ভর্তুকি মূল্যে ডিম-মাংস: স্বাচ্ছন্দে আধা কেজি গরুর মাংস কিনছেন ক্রেতারা
মধ্যবয়সী এক লোক দোকানির কাছে একটু নিচু স্বরে জানতে চাইলেন, 'গরুর গোশত আধা কেজি দেওয়া যাবে?' বিক্রেতা রাজু আহমেদ বেশ হাসিমুখেই ক্রেতাকে বললেন, 'অবশ্যই দেওয়া যাবে।' ক্রেতা একটা ৫০০ টাকার নোট বিক্রেতাকে দিলে তিনি ৩২০ টাকায় আধা কেজি গরুর গোশতের একটি স্লিপ দিলেন। এই স্লিপ দিয়ে চিলিং ভ্যানের ভেতর থেকে পণ্যটির ডেলিভারি নেন ক্রেতা।
সেগুনবাগিচা দুদক কার্যালয়ের উল্টোপাশে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের কম দামে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রয়কেন্দ্রের চিত্র এটি। ফুটপাতের ঠিক পাশেই ছোট্ট একটি চিলিং ভ্যান রাখা, তার পাশে ফুটপাতের উপর টেবিল-চেয়ারে বসে অর্ডার নিচ্ছিলেন বিক্রেতা। মাঝেমধ্যেই তিন-চারজনের একটি করে জটলা তৈরি হচ্ছে, আবার কিছুটা ফাঁকা।
বিক্রয়কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, কোন ভিড়, হুড়োহুড়ি নেই। হাঁটার পথেই যাদের প্রয়োজন তারা ডিম, দুধ, মাংস কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেককেই দেখা গেল স্বচ্ছন্দে আধা কেজি গরুর গোশত, আধা কেজি মুরগি কিনছেন। বিক্রেতার মধ্যে নেই দৃষ্টিকটু আচরণ। কারণ নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ আসলে দামের কারণে গরুর গোশতের দোকানেই যান না। তাদের জন্য এই বিক্রয়কেন্দ্রগুলো এক ধরনের সুবিধা করে দিয়েছে।
নাখালপাড়ার বিক্রেতা তাওহীদ জানালেন, 'আমাদের এই বিক্রয়কেন্দ্রে আধা কেজি-এক কেজি গরুর মাংস কেনার ক্রেতার পরিমাণ বেশি। এছাড়া অল্প কিছু মানুষ আছে যারা দুই কেজি মাংস কেনে।'
এ বিক্রেতা জানালেন, 'ব্রয়লার মুরগি নিয়ে একটু ভুল বোঝেন ক্রেতারা। অনেকে মনে করেন বাজারে ২০০ টাকা, এখানে কেন সেটা ৩০০। কিন্তু এটা তো আসলে ড্রেসিং করা, লাইভ চিকেন না।'
তিনি বলেন, প্রতিদিন একশোর মত ক্রেতা হয়।
দুপুর বারোটার দিকে দেখা গেল, একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইসমাইল হোসেন কোন একটি কাজে পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন। যাবার পথে বিক্রয়কেন্দ্রের পাশে আগ্রহ নিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেন। এরপর আধা কেজি গরু, আধা কেজি ড্রেসড ব্রয়লার মুরগির গোশত কিনলেন। যাবার সময় ক্রেতার চোখেমুখে এক ধরনের স্বস্তির ভাব ফুটে উঠতে দেখা গেল।
বাজারে যখন ৭৫০ টাকা কেজি দরের নিচে কোন গরুর গোশত নেই, সেখানে ৬৪০ টাকায় প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের বিক্রয়কেন্দ্রে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। কিছুটা দাম কমিয়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে। যেখানে বাজারে লাইভ চিকেনের দাম ১৯০-২১০ টাকা। দাম কমানো হয়েছে ডিমের। প্রতি ডজন ডিমের দাম ১২০ টাকা থেকে কমিয়ে ১১০ টাকা করা হয়েছে। যেখানে বাজারে ডিমের ডজন এখনো ১৩০-১৩৫ টাকা। এর সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে তরল দুধ।
সেগুনবাগিচার মতোই ঢাকার ২০টি স্পটে প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। বাজারে এসব পণ্যের দাম বেশি বলে, ক্রেতাদের মধ্যে আগ্রহও বেশি। তবে প্রথম প্রথম বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পণ্য বিক্রি হয়ে যেত। এখন অবশ্য ৩-৪ ঘণ্টা ধরেও পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
মতিঝিলের এজিবি কলোনির পাশের বাজারের বিক্রেতা ছিলেন রাসেল। তিনি বলেন, ৯টা থেকে শুরু করে ১২টা পর্যন্ত পণ্য বিক্রি করেছেন। কোথাও কোথাও ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্তও পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বিক্রেতারা জানান, প্রতিটি বিক্রয়কেন্দ্রে ১০০ কেজি গরুর গোশত, ৪০ কেজি মুরগি, ১০ কেজি খাসি, ১২০০ ডিম, ২০০ লিটার দুধ বিক্রি করা হচ্ছে। প্রথম প্রথম দ্রুত বিক্রি হলেও এখন একটু সময় নিচ্ছে বেচাবিক্রি।
এর মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বিশ্বাস টিবিএসকে বলেন, 'প্রতিটি স্পটেই এখন স্বাভাবিকভাবে পণ্য বিক্রি হচ্ছে, মানুষও ঝামেলা ছাড়াই পণ্য কিনতে পারছে।'
রোজার আগে থেকেই ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন ও পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সহায়তায় রাজধানীর ২০টি স্থানে প্রতিদিন এসব পণ্য কম দামে বিক্রি হচ্ছে।