আগারগাঁওয়ে চালু হলো হলিডে মার্কেট, দুদিনে দোকানপ্রতি গুনতে হবে ৫,০০০ টাকা
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় ৮০ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) উদ্যোক্তাদের পণ্য নিয়ে চালু হয়েছে হলিডে মার্কেট।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) এই মার্কেটের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঐক্য ফাউন্ডেশনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় চালু এই মার্কেট পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রতি শুক্র ও শনিবারে বসবে।
প্রথমদিকে, এ হলিডে মার্কেটে যেকোনো উদ্যোক্তাকে পণ্য নিয়ে বসতে হলে রেজিস্টেশন বাবদ পরিশোধ করতে হবে ৫ হাজার টাকা। এর বিনিময়ে একজন উদ্যোক্তা এক সপ্তাহের শুক্র-শনিবারে দোকান বসানোর সুযোগ পাবেন। পরবর্তী সপ্তাহে সুযোগ দেওয়া হবে অন্য কোনো উদ্যোক্তাকে। তবে মাত্র দুদিনের জন্য এই পরিমাণ ফি, অযৌক্তিক বলছেন উদ্যোক্তরা। এমনকি, এরকম উচ্চ ফি-এর কারণে এমন ভালো একটি উদ্যোগ শুরুতেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
শুক্রবার সকালে উদ্বোধন হওয়া হলিডে মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে থেকে সংগীত কলেজের মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই প্রান্তে বেরিকেড দিয়ে রাস্তার দুই পাশের (পূর্ব ও পশ্চিম) বিস্তৃত গাড়ি পার্কিং এলাকায় ১০০ টি স্টলের জন্য স্থান বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে প্রায় ২০ টি স্টল ছিল খালি। সকালে উদ্বোধনের পর থেকেই ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা ভিড় করতে থাকেন স্টলগুলোতে। বিকালের দিকে তাদের উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে।
স্টলগুলোতে এসএমই উদ্যোক্তাদের চামড়াজাত, পাটজাত, লাইফস্টাইল, ফ্যাশন, হোম ডেকর, হস্তশিল্প, অরগানিক, কৃষি ও খাদ্যপণ্য রয়েছে। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে নার্সারি। এছাড়া, উদ্যোক্তরা নানান ধরনের পিঠা, সবজি নিয়েও বসেন স্টলে।
মিরপুরের নার্সারি থেকে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় গাছ, ফুলগাছ, ক্যাকটাস নিয়ে হলিডে মার্কেটে বিক্রি করতে এসেছেন রিকল গ্রিন-এর ম্যানেজার রবিন হোসাইন। তবে প্রথম দিন হওয়ায় দর্শনার্থী বেশি আসলেও বিক্রি ছিল কম।
রবিন হোসাইন টিবিএসকে বলেন, "আমরা নার্সারি সোসাইটিতে আবেদন করে দোকান পেয়েছি। প্রথম প্রথম বিক্রি একটু কম হবে, সেটি ভেবেই এসেছি। এখানে অনেকেই আমাদের বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস গাছ কিংবা ফুলগাছ পছন্দ করেন, কিন্তু দাম শুনে অধিকাংশই না কিনে চলে যান। আমাদের গাছগুলো অন্যদের থেকে স্পেশাল তাই দাম একটু বেশি।"
চালসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা ও শুঁটকি নিয়ে স্টল দিয়েছেন উত্তরার উদ্যোক্তা জেসমিন আক্তার। তিনি টিবিএসকে বলেন, "দেশীয় বিভিন্ন কৃষি ও খাদ্যপণ্য নিয়ে আমি কাজ করি। মসলার উপাদান সংগ্রহ করে নিজেরাই মসলা তৈরি করি। নিজেদের ঘানিতে সর্ষে ভাঙিয়ে তেল তৈরি করি। আমাদের এখান থেকে ক্রেতারা নিরাপদ ও প্রাকৃতিক খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।"
"প্রথম দিনে সকালে বিক্রি খুব একটা না হলেও সন্ধ্যায় অনেকেই এসে অর্গানিক এসব পণ্য সংগ্রহ করছেন," বলেন জেসমিন।
প্রকৃতি হ্যান্ডিক্রাফটস এর লুৎফর রহমান খান টিবিএসকে জানান, "আমরা ১৭ বছর ধরে হাতে বিভিন্ন ধরনের কাজ করা কাপড় ও ক্রাফট পণ্য নিয়ে কাজ করছি। প্রথম দিন উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ভালোই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
