ভারতে কোভিড প্রাদুর্ভাব: সতর্কতা নেই হিলি স্থলবন্দরে, বেনাপোল চেকপোস্টে থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফ্রারেড দিয়ে পরীক্ষা চলছে
প্রতিবেশী ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বিএফ.৭ শনাক্ত হলেও, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে সতর্কতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ।
এই সীমান্ত দিয়ে চলাচলকারী অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এভাবে সারা দেশে কোভিড-১৯ রোগসৃষ্টিকারী নতুন ধরনটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) হিলি স্থলবন্দরে গিয়ে সেখানে অবস্থান করা মেডিকেল টিমের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। অথচ হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দৈনিক ৫০০-৬০০ যাত্রী বিভিন্ন কাজে বাংলাদেশ ও ভারতের আসা-যাওয়া করে।
তাজ ফারজানা নামক এমন একজন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গতবছর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সময় হিলি ইমিগ্রেশন বন্ধ রাখা হয়েছিল। 'এখন টেস্টিং বুথ থাকলেও, কোনো স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে দেখিনি'।
আরেক যাত্রী মনোজ সিং জানান, কোনো ভ্রমণকারীই মাস্ক পরছেন না।
এসব অভিযোগের বিপরীতে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদিউজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে (ভারতে) কোভিড-১৯ শনাক্তের সংখ্যা বাড়ায় আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক আছি। যাত্রীদেরকেও সতর্ক করা হচ্ছে। একইসঙ্গে, মেডিকেল টিমের সাথে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সন্দেহভাজন যাত্রীদের মেডিকেল টিমের কাছে নিয়ে আসা হয়, এরপর তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।"
হিলি ইমিগ্রশন চেকপোস্টে সব সময়ের মতো এখনও একটি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সুলতান মাহমুদ-ও দাবি করেন। তিনি বলেন, দরকার হলে আমরা সেখানে যাব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশমতো এসব কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বেনাপোল চেকপোস্টে সবোর্চ্চ সতর্কতা জারি
এদিকে বিএফ.৭ উপধরণের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেনাপোল চেকপোস্টে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। তবে বন্দরে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো এক চিঠিতে বন্দর এলাকায় সতর্কতা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল।
চিঠিতে বলা হয়, চীন-ভারতসহ বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ওমিক্রনের এই উপ-ধরন শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন ধরনকে 'অত্যন্ত সংক্রামক' উল্লেখ করে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই ভাইরাস যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রাজিল, জার্মানিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের ব্যাপারে হেলথ স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে। সব সন্দেহজনক যাত্রীকে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করতে হবে।
২৫ ডিসেম্বর বিকেলে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মেইলে সতর্কতা জারির নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে স্থাপিত ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফ্রারেড হ্যান্ড হেল্ড থার্মোমিটার কার্যকর করা হয়েছে। যা দিয়ে করোনার সময় থেকে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে শার্শা স্বাস্থ্য বিভাগ।
তবে সোমবার ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের তল্লাশি কেন্দ্রের মধ্যে ও ইমিগ্রেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। যাদের মাস্ক আছে তাদের মাস্ক পরা গলায়। ক্যামেরা দেখে অনেককেই মাস্ক পরতে দেখা যায়। ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের মাস্ক পরে আসতে দেখা গেছে। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস তল্লাশি কেন্দ্র ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের আশপাশে বাইরের যে সমস্ত লোকজন ভিড় করছে তাদের মুখে কোনো মাস্ক নেই।
বেনাপোল চেকপোস্টে ঘুরে দেখা গেছে, মাস্ক, পিপি ছাড়াই ভারতীয় ট্রাকচালকরা অবাধে ঢুকছেন বেনাপোল বন্দরে। তাদের কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না। বন্ধ রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রে কার্যক্রমও।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা সংক্রমণ কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা হয়েছিল। এরইমধ্যে সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে, বেনাপোল বন্দরের রেল ও সড়কপথে বড় ধরনের বাণিজ্য কার্যক্রম আর পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত। প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে। এছাড়া এ চেকপোস্ট দিয়ে বছরে প্রায় ১৮ লাখ পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। আমদানি পণ্য নিয়ে প্রতিদিন ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রায় সহস্রাধিক ট্রাকচালক আসছেন বেনাপোল বন্দরে। বেনাপোল বন্দর থেকে ৩ শতাধিক ট্রাকচালক রপ্তানি পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে। পণ্য খালাসে শ্রমিক, ট্রাকচালকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রায় ২০ হাজার মানুষের প্রতিদিন সমাগম হয় বেনাপোল বন্দরে।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী জানান, করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন 'ওমিক্রন' নিয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে সতর্কতা করা হয়েছে। ভারত থেকে আসা পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফ্রারেড হ্যান্ড হেল্ড থার্মোমিটার মেশিনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। চেকপোস্টে পাসপোর্টযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে করোনা শুরুর আগ থেকেই।
তিনি বলেন, চেকপোস্টে স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো স্থায়ী অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় তাদের কাজ করতে খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। জনবলের অভাবে বন্দরেও কাজ করতে পারছেন না। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।