কুকুর নয়, মাদকদ্রব্য খুঁজে বের করতে চীনে পুলিশকে সহায়তা করবে কাঠবিড়ালি
মাদকদ্রব্য খুঁজে বের করতে বহু দেশেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কুকুর ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু চীনের পুলিশ মাদকদ্রব্য খুঁজে বের করতে এবার কুকুর নয়, বরং কাঠবিড়ালি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে পুলিশের একটি ইউনিট সম্প্রতি ছয়টি কাঠবিড়ালিকে মাদকদ্রব্য নির্মূল অভিযানে কাজে লাগানোর জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের।
ইউনিটটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রথম ধাপে ইউরেশিয়ান প্রজাতির লাল কাঠবিড়ালিগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দেশটির মাদক নির্মূলে প্রাণী হিসেবে কুকুর বাদেও অন্য প্রাণী ব্যবহারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটির পরীক্ষামূলক পর্যায় হিসেবে এ কাজ করা হচ্ছে।
চীনের চংকুইনজ শহরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরদের রক্ষণাবেক্ষণকারী পুলিশ সদস্য ইন জিনকে কাঠবিড়ালিগুলোকেও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইন জিন জানান, মাদকদ্রব্য শনাক্ত করতে যে অনুশীলন করানো হচ্ছে, সেখানে কাঠবিড়ালিগুলো খুবই ভালো করছে। তবে এদেরকে মাঠ পর্যায়ে মাদক নির্মূলে কাজের উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।
মাদক নির্মূলে কাঠবিড়ালি ব্যবহারের চমকপ্রদ এ খবর চীনে জনসাধারণের মনেও কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র দ্য পিপলস ডেইলি সম্প্রতি এ নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, প্রশিক্ষণের সময় কাঠবিড়ালিগুলো একের পর এক বাধা উপেক্ষা করে নিজেদের ঘ্রাণশক্তি ব্যবহার করে মাদকদ্রব্য খুঁজে বেড়াচ্ছে।
ভিডিওটি ইতিমধ্যেই চীনের জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং সাইট উইবো-তে ভাইরাল হয়েছে। প্রশিক্ষক ইন এ সম্পর্কে বলেন, "প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাঠবিড়ালিগুলোর তীব্র ঘ্রাণশক্তির অনুভূতি রয়েছে। বহু বছরের গবেষণার চূড়ান্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এদের ট্রেনিং করানো হচ্ছে।"
চীনে মাদকদ্রব্য পরিবহনের ক্ষেত্রে চোরাচালানকারীরা খুবই জটিল সব পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। অনেক সময় ডাকযোগে কিংবা ছদ্মবেশে চা অথবা অন্যান্য বৈধ পণ্যের সাথে মিশিয়ে মাদকদ্রব্য পরিবহন করা হয়। সেক্ষেত্রে চোরাচালান শনাক্ত করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। আর তাই কাঠবিড়ালি ও ইঁদুরের মত প্রাণীদের যদি ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তবে প্রাণীগুলো সংকীর্ণ কিংবা সহজে প্রবেশ করা যায় না এমন জায়গায় পৌঁছে প্যাকেটের মধ্যে থাকা মাদকদ্রব্যও ঘ্রাণশক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করতে পারবে।
উইবো-তে অনেক নেটিজেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাঠবিড়ালিগুলোকে 'ভাগ্যবান' হিসেবে সম্বোধন করে ঠাট্টাও করেছেন। চীনা কর্ম কমিশনের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া এক নারী ঠাট্টা করে লিখেছেন, "কাঠবিড়ালিগুলো আমার চেয়েও ভালো কাজ করছে।"
এমনকি মাইক্রোব্লগিং সাইটটিতে 'কাঠবিড়ালি স্কোয়াড' নামে হ্যাশট্যাগও চালু হয়েছে।
গতবছর দেশটির মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চীনে যেসব মাদকদ্রব্য শনাক্ত করা হচ্ছে তার সিংহভাগই দেশের বাইরে থেকে আসছে। তাই গত পাঁচ বছর ধরে মাদকদ্রব্য চোরাচালানে জড়িত বৈশ্বিক চক্রগুলোকে ধরতে দেশটিতে নানা অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
আর দেশজুড়ে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে এ অভিযানের অংশ হিসেবে কুকুর বাদেও অন্য প্রাণীগুলোকে ব্যবহারের কথা ভাবতে থাকে চীন। ২০১৮ সালে নতুন কোন প্রাণীকে, এ ক্যাম্পেইনে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে সম্পর্কে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এরই ফলশ্রুতিতে প্রথমদিকে ইঁদুর এবং বর্তমানে কাঠবিড়ালিকে মাদকদ্রব্য শনাক্তের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।