বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
একাদশে সুযোগ পেয়েই হয়ে উঠলেন কাণ্ডারী, বল হাতে কঠিন পরীক্ষা নিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের। ম্যাচসেরা মেহেদী হাসান মিরাজের তোপেই বারবার দিক হারিয়ে ইংল্যান্ড তুললো অল্প পুঁজি। পরে ব্যাট হাতেও দেখা গেল তার ঝলক। সঙ্গে ব্যাটিংয়ের ভরসা হয়ে ওঠা নাজমুল হোসেন শান্তর দায়িত্বশীল ইনিংস ও তৌহিদ হৃদয়ের কার্যকরী ছোট্ট ইনিংস। এসবই যথেষ্ট হলো, আরেকটি জয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতে নিলো বাংলাদেশ।
রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বিশ্ব চাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিলো সাকিব আল হাসানের দল। ইংলিশদের বিপক্ষে জয়ের অভিজ্ঞতা থাকলেও যেকোনো ফরম্যাটে এবারই প্রথম সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ের সামনে ইংলিশ কোনো ব্যাটসম্যানই সুবিধা করতে পারেননি। বিশেষ করে মেহেদী হাসান মিরাজের বিপক্ষে কঠিনতম সময় পার করতে হয় তাদের। সাকিব আল হাসান, হাসান মাহমুদরাও ছিলেন সেরা ছন্দে। শেষ বলে অলআউট হওয়ার আগে ১১৭ রান জমা করে সফরকারীরা। জবাবে হৃদয় ও মিরাজের পর শান্তর হার না মানা ইনিংসে ৭ বল হাতে রেখে ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
ছোট লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিতই দেন দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও রনি তালকদার। যদিও ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি তারা। তৃতীয় ওভারে ইংলিশ পেসার স্যাম কারানের শর্ট ডেলিভারি তুলে মারতে গিয়ে ফিল সল্টের হাতে ধরা পড়েন ৯ বলে ৯ রান করা লিটন। রনির পথচলাও দীর্ঘ হয়নি। ষষ্ঠতম ওভারে আরেক পেসার জফরা আর্চারের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১৪ বলে ৯ রান করেন তিনি।
২৭ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। এই জুটি ৩১ বলে ২৯ রান যোগ করে। হৃদয়ের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। আদিল রশিদের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ক্রিস ওকসের হাতে ধরা পড়েন ১৮ বলে ২টি চারে ১৭ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপর শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাট চড়ে বাংলাদেশ।
তাদের জুটিতে ৯৭ রানে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। অন্যদের চেয়ে একেবারেই আলাদা ব্যাটিংয়ে ১৬ বলে ২টি ছক্কায় ২০ রান করে থামেন মিরাজ। এ সময় বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। কারণ একটু পরই ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন সাকিব। তবে এক পাশ আগলে খেলে যাওয়া শান্ত খেই হারাননি। আফিফ হোসেন ধ্রুব টিকতে না পারলেও তাসকিন আহমেদকে নিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছান তিনি।
৪৭ বলে ৩টি চারে ৪৬ রানের মহা গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন শান্ত। রান-বলের হিসাব থাকলেও সেদিকে তাকাননি তাসকিন। ১৯তম ওভারে টানা চার মেরে মিরপুরের দর্শকে ঠাসা গ্যালারিকে উল্লাসে মাতান তাসকিন। ৩ বলে ৮ রান করেন তিনি। আর্চার ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান স্যাম কারান, মঈন আলী ও অভিষিক্ত রেহান আহমেদ।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি ইংল্যান্ড। শুরুতেই তাসকিনের বোলিং তোপে দিগ হারায় তারা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ইংলিশ ওপেনার ডেভিড মালানকে ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশের এই পেসার। থার্ড ম্যানে হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৮ বলে ৫ রান করেন মালান।
দ্বিতীয় উইকেটে চাপ কাটিয়ে তোলেন ফিল সল্ট ও মঈন আলী। টি-টোয়েন্টির মেজাজে রান না তুলতে পারলেও তারা শুরুর ধাক্কা সামলে নেন এ দুজন। ইংল্যান্ডের ইনিংস যখন অনেকটাই গোছালো, তখনই আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিজের বলেই ক্যাচ নিয়ে সল্টকে বিদায় করে দেন। ১৯ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২৫ রান করেন সল্ট।
দ্বিতীয় উইকেট হারানো ইংলান্ডের চাপ আরও বাড়িয়ে দেন হাসান মাহমুদ। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করা ডানহাতি এই তরুণ পেসার ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারকে উইকেটে টিকতেই দেননি। দারুণ এক ডেলিভারিতে ৪ রান করা বাটলারের স্টাম্প উপড়ে নেন হাসান। এ সময় তোপ দাগেন মেহেদী হাসান মিরাজও। ডানহাতি এই স্পিনার ১৫ রান করা মঈন আলীকে ফেরান।
এই চাপ সামলে ইংল্যান্ডকে পথ দেখাতে থাকেন বেন ডাকেট ও স্যাম কারান। পঞ্চম উইকেটে ৩২ বলে ৩৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন এ দুজন। ১৫তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন মিরাজ, এক বলের ব্যবধানে তার শিকারে পরিণত হন কারান ও ক্রিস ওকস। কারান ১৬ বলে ১২ রান করেন, ওকস দুই বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি।
নিজের শেষ ওভার করতে এসে আরেকটি উইকেট নেন মিরাজ, এবার তার শিকার ক্রিস জর্ডান। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রানে ৪ উইকেট, যা টি-টোয়েন্টিতে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। এর আগে আরব আমিরাতের বিপক্ষে ১৭ রানে নেওয়া ৩ উইকেট ছিল ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ৯১ রানে ৬ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত ১১৭ রানে পৌঁছায় ডাকেট ও রেহান আহমেদের ব্যাটে।
ডাকেট ২৮ বলে ২টি চারে ইনিংস সেরা ২৮ রান করে মুস্তাফিজুর রহমানের শিকারে পরিণত হন। রেহান ১১ বলে ১১ রান করেন। তাসকিন ৪ ওভারে ২৭ রান একটি উইকেট নেন। ৩.৫ ওভারে ১৯ রানে একটি উইকেট পান মুস্তাফিজ। ৩ ওভারে ১৩ রানে সাকিবের শিকার এক উইকেট। ২ ওভারে ১০ রানে এক উইকেট পান হাসান।