বরিস জনসনকে মৃত ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তার চিকিৎসকরা
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের বিছানায় যখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন, তখন পরিস্থিতি বিবেচনায় চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণার জন্যেও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।
আজ রোববার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা জানিয়েছেন তিনি।
বরিস জানান, চিকিৎসকেরা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অজস্র লিটার অক্সিজেন দিয়েছেন। এটা ছিল এক কঠিন মুহূর্ত, এক দুঃসহ স্মৃতি। আমি এটা অস্বীকার করব না। এমনকি আকস্মিকভাবে আমার মৃত্যু হলে সাবেক সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর যেমন জরুরি পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তেমন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন মন্ত্রীসভা ও শীর্ষ কর্মকর্তারা।
জনসন জানান, 'প্রধানমন্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যু ঘিরে সরকারের যে একটি জরুরি পরিকল্পনা আছে তা আমি আগে থেকেই জানতাম।' তবে তিনি ওই পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করেননি।
গত সোমবার থেকে নিজের দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন বরিস জনসন। দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম তিনি নিজের মৃত্যু হলে সরকার কি পদক্ষেপ নিতো- সে সম্পর্কে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন।
এর আগে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গত মার্চের শেষ দিকে ডাউনিং স্ট্রিটের সরকারি বাসভবনে টানা ১০ দিন নিজেকে 'বিচ্ছিন্ন' করে রাখেন ৫৫ বছরের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এরপর অবস্থার অবনতি হলে তাকে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে হাসপাতালের নিবির পরিচর্যা ইউনিটে রেখে টানা তিনদিন শ্বাসনালীতে নল ঢুকিয়ে ভেন্টিলেটর যন্ত্রের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হয়।
এব্যাপারে জনসন বলেন, আমাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন আমি ভাবছিলাম মাত্র কয়দিনে কিভাবে আমার স্বাস্থ্যের এত অবনতি হলো। কিন্তু যখন আমাকে আউসিইউতে স্থানান্তর করা হলো, তখন সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম। কারণ আমি জানতাম করোনার কোনো চিকিৎসা নেই। এসময় আমার জীবন- মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল ৫০:৫০।
তাই সরকারি নির্দেশে আমার মৃত্যুর পর কিছু গোপনীয়তা অবলবনের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন চিকিৎসকেরা। মূলত ওই পরিস্থিতিতে জনগণের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া রোধেই এসব প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
নিজের রোগমুক্তির জন্য এসময় হাসপাতালের সেবা ব্যবস্থাকে কৃতিত্ব দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অসাধারণ, অভূতপূর্ব চিকিৎসা ও পরিচর্যা সেবা দেওয়ার জন্যই আমি এযাত্রা বেঁচে ফিরেছি। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই জীবন ও মৃত্যুর মধ্যকার পার্থক্য নির্ধারিত হয়েছে।
'আমি জানিনা এটা তারা কিভাবে সম্ভব করলেন। আমি সত্যিই জানিনা…শুধু তাদের কর্মতৎপরতা দেখেই আমি অভিভূত…'এটুকু বলতেই আবেগে বরিসের গলা কাঁপে এবং তার চোখ লাল হয়ে যায়। এসময় তিনি একটু বিরতি নিয়ে গভীর নিঃশ্বাস নেন।
এরপর তিনি আরও বলেন, কিছু মনে করবেন না। এসব মনে পড়লেই আমি আবেগি হয়ে পড়ি। সব মিলিয়ে আসলেই এটা (বেঁচে ফেরাটা) ছিল আশ্চর্য এক ঘটনা।