যে কারণে চেলসি, বায়ার্নসহ অন্যান্য ক্লাবগুলো রোনালদোকে নিতে চায়নি
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পরবর্তী গন্তব্য নিশ্চিত হয়ে গেল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার জন্য ইউরোপের বড় কয়েকটি ক্লাবে তাকে নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন রোনালদো নিজেই। কিন্তু কেউই তাকে নিতে রাজি হয়নি। তাই সৌদি আরবের ক্লাব আল-নাসেরই হল রোনালদোর নতুন ক্লাব।
গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই, অবশেষে সব গুঞ্জন সত্যি করে রোনালদোর সঙ্গে চুক্তির সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে আল-নাসের। রোনালদোর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
এই চুক্তি অনুযায়ী ৩৭ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রামিক পাওয়া খেলোয়াড় হবেন রোনালদো। খবর অনুযায়ী, বছরে রোনালদোকে ২০০ মিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি টাকায় পড়ায় ২২০০ কোটি টাকা দিবে আল-নাসের।
রোনালদোর সঙ্গে আল-নাসেরের চুক্তি হয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। খবর নিশ্চিত করেছে আল-নাসের কর্তৃপক্ষ নিজেই।
রোনালদোকে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে আজই পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা আল-নাসেরের।
আল-নাসেরে যোগ দেওয়ার আগে চেলসি, বায়ার্ন মিউনিখ, নাপোলির মতো ক্লাবগুলোর সঙ্গে রোনালদোকে ঘিরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। নিজের প্রথম ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনে ফিরতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছিল, আমেরিকান লিগ সকারেও যেতে পারতেন রোনালদো।
কিন্তু এদের কেউই তাকে দলে নেয়নি। এই দলগুলোর রোনালদোকে না নেওয়ার পেছনে যে কারণগুলো থাকতে পারে, সেগুলো খুঁজে দেখা যাক-
মেজর লিগ সকার
২০২৬ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে আমেরিকাতে। সে হিসেবে মেজর লিগ সকারে যাওয়াটা বেশ ভালো সিদ্ধান্তই হতো রোনালদোর জন্য। কিন্তু তার উচ্চ বেতন দেওয়ার মতো সামর্থ্য খুব বেশি ক্লাবের নেই। ডেভিড বেকহামের ইন্টার মায়ামি হতে পারতো রোনালদোর জন্য উপযুক্ত। তবে মায়ামি লিওনেল মেসিকে দলে নেবে এমন গুঞ্জন উঠেছিল, রোনালদো এবং মেসি দুজনকে রাখার মতো অবস্থা ইন্টার মায়ামিরও নেই।
স্পোর্টিং লিসবন
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর প্রথম ক্লাব, পর্তুগিজ লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। যদিও এখানে ফিরলে এই মৌসুমে রোনালদোর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার ইচ্ছা পূরণ হতো না। কারণ লিসবন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ইতোমধ্যে বাদ পড়ে গিয়েছে।
রোনালদোকে দরকার আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে লিসবন কোচ রুবেন আমোরিম বেশ বিরক্ত হয়েই উত্তর দেন। তার সাফ জবাব ছিলো, রোনালদোকে প্রয়োজন নেই তাদের, 'রোনালদো এখন কাতারে আছে। তাকে আপনারা একবারও এই প্রশ্ন করলেন না। আমাকে এর মধ্যে ৫০০ বার একই কথা জিগেস করেছেন। প্রত্যেকবার আমি একই উত্তর দিয়েছি।'
বায়ার্ন মিউনিখ
শোনা গিয়েছিল, জার্মান এই ক্লাবের কোচ জুলিয়ান নাগেলসমানের সঙ্গে রোনালদোর এজেন্ট, হোর্হে মেন্ডেসের আলাপও হয়েছিল। কিন্তু বায়ার্ন মিউনিখের প্রধান নির্বাহী, অলিভার কান এই খবর উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শুধু বায়ার্ন মিউনিখই নয়, জার্মানির আরেক ক্লাব ডর্ট্মুন্ডও হয়তো রোনালদোর কথা ভেবেছিল, কিন্তু সেটি জার্মান লিগের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবেই।
কিন্তু রোনালদোর সঙ্গে এ নিয়ে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। বরং তার কথা ভেবে থাকলেও, সেটি সাথেসাথেই বাতিল করে দেন তারা, 'অবশ্যই রোনালদোর মাপের খেলোয়াড় একটি দলকে শক্তিশালী করবে। আমরা এটা নিয়ে ভাবলেও, সাথেসাথেই এই চিন্তা ঝেড়ে ফেলেছি।'
চেলসি
শত্রু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডেরা থেকে রোনালদোকে চেলসি নিয়ে আসতে চায়, এমন গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। যদিও চেলসি কোচ, টমাস টুখেল তাকে আনার বিপক্ষে ছিলেন। টুখেল বরখাস্ত হওয়ার পরে, আবারো গুঞ্জন মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।
কিন্তু চেলসির নতুন কোচ গ্রাহাম পটার এবং নতুন মালিক টড বোহেলি, রোনালদোর ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। বরং তারা ফরাসি তারকা ক্রিস্তোফার এনকুনকুকে দলে ভেড়াতে বেশি আগ্রহী।
নাপোলি
জুভেন্তাসের হয়ে তিন বছর ইতালিয়ান লিগে খেলেছেন রোনালদো। আরেক ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির হয়ে ইতালিতে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু নাপোলি নিজেদের তরুণ দলের উপরেই খরচ করতে ইচ্ছুক।
নাপোলির পরিচালক রোনালদোকে দলে নেওয়া সম্পর্কে বলেন, 'আমরা কখনোই রোনালদোর ব্যাপারে কথা বলিনি। আমাদের একটি দুর্দান্ত দল আছে, আমরা সেটি নিয়ে খুবই খুশি।'
অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার সময়ে অ্যাতলেতিকোর বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন রোনালদো। তাদের সমর্থকদের সঙ্গেও রোনালদোর সম্পর্ক দা-কুমড়োর মতোই। সেই দলেই খেলতে পারেন রোনালদো, এমন গুঞ্জন উঠেছিল।
তবে তা দ্রুতই বাতিল করে দেন অ্যাতলেতিকো কোচ দিয়েগো সিমিওনে, 'রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি। আমি তার অ্যাতলেতিকোর হয়ে খেলার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।'