ইরানের আকাশসীমায় প্রায় একশো স্টারলিংক স্যাটেলাইট সক্রিয় করেছেন ইলন মাস্ক
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই ইরানে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও স্পেসএক্স এর প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। ইরানের আকাশসীমায় স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার এক টুইট বার্তায় মাস্ক জানিয়েছেন, ইরানের আকাশসীমাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে প্রায় ১০০টি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট সক্রিয় রয়েছে যা খুব শীঘ্রই সক্রিয় হতে যাচ্ছে, খবর রয়টার্সের।
বিক্ষোভ দমন করতে ইরান সরকার ইন্টারনেটের ওপর প্রায়ই নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে থাকে। যার ফলে ইরানে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীরা নিজেদের কার্যক্রম ঠিকঠাক পরিচালনা করতে পারে না। ফলে একদিকে অবাধ তথ্য প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়, অন্যদিকে আন্দোলনের গতি স্তিমিত হয়ে যায়। এছাড়া, সরকার সহজেই আন্দোলন দমন করে বিক্ষোভকারীদের ওপর চালাতে পারে নিপীড়ন ও নির্যাতন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে হিজাব না পরায় ইরানের নীতি পুলিশের হাতে ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় পুরো দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তখন ইরান সরকার একই কৌশল অবলম্বন করে দেশটিতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়; যার ফলে হিজাব বিরোধী আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের মধ্য যোগাযোগ ও সংগঠিত হওয়ার পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়।
ইন্টারনেট বন্ধ করে ইরান সরকারের হিজাব বিরোধী আন্দোলন দমনের বিষয়টি তখন বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়। এ পরিস্থিতি দেখে ইলন মাস্ক টুইটারে ঘোষণা দেন, আন্দোলনকারীদের ইন্টারনেট স্বাধীনতা ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে দ্রুতই দেশটিতে স্টারলিংক স্যাটেলাইট স্থাপন করবেন তিনি। বিলিয়নিয়ার মাস্কের প্রতিশ্রুতির মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ইরানে এতগুলো স্যাটেলাইট স্থাপন স্টারলিংকের বিশাল সক্ষমতারই বহিঃপ্রকাশ।
ইরানের আকাশসীমায় স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইট সক্রিয়ের ঘটনা ইরান সরকারের জন্য বিশাল এক ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কেননা মাস্কের এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইরানিরা বাধাহীনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করলে দেশটির ইন্টারনেট ব্যবস্থার ওপর সরকার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ হারাবে। এছাড়াও স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো সরকারী সকল বিধিনিষেধ এড়িয়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবারাহের পাশাপাশি দেশটিতে নিষিদ্ধ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকসেস পেতে সহায়তা করবে।
স্পেসএক্সের একটি শাখা হচ্ছে স্টারলিংক যা অরবিট্যাল স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ করে। এ প্রতিষ্ঠানটি প্রাইভেট স্যাটেলাইটের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সম্পূর্ণ পৃথিবীতে উন্নত থেকে অনুন্নত সকল স্থানেই ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে। বর্তমানে স্টারলিঙ্ক প্রাথমিকভাবে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নির্দিষ্ট কিছু স্থানে সেবা প্রদান করছে। তবে ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছে এক লাখের অধিক স্যাটেলাইট টার্মিনাল পৌঁছে দিয়েছে, যা সময়ের সাথে সাথে কভারেজ ম্যাপ আরও বৃদ্ধি করবে।