এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল করা জ্যা ফন্তে আর নেই
বিশ্বকাপ সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসার। ২৪ ম্যাচ খেলে ১৬ গোল করা এই জার্মান ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের রোনালদো নাজারিওর রেকর্ড ভেঙ্গেছেন। ১৯ ম্যাচ খেলে ১৫ টি গোল করেছেন অনেকের মতেই সর্বকালের সেরা নাম্বার নাইন বলে বিবেচিত সাম্বা তারকা। এরপর আছেন ১৩ টি করে গোল করা লিওনেল মেসি এবং জ্যা ফন্তে।
লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ গোল ১৩ টি, আর জ্যা ফন্তে এক বিশ্বকাপ খেলেই করেছেন মেসির সমান গোল। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক খেলেছেন ২৬ টি ম্যাচ, আর ফন্তে? ৬ টি!
১৯৫৮ বিশ্বকাপে এই অমর কীর্তি গড়া ফ্রান্সের জ্যা ফন্তে ৮৯ বছর বয়সে পাড়ি জমিয়েছেন পরলোকে। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের করা সর্বকালের সেরা ১২৫ জনের তালিকায় আছেন ফন্তে। এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল করার কীর্তি অদূর ভবিষ্যতে কেউ টপকে যেতে পারবেন বলেও মনে হয় না।
অথচ সেই বিশ্বকাপে খেলার কথাই ছিলো না ফন্তের! থাডি চিসোস্কি এবং রেনে বিলার্ডের চোটের কারণে সুইডেন বিশ্বকাপের ফ্রান্স দলে জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। রজার পিয়ান্তোনি এবং রেমন্ড কোপার সঙ্গে মিলে দুর্দান্ত এক আক্রমণ ত্রয়ী গড়ে তুলেছিলেন জ্যা ফন্তে। যদিও পেলের ব্রাজিলের কাছে হেরে বিদায় নেয় প্রথমবারের মতো সেমি-ফাইনাল খেলা ফ্রান্স।
মাত্র ২৯ বছর বয়সে চোটের কারণে খেলা ছাড়তে হয় ফন্তেকে। অবসর নেওয়ার আগে ক্লাব ক্যারিয়ারে ২৮৪ ম্যাচ খেলেই ২৫৮ গোল করেছেন তিনি। ফ্রান্স জাতীয় দলের হয়ে তার রেকর্ড আরো ঈর্ষনীয়। ২১ ম্যাচ খেলে করেছেন ৩০ গোল। যার ১৩ টি এসেছে ১৯৫৮ বিশ্বকাপে মাত্র ৬ ম্যাচ খেলে।
আজকের এত এত গোলের রেকর্ড আর হ্যাটট্রিকের ছড়াছড়ির মাঝে জ্যা ফন্তের নামও উচ্চারিত হতে পারতো যদি তিনি চোটাক্রান্ত না হয়ে খেলে যেতে পারতেন। ফেরেঙ্ক পুসকাস, ইউসেবিও, জোসেফ বাইকান, রোনালদোসহ বর্তমানের সুয়ারেজ, লেভানডোভস্কি কিংবা বেনজেমাদের সঙ্গে একই তালিকায় থাকতে পারতেন ফন্তে।
১৯৫৮ সালে ব্যালন ডি'অরের সেরা তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিলেন এই ফরাসি স্ট্রাইকার। ২০০৪ সালে ফিফার প্রকাশিত সর্বকালের সেরা ১০০ খেলোয়াড়ের মাঝেও স্থান পেয়েছেন জ্যা ফন্তে। লিওনেল মেসি, এমবাপ্পেদের পিএসজিকে ফ্রান্সের প্রথম ডিভিশনের ফুটবল লিগে প্রথমবারের মতো উঠিয়েছিলেন দলের কোচ হিসেবে।
১৯৫৯ সালে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে রেইমসের হয়ে খেলেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। যদিও পুসকাস, আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, রেমন্ড কোপাদের মাদ্রিদের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয়।
আরেকটি বিশ্বকাপ খেলতে পারলে হয়তো ফুটবলের সর্বোচ্চ সম্মানের এই আসরের সেরা গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে জ্বলজ্বল করতো জ্যা ফন্তের নাম। তবে সেসব কেবলই 'যদি', 'কিন্তু'র বিষয়। পরলোকে পাড়ি জমানো ফন্তে এখন এসব কিছুরই উর্ধ্বে।