পাওনা টাকা চাওয়ায় গালিগালাজ, অভিযোগ রুমানার
লিগ শেষ হয়েছে এক বছরের বেশি। অর্ধেক পারিশ্রমিকও বুঝে পাননি শেখ রাসেল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট একাডেমির হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলা নারী ক্রিকেটাররা। লম্বা সময় পর সেই পারিশ্রমিক চেয়ে উল্টো গালিগালাজ শুনতে হয়েছে জাতীয় নারী দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদকে।
গত বছর অনুষ্ঠিত ঢাকা লিগে শেখ রাসেল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট একাডেমির হয়ে খেলেন রুমানা আহমেদ, শায়লা শারমিন, সুলতানা ইয়াসমিন, ইতি মন্ডলরা। দলটির অধিনায়কত্বের দায়িত্বে ছিলেন রুমানা। তার সঙ্গে আলোচনা করেই দল সাজায় শেখ রাসেল। দলের সঙ্গে এতটা সম্পৃক্ত থাকা একজন ক্রিকেটারই পাওনা পারিশ্রমিক চেয়ে দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে পাওনা পারিশ্রমিকের জন্য দলটির মেয়েদের ক্রিকেট ম্যানেজার জাকির হোসেনকে ফোন করেন রুমানা। ফোন করে কথা বলার এক পর্যায়ে জাকির হোসেন তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে দাবি করেছেন রুমানা।
৭ লাখ টাকায় শেখ রাসেলে নাম লেখান রুমানা। তিন লাখ টাকা বুঝে পেয়েছেন তিনি। বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি চার লাখ টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি ডানহাতি এই অলরাউন্ডারকে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিয়ে গেলেও টাকা না পেয়ে এক পর্যায়ে বিসিবি বরাবর অভিযোগ করেন শেখ রাসেলের নারী ক্রিকেটাররা।
তাতেও বিশেষ কাজ হয়নি। অবশেষে খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে জাকির হোসেনকে ফোন করেন রুমানা। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে নারী ওয়ানডে দলের অধিনায়ক বলেন, 'অনেকদিন আগে খেলা শেষ হয়েছে। অন্যান্য মেয়েদের আমাকে সামলাতে হয়েছে। আমি বলেছি, ওরা আশ্বাস দিয়েছে টাকা দিয়ে দেবে। এখনও একই আশ্বাস দিচ্ছে। যদিও তাদের কথা আর কাজ এক হচ্ছে না।'
ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে ক্রিকেটারদের কল রিসিভ করা হয় না জানিয়ে রুমানা বলেন, 'কোনো মেয়ের ফোন রিসিভ করে না। শুরুতে আমার কল ধরতো, পরে আর কল ধরে না। বাধ্য হয়ে অচেনা নম্বর তেকে কল দিতাম, তখন ধরতো। তারা বারবার তারিখ দিতো। এরপর আর খোঁজ করতো না। আবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায় না।'
এমন অবস্থায় অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে দলের ক্রিকেটাররা রুমানাকে পারিশ্রমিকের জন্য যোগাযোগ করতে বলেন। এবার ফোন দিলেই তাকে শুনতে হয় গালিগালাজ। রুমানা বলেন, 'সবাই বলছিল করোনায় খেলাধুলা নেই, ক্লাব টাকাও দিচ্ছে না। আপনি একটু কথা বলেন। তো আমি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ফোন দিয়েছি, ফোন দেওয়াতে সে আমাকে গালিগালাজ শুরু করে দেন। আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এসব আমার কাছে রেকর্ড করা আছে। এটা আমি এখন প্রকাশ করব না। এটা আমি বিসিবিতে দিবো।'
করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে এখনও অভিযোগ করতে পারেননি রুমানা। তবে লিখিতভাবে বিসিবি বরাবর অভিযোগ করবেন তিনি, 'আমি চেয়েছিলাম যে ছুটি শেষ হলে আমি বিসিবিতে যাব এবং এর একটা সমাধান করব। আমাকে কেন এভাবে গালিগালাজ করবে। করোনার কারণে যেতে পারিনি। এমন তো না যে উনাদের কাছে আমি সাহায্য যাচ্ছি। পাওনা টাকা যদি না দেয়, এটা কেমন করে হবে। সব স্বাভাবিক হলে আমি লিখিতভাবে অবশ্যই অভিযোগ করব। এমন ক্লাব বিসিবির কার্যক্রমে যেন না নেওয়া উচিত, আমি এমন অনুরোধ করব।'