চেরি, বাঁধাকপি, সেলারি পাতা, লেটুস, ক্যাপসিকামসহ সালাদ জাতীয় নানান সবজি নিয়ে আশুলিয়া থেকে এসেছেন ফার্মিং লাইফ বিডি লি. এর মোহাম্মদ আলাল সরদার। টিবিএসকে তিনি বলেন, "প্রথম দিন উপলক্ষ্যে ৪০ কেজির মতো এনেছিলাম, ২৫ কেজির মতো বিক্রি হয়েছে। আমাদের সব পণ্যই উচ্চমানের। বড় বড় রেস্টুরেন্টে এগুলো যায় সালাদ হিসেবে ব্যবহারের জন্য।"
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, "ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এরকম ছোট ছোট মার্কেট চালু করা গেলে উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়বে। এক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিলে ভালো হবে। এতে নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এর মাধ্যমে সমাজ এগিয়ে যাবে, দেশ এগিয়ে যাবে।"
উদ্যোগটিতে যাতে কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। অব্যবস্থাপনা রোধে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "নতুন চিন্তা, নতুন উদ্যোগ হলিডে মার্কেট। উন্নত বিশ্বের আদলে এ ধরনের হলিডে মার্কেট উদ্যোক্তা এবং ভোক্তাদের উৎসাহিত করবে।"
"এখাতে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের অবদান এখনও ২৫ ভাগের মধ্যে, বাজারে প্রভাব ফেলতে এ অবদান ৫০ ভাগ হওয়া দরকার। এখানে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে উদ্যোক্তা এবং ভোক্তারা আগ্রহ নিয়ে ডিএনসিসি ঐক্য হলিডে মার্কেটে আসেন," যোগ করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, "যেসব উদ্যোক্তা এখানে এসেছেন, স্টল দিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই নিজেদের হাতে পণ্য তৈরি করেন। তাই এখানে ভেজাল পণ্য বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। নিজেদের তৈরি বা উৎপাদিত পণ্য তারা নিজেরাই বিক্রি করেন।"
পরীক্ষামূলক উদ্যোগটি সফল হলে ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে এমন 'হলিডে মার্কেট' চালু করা হবে বলে ঘোষণা দেন আতিকুল ইসলাম।
উত্তরের মেয়র বলেন, "হলিডে মার্কেটের একপাশে একটি কালচারাল কর্নার থাকবে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলবে। যারা মার্কেটে আসবেন, তারা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এখানে মন খুলে সাংস্কৃতিক যেকোনো পরিবেশনা করতে পারবেন।"
এদিকে, মাত্র দুদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা ফি নেওয়াকে অযৌক্তিক বলছেন অধিকাংশ উদ্যোক্তারা।
ব্রাইডাল ক্রিয়েশন-এর আবিদা সুলতানা টিবিএসকে বলেন, "আমরা ঐক্য ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে স্টল নিয়েছি। তারা শুধুমাত্র দুদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা ফি নিয়েছে; আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এটি বাড়তি চাপ। অনেক মেলায়ও এতো ফি থাকে না। ৫ হাজার টাকা তো আমাদের খরচই উঠবে না।"
তরঙ্গ-এর স্টলের এসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর দেবব্রত বর্মন টিবিএসকে বলেন, "প্রতি সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বসা সম্ভব নয়। আমাদের পণ্যগুলো বান্দরবান থেকে এনেছি। যা বিক্রি হবে তা দিয়ে সব খরচ মিটিয়ে লাভ থাকবে না। হয়তো এই মার্কেট টিকবে, কিন্তু আমরা টিকতে পারবো না।"
তবে উত্তর সিটি কর্পোরেশন বলছে, এই ফি ভবিষ্যতে কমিয়ে আনা হবে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের এ মার্কেটে আনতে তাদের উদ্যোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ঐক্য ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অপু মাহফুজ টিবিএসকে বলেন, "আমরা যেহেতু পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু করেছি, তাই সবাইকেই একটু কন্ট্রিবিউট করতে হবে। উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঐক্য ফাউন্ডেশন সমন্বয় করেই ফি নির্ধারিত হয়েছে। সামনে হয়তো বিষয়টি আরও বিবেচনা করা হবে। এমনকি ফ্রিও (বিনামূল্যে স্টল বসানোর সুযোগ) করে দিতে পারেন উত্তরের মেয়র।"