ঢাকা থেকে সাইকেল চালিয়ে বরগুনা এলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যুবক
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা থেকে সাইকেল চালিয়ে বরগুনা এসেছেন এক যুবক। ৭ এপ্রিল ঢাকার সাভার থেকে যাত্রা শুরু করে ১০ এপ্রিল বরগুনা সদর উপজেলার নিজ বাড়িতে পৌঁছান তিনি।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এমন অসচেতনভাবে সাড়ে তিনশ' কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে তার বরগুনায় আসার কথা জানতে পেরে আঁতকে উঠেছেন স্থানীয় সচেতনমহল।
এদিকে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি আসায় ওই যুবককে ঘরে উঠতে দেননি তার স্ত্রী। পরে নিজ বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেওয়ায় তার শ্বশুরবাড়িসহ দুটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
ওই যুবকের স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাভারের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন তিনি। ৫ এপ্রিল থেকে তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। স্বজনরা বিষয়টি জানতে পেরে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন। কিন্তু তিনি চিকিৎসকের কাছে যাননি।
এরপর দেশজুড়ে চলা অঘোষিত লকডাউনের মধ্যেই গত ৭ এপ্রিল সাভারের স্থানীয় এক পরিচিতজনের কাছ থেকে সাইকেল সংগ্রহ করে তিনি বরগুনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। অসুস্থ শরীরে টানা তিনদিন সাইকেল চালিয়ে নিজ বাড়িতে পৌঁছান তিনি।
ওই যুবকের প্রতিবেশী এক শিক্ষক দম্পতি জানান, অসুস্থ অবস্থায় তার বাড়ি আসার খবর আমরা জানতে পারি ১১ এপ্রিল বিকেলে। বাড়ি আসার পর দু'দিন তিনি শ্বশুরের ঘরেই ছিলেন। বাইরে বের হননি। অন্যদিকে তার স্ত্রী দুই কন্যাকে নিয়ে ছিলেন ওই যুবকের নিজ বাড়িতে। পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ১২ এপ্রিল পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১২ এপ্রিল ওই যুবককে সেখানে ভর্তি করে পুলিশ। ওইদিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়। ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় তার রিপোর্ট আসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। রিপোর্টে ওই যুবককে করোনা পজিটিভ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
যুবকটির বাবা বলেন, ৭ তারিখ সকালে পুত্রবধুর মাধ্যমে আমার ছেলের অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি রওনা হওয়ার খবর পাই। সব ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকায় ছেলেকে তখন ফোন করে বাড়ি আসতে নিষেধ করেছিলাম।
যুবকের স্ত্রী বলেন, তাকে আমি সাভারে ডাক্তার দেখাতে বলেছিলাম। কিন্তু সে শোনেনি। বরগুনা আসার পরও তাকে আমি বাড়ি না এসে হাসপাতালে যেতে বলি। কিন্তু সে আমার কোনো কথাই শোনেনি। তাই তাকে ঘরে উঠতে দিইনি।
ওই যুবক এখন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেখানে আরও চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাবলীগ জামায়াত থেকে সংক্রমিত হয়ে ঢাকাফেরত এক বৃদ্ধ এবং নারায়ণগঞ্জের কাচপুর থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বরগুনা আসা আরেক যুবক।
বরগুনার সিভিল সার্জন বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এই যুবক এখন ভালো আছেন। আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক তার কাছাকাছি থাকছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অন্য দুজনও ভালো আছেন।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ওই যুবকের কথা আমি শুনেছি। তার শ্বশুরবাড়ি ও এক শ্যালকের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।