাটো কর্মকর্তারা বৈঠকের পর সাপ্লাই চেইনের জন্য চীনের উপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন, একইসাথে বেইজিংয়ের সাথে প্রযুক্তি-সম্পর্কিত অবরোধ আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
চীনের শক্তি সম্পর্কে সচেতনতা সত্ত্বেও, এশিয়ার নিরাপত্তায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত ন্যাটোর জন্য একটি বড় ভুল হবে। ইউরোপের এমন চরমতম সময়ে চীন জোটের মূল মাথাব্যথার কারণ হওয়া উচিত নয়।
বিগত কয়েক বছর ধরে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক, সামরিক এবং কূটনৈতিক ক্ষমতার সাথে ন্যাটো যে প্রভাবিত হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো শি জিনপিংয়ের অধীনে চীনা পররাষ্ট্র নীতির গতিপথ নিয়ে উদ্বিগ্ন, যিনি কয়েকদিন আগেই তৃতীবারের মতো পাঁচ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি)-র নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করেছেন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/12/10/6f7d978d-a65a-44b2-8fc2-a58e4247.jpg)
জোটের বেশ কিছু দেশ যারা একসময় মনে করেছিল যে বেইজিংয়ের সাথে শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্কের ফলে শেষ পর্যন্ত চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা আরও গণতান্ত্রিক হবে, এবং চীনের জনগণের স্বাধীনতা বয়ে আনবে, তারাও এখন স্বীকার করেছে যে তাদের আশা একটূ বেশিই 'সরল', অন্তত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ভাষায় তাই।
ন্যাটো ঐতিহ্যগতভাবে চীনকে প্রতিপক্ষ হিসাবে বিবেচনা করতে চায় না, তবে সরাসরি বেইজিং-বিরোধী না হলেও তারা আরও চীনের বিষয় নিয়ে সন্দেহপ্রবণ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ চীনের উত্থানকে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সুযোগ হিসেবেও উল্লেখ করেছিলেন। তবে জোটটির ২০২২ সালের স্ট্র্যাটেজিক কনসেপ্ট বেশ ভিন্ন, বেইজিংয়ের 'জবরদস্তিমূলক নীতি'-র সাথে সাথে রাশিয়ার সাথে দেশটির ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব নিয়ে আলাদাভাবে মাথা ঘামিয়েছে।
ন্যাটোর পরিকল্পনার মধ্যে চীন ইস্যুকে অগ্রাধিকার দেওয়া তাদের জন্য বেশ ব্যয়বহুল হবে। যদিও শির অধীনে সিসিপি আরও উচ্চাভিলাষী, এবং আক্রমণাত্মক, তারপরও চীনকে মোকাবেলার জন্য ন্যাটো কোনো আদর্শ জোট নয়।
প্রথমত, ন্যাটো এমন এক সংস্থা যেটি মূলত ইউরোপীয় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মিলিত প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি, বিশেষ করে স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত এবং বর্তমান রাশিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য, সেখানে চীনকে নিয়ে মাথা ঘামানো রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
উত্তর আটলান্টিক চুক্তির প্রস্তাবনার মূল কথাই ছিল 'উত্তর আটলান্টিক এলাকায় স্থিতিশীলতা রাখার' একটি মাধ্যম। চীন জোটের পূর্ব ফ্রন্ট থেকে আড়াই হাজার মাইলেরও বেশি দূরে। ভৌগোলিকভাবে বলতে গেলে, ন্যাটো সদস্যদের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সামরিক হুমকি একেবারেই কম।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/12/10/pacific-leaders-at-nato-madrid-s.jpg)
দ্বিতীয়ত, এই মুহূর্তে ইউরোপের বাইরে ন্যাটোর চিন্তা না করাই উচিৎ কারণ এই মুহূর্তে ইউরোপে একটি চলমান সংঘাত চলছে: ইউক্রেনের যুদ্ধ। এক বছরেরও কম সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ ইতিমধ্যেই বিগত ৭৫ বছরের ইতিহাসে মহাদেশটির জন্য সবচেয়ে মারাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক ফল বয়ে এনেছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের মতে, ইউক্রেন এবং রাশিয়া প্রত্যেকের কমপক্ষে ১ লক্ষ হতাহত হয়েছে, এবং এরমধ্যে যুদ্ধের ফলে নিহত ও ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক অন্তর্ভুক্ত নয়।
আপাতদৃষ্টিতে কিয়েভ এবং মস্কোর মধ্যে কোনো শান্তি আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, যার ফলে যুদ্ধ সম্ভবত ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভালোভাবে চলতে থাকবে। রাশিয়ানরা তাদের আক্রমণের হার আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, কারণ ইউক্রেনীয় বাহিনী ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের জন্য সক্রিয়ভাবে প্রস্তুত হচ্ছে। এটি বিবেচনায় নিয়ে, এখন ন্যাটোর উচিৎ চীনকে তাদের এজেন্ডার বাইরে রাখা।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/12/10/44a27128-45d2-409c-a440-6c21aa0f.jpg)
জোটটি ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সমস্যায় নাজেহাল, যার মধ্যে রয়েছে অসম সামরিক অবদান (এ বছর ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের প্রায় ৭০ শতাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহন করেছে) এবং এর ফলে কিছু ধনী সদস্য তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ আদায়ের জন্য খরচ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি।
সবশেষে, ন্যাটো নীতিনির্ধারকদের চীনকে যেকোনো কৌশলগত সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে রাখার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ন্যাটো এই পথে এগোলে বেইজিং স্থির থাকবে না। বিপরীতে, এশিয়ার দিকে ন্যাটোর তাদের কৌশল পরিবর্তন করলে এর বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য চীন সম্ভবত রাশিয়ার সাথে তার কৌশলগত অংশীদারিত্ব দ্বিগুণ করবে।
এটি জোটের জন্য বেশ বড় সমস্যার কারণ হতে পারে, যার মধ্যে বৃহত্তর চীনা-রাশিয়ান সামরিক এবং গোয়েন্দা সহযোগিতা রয়েছে। এছাড়াও খোদ ইউরোপেই মতবিরোধিতা দেখা যেতে পারে, যা জোটোকে আরও হুমকির মুখে ফেলে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ একে আরও উস্কে না দিয়ে বরং ন্যাটোর এই ঝামেলা আরও দমিয়ে ফেলা।
ন্যাটোর মাথায় ইতিমধ্যেই অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে, শেষ যে জিনিসটি প্রয়োজন তা হল এর মূল মিশন থেকে বিভ্রান্ত না হওয়া, বিশেষ করে এমন এক মুহূর্তে যখন জোটটি আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।