হবিগঞ্জে চা বাগান কর্তৃপক্ষের আগুনে পুড়ছে বন্যপ্রাণী, অনুমতি ছাড়াই কাটা হচ্ছে গাছ
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রশিদপুর বন বিটের আওতাধীন হাতিমারা চা বাগানের গির্জাঘর এলাকায় টিলা পরিষ্কার করতে ধরিয়ে দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। স্থায়ীভাবে বাসস্থান হারানোর পাশাপাশি এসব বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এসেও পড়ছে শিকারির হাতে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গার কাছাকাছি হওয়ায় এ এলাকায় মায়া হরিণ, মুখপোড়া হনুমান, বিরল প্রজাতির কাঠবিড়ালি, বন্য শূকর, বানর, খরগোশসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বাস। সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের পাখি ও সরীসৃপ তো আছেই।
স্থানীয়রা জানান, হাতিমারা চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতি বছরই বাগান সম্প্রসারণ করে। চলতি বছর তারা গির্জাঘর এলাকায় বাগান সৃজনের লক্ষ্যে টিলা পরিস্কার শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে গির্জাঘর এলাকার কয়েকটি টিলা থেকে অন্তত দেড় শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছে বাগান কর্তৃপক্ষ, যে গাছগুলোর বয়স ৫০ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি।
টিলা পরিস্কার করতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় সেখানে বসবাস করা বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী পুড়ে মারা যাচ্ছে এবং অসংখ্য প্রাণী আহত হয়েছে। স্থায়ী বাসস্থান হারিয়ে বন্যপ্রাণীরা এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে এবং লোকালয়ে এসে শিকারির হাতে পড়ছে।
গির্জাঘর এলাকার মো. নানু মিয়া বলেন, 'এখনও যেসব প্রাণী জীবিত আছে তারাও নিরুপায়। গাছ কেটে ফেলার কারণে প্রাণিগুলো স্থায়ীভাবে বাসস্থান হারিয়েছে। অনেকগুলো খরগোশ ও বন্য শূকর স্থানীয় কিছু লোকজন শিকার করে খেয়ে ফেলেছে।'
প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন মিতা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী রবি কাস্তে বলেন, 'হাতিমারা চা বাগানের গির্জাঘর এলাকা মায়া হরিণদের একটি পছন্দের জায়গা। এখানে থাকা আউলা নামের একটি গাছের ফল মায়া হরিণ খায়। কিন্তু এবার এই গাছগুলোও কেটে ফেলা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা বাগানের ব্যবস্থাপক মঈন উদ্দিন সাহেবের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি আমাদের মুখ বন্ধ রাখতে উল্টো হুমকি দেন। পরে আমরা বিষয়টি রশিদপুর বিট কর্মকর্তা ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। কিন্তু আজ তিনদিন হয়ে গেলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।'
এদিকে, জঙ্গলে আগুন দেয়া ও গাছ কাটার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর পরিবেশকর্মী ও সংবাদকর্মীদের তৎপরতার কারণে নতুন করে আগুন লাগানো বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানার জন্য রোববার হাতিমারা চা বাগানে ঢুকতে চাইলে বাধা দেন গেটের পাহারাদার। এমনকি চা বাগানের ব্যবস্থাপক মঈন উদ্দিনের সাথে কথা বলতে তার কার্যালয়েও যেতে দেয়া হয়নি। মঈন উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে সহকারী ব্যবস্থাপক আসিফ আঞ্জুম চৌধুরী জানান, বাগানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কোনো কথা বলতে পারবেন না।
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'গত তিনদিন ধরে এই বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে ফোন আসছে। সেখানে যেহেতু বন্যপ্রাণীদের বাস, সেহেতু এই এলাকায় গাছ কাটা বা আগুন দেওয়া বাগান কর্তৃপক্ষের মোটেও ঠিক হয়নি। তবে বিষয়টি আমি বন বিটের কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।'
রশিদপুর বন বিটের কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, 'আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। যে জায়গায় আগুন দেয়া হয়েছে এবং গাছ কাটা হয়েছে সেটি বাগানের নিজস্ব জায়গা। তবে এ ঘটনায় যদি কোনো বন্যপ্রাণী মারা যায় তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমরা বিষয়টি নিয়ে এখনও তদন্ত করছি।
তিনি বলেন, 'স্থানীয়রা আমাদেরকে যে ছবিগুলো দিয়েছেন সেগুলো এ ঘটনার নাকি পুরনো তা পর্যবেক্ষণ করছি। তদন্ত শেষ হওয়ার পরই এ ব্যপারে বিস্তারিত বলা যাবে।'