রুমানা আরও বলেন, 'আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলছি, ওখান থেকে টাকা পাচ্ছি। যারা বাইরে থেকে খেলতে আসছে, ক্লাব ছাড়া তারা কোথা থেকে টাকা পাবে। প্রথমে যে স্বাক্ষর করে টাকায় নেয়, আমি নিইনি। আমি চেয়েছি আমার মেয়েদের আগে দিন। আমার টাকা দিয়ে ওখানে খাবার, পানি আনিয়েছি। উনারা বলেছে দিয়ে দিবো, কিন্তু দেয়নি। আমি তিন লাখ পেয়েছি, এখনও চার লাখ বাকি আছে।'
সর্বশেষ ফোন করে পারিশ্রমিক পাওয়ার আশ্বাসও পাননি রুমানা। তাই ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেন রুমানা, 'উনি (জাকির হোসেন) তো আর আশ্বাস দেননি, গালিগালাজ করলেন। তো শহিদুল্লাহ স্যারকে ফোন দিয়ে বলি আপনার ম্যানেজার গালি গালাজ করেছেন। তো উনি বলছিলেন, 'দল হেরে গেলে এমন একটু করে। আমি বলিনি টাকা দিবো না, আমি টাকা দিয়ে দিবো।' এরপর উনাকে ফোন দিলে উনিও ফোন ধরেন না। আজও ফোন দিয়ে পাইনি।'
বিসিবিতেও বিষয়টি জানিয়েছেন রুমানারা। তিনি বলেন, 'আমি উইমেন উইংকে জানাই যে দল গড়ে এভাবে আমাদের টাকা দিলো না। তো ওখানে থেকে আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়, আমরা যেন বিসিবিতে একটা নোটিশ পাঠাই। তো আমি সব খেলোয়াড়ের পাওনা হিসাব করে দরখাস্ত পাঠাই। এরপর বিসিবি ক্লাবে চিঠি পাঠায়। এরপর ক্লাব থেকে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়, 'বিসিবিতে তুমি নালিশ করেছো কেন। কাজটা ঠিক করোনি। আমরা কি টাকা দিবো না?' উল্টো হুমকি দেন আর কি।'
জাকির হোসেনের দাবি, রুমানা আহমেদ তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। বিষয়টি অস্বীকার করে রুমানা বলেন, 'আমি তো আগেই বললাম আমার কাছে রেকর্ড আছে। আমি কেন উনার সাথে খারাপ ব্যবহার করব। খেলা শেষ হওয়ার অনেক পরও এ নিয়ে আমি কথা বলিনি। আমি এভাবে ফোন দিয়ে টাকা চাই না। উনাদের কথার ওপর ভিত্তি করে আমরা কিছুই বলিনি।'
রুমানা খারাপ আচরণ করাসহ গালিগালাজ করেছেন, এমন অভিযোগ জাকির হোসেনের। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'ও তো বলবেই এখন। আমি খেলোয়াড় ছিলাম। আমি অনেক পর্যায়ে খেলেছি, অধিনায়কত্ব করেছি। একজন খেলোয়াড়ের মানসিকতা বুঝি। আমি সব সময় খেলোয়াড়ের দাবির পক্ষে। ও আমাকে ভুল বুঝেছে, আমাকে কষ্ট দিয়েছে। ও আমাকে ফোন করেই গালি দেয়। খুব বাজে গালি দিয়ে বলে, 'আমাদের টাকা দেন না কেন, আপনি আমাদের টাকা নিয়ে বসে আছেন কেন।'
জাকির হোসেনের দাবি, রুমানার গালিগালাজ শুনে মেজাজ হারান তিনি। এরপর রুমানার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তার। তিনি বলেন, 'আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। ওর কাছ থেকে এমনটা আশা করিনি। ও বলেছে আমি টাকা নিয়ে ওদের দেইনি। তখন আমি ওকে বলেছি, তুমি যদি প্রমাণ করতে পারো আমি টাকা নিয়ে তোমাদের দেইনি, তাহলে যে শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নিবো। মিথ্যা অপবাদ দেওয়ায় আমার খুব কষ্ট লেগেছে। ও গালিগালাজ করার পর আমিও ওকে কথা শুনিয়েছি।'
দ্রুতই রুমানাদের পারিশ্রমিক পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, 'অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। রোজার মধ্যেই ওদের পারিশ্রমিক দেওয়ার চেষ্টা করছি। করোনা গেলে পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দেওয়া হবে।'