পোল্ট্রির দাম সহজে না কমার আভাস কৃষিমন্ত্রীর
সাপ্লাই চেইনে সরবরাহ সংকটে কারণে পোল্ট্রির দাম এখন অনেক বেশি এবং এই দাম আগামী ছয়-সাত মাসেও না কমার আভাস দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো আব্দুর রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় ১২তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শোয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
'টেস্টি এন্ড হেলদি প্রোটিন ফর অল' প্রতিপাদ্য নিয়ে ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ শাখা এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের আয়োজনে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী এই শো।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "পোল্ট্রির দাম সহসাই কমবে না। মুরগির দাম কমার জন্য আরও হয়তো ছয়-সাত মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই যে এত দাম, জানি না কীভাবে এটা সমাধান হবে।"
কৃষিমন্ত্রী বলেন, "এই বাজার কেন অস্থির তা বিশ্লেষণ করে খুঁজে বের করতে হবে। কৃষির সবকিছুই পারস্পরিক নির্ভরশীল। মুরগি-ডেইরি করতে ফসল লাগে। মুরগির খাবার ভুট্টা, সয়াবিন থেকে তৈরি হয়। এসবের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক। দীর্ঘদিন খামারিরা লস করেছে, অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে, নতুন বাচ্চা তোলেনি, যার কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ অনেক কমেছে। এ কারণে বাজার অনেক চড়া, মানুষ কিনতে পারছে না। উৎপাদনটা বাড়লে হয়তো পরিস্থিতির কিছু পরিবর্তন হবে, এর জন্য সময় দরকার।"
তবে খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, দাম বেশি হওয়ার কারণে এখন আবার অনেকে মুরগির উৎপাদনে ফিরছে। এভাবে সরবরাহ সংকট বাড়তেই এই সময়টা লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তা অধিদপ্তর বলছে, এক কেজি পোল্ট্রি মাংসের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৬০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও প্রান্তিক খামারিরা ২০৭ টাকার বেশিতে বিক্রি করছে, যেটাকে অযৌক্তিক বলা হচ্ছে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "অস্বাভাবিকভাবে অনেক সময় বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বাড়ানো হয়। একটা বাচ্চা করতে ৩০ টাকা লাগে, এটা কেন ৬০ টাকা হবে? কোনোক্রমেই যেন এটা ৪৫ টাকার উপরে না যায়। এটা দেখার জন্য সরকারের তরফ থেকে একটা রেগুলেটরি বডি থাকতে হবে। পোল্ট্রিতে দাম বাড়ায় ভোক্তা ও উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ফিড প্রস্তুতকারীরা বরাবরই লাভ করে।"
ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, "দাম বেশি হওয়াটা মূলত প্রাইস কারেকশন। কম দামের কারণে কিছুদিন আগে আমাদের অনেক খামারি শেড বন্ধ করে ফেলেছিল। এই প্রাইস কারেকশনের পর তারা তৈরি হচ্ছেন, তারা এই খাতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পোল্ট্রি শোতে প্রদর্শিত পোল্ট্রি পণ্য
মাছ-মুরগির বিভিন্ন কোম্পানির ফিড, ওষুধ, শেড তৈরির সরঞ্জাম, গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণের পণ্য, বিভিন্ন জেনেটিক বুস্টার, আধুনিক স্মার্ট ওয়েট মেশিন, ফিড মিলের যন্ত্রপাতি, হ্যাচারির যন্ত্রাংশসহ নানা পণ্যের প্রদর্শন আকৃষ্ট করেছে দর্শনার্থীদের।
দেশ ও দেশের বাইরের ৫৯১টি প্রতিষ্ঠানের স্টলে এসব পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে চীন এবার মেলায় অংশগ্রহণ না করায় স্টলের সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে জানান আয়োজকরা।
পোল্ট্রি খাত নিয়ে সঠিক গবেষণার জন্য এবার থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীকে অনুদান দেওয়া হচ্ছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হাসান বলেন, "২০২৫ সাল নাগাদ এই শিল্পকে আমরা রপ্তানিমুখী রূপ দিতে চাই।"
এছাড়াও ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ শাখার সহ-সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ পোল্ট্রি খাতে চলমান সংকট নিরসনে সরকারের সহায়তা চান।