কার হাতে তৈরি হয়েছে মেসির বেস্ত
রবিবারের বিশ্বকাপ ফাইনালের পর কাতারের আমির যখন মেসির গায়ে কালো-সোনালী পোশাকটি পরিয়ে দেন তখন আহমেদ আল-সালেম যেকোন ফুটবল ভক্তের চেয়েও বেশি খুশি হয়েছিলেন। মেসি বিশ্বকাপ শিরোপা তুলে ধরার সময় যে কালো আলখেল্লাটি পরেছিলেন, সেটি একটি দুই হাজার ডলার দামের বেস্ত। আরব পুরুষরা বিয়ে কিংবা অন্যান্য বিশেষ অনুষ্ঠানে এই পোশাক পরে থাকে। আর মেসি যেটি পরেছিলেন, সেটি বানিয়েছিলো সালেমের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানই। খবর এএফপির।
তবে মেসির গায়ে এই বেস্ত পরিয়ে দেওয়া নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে।
দোহার সৌক ওয়াকিফ মার্কেট থেকে সামান্য দূরে এক ক্যাফেতে বসে আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্সের ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করছিলেন সালেম। তার আগে ফিফার কর্মকর্তাদের কাছে দুটো বেস্ত হস্তান্তর করেন, একটি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসির শরীরের আকারের, অপরটি ফরাসি অধিনায়ক হুগো লরিসের আকারে।
সালেম তখনো জানতেন না এই বেস্ত কাদের জন্য। তবে যখন কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল-থানি মেসিকে পরিয়ে দেন তখনই টিভির পর্দায় নিজেদের প্রতিষ্ঠানের বানানো বেস্ত চিনতে পারেন তিনি। আর তারপর থেকেই তিনি নিজেকেও একজন বিশ্বকাপজয়ী মনে করছেন।
কাতারের রাজপরিবারের জন্য বেস্ত বানানো আল-সালেম স্টোর সাধারণত দিনে আট থেকে দশটি বেস্ত বিক্রি করেন। তবে ফাইনালের পরদিন সোমবার সেটি বেড়ে হয় ১৫০টি, যার মধ্যে মেসির গায়ে পরা সেরা মানের তিনটি রয়েছে।
"একপর্যায়ে দোকানের বাইরে ভিড় জমে যায়। আর তাদের প্রায় সবাই আর্জেন্টাইন। কারণ তাদের প্রায় সবাই আর্জেন্টাইন সংগীত গাচ্ছিলেন, হাতে একটি নকল বিশ্বকাপ শিরোপা নিয়ে আর বেস্ত পরে তারা একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছিলেন।
এএফপি-ের সাথে আবু সালেম যখন সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন তখনই একদল সমর্থক হুড়মুড় করে দোকানে ঢুকে পড়েন এবং আমিরের এই বেস্ত পরিয়ে দেওাকে অভিবাদন জানান। মরিসিয়ো গার্সিয়া নামে একজন সমর্থক জানান: "আমরা খুবই খুশি হয়েছিলাম যখন আমরা বিষয়টি দেখি। এটা এক রাজার পক্ষ থেকে আরেক রাজার জন্য উপহার।" বিশত গায়ে দিতে দিতে মন্তব্য করেন তিনি, তবে এর দাম তার পক্ষে বহন করা বেশ কঠিন হওয়ায় না কিনেই ফিরে যান তিনি।
অনেক মন্তব্যকারী, যাদের বেশিরভাগই ইউরোপীয়, মেসির জার্সি ঢেকে যাওয়ার কারণে এর সমালোচনা করেন। তবে ওই মুহূর্তকে স্বাগত জানায় আরবের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।
সালেম এবং অন্যান্য আরবরা জানায় যে আমিরের ইচ্ছা ছিল মেসিকে 'সম্মান' জানানো এবং এর ভুল বুঝছেন অনেকেই।
সালেম জানান, "যখন একজন শেখ আরেকজনকে বেস্ত পরিয়ে দেন, তার মানে হচ্ছে তিনি আরেকজনকে সম্মান জানাচ্ছেন, তার কদর করছেন।"
"কাতারের জন্য এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল। এই ছবিগুলো বারবার ব্যবহার কবে এবং আলোচিত হবে," বলে মন্তব্য করেন সুইটজারল্যান্ডের লজান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস সোশিওলজির অধ্যাপক ক্যারোল গোমেজ।
সালেম জানান যখন ফিফা কর্মকর্তারা তার দোকানে আসেন তখন তারা সবচেয়ে হালকা এবং সবচেয়ে স্বচ্ছ বেস্ত খুঁজছিলেন। এতে সালেম অবাক হন, কারণ এখন শিতকাল চলছে, সবাই সাধারণত এই সময়ে মোটা বেস্তই খুঁজে থাকেন। তবে পরে তিনি বুঝতে পারেন, আর্জেন্টিনার জার্সি যেন ঢেকে না যায়, সে কারণেই স্বচ্ছ কাপড় খুঁজছিলেন তারা।
উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশেই বেস্ত পরা হলেও আল-সালেমই কাতারের সবচেয়ে বড় বেস্ত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, যাদের অধীনে ৬০ জন দর্জি এই পোশাক তৈরি করেন। প্রতিটি বেস্ত তৈরি করতে এক সপ্তাহ সময় লাগে এবং ৭টি ধাপ পার করে একেকটি পোশাক তৈরি শেষ হয়। সামনে এবং হাতে সোনালী হাতা লাগানোর জন্য আলাদা দর্জি কাজ করেন।
মেসির বেস্তে যে সোনালী সুতা রয়েছে তা এসেছে জার্মানি থেকে, অন্যদিকে নাজাফি কাপড়টি আনা হয়েছে জাপান থেকে।