ভেসে আসা ট্রলারে ১০ মরদেহ: স্বজনরা শনাক্ত করলেও ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত
বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলারের হিমঘর থেকে উদ্ধার হওয়া ১০ জনের মরদেহ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন স্বজনরা। তারা জানিয়েছেন, গত ৭ এপ্রিল সাগরে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া কক্সবাজারের মহেশখালী ও চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা এরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, মহেশখালী ও চকরিয়া থেকে নিখোঁজ থাকা পরিবারের আত্মীয় স্বজনরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে এসে ১০ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন। তবে এ পরিচয় প্রাথমিক। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ'র নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপরই মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
স্বজনরা এসে এ পর্যন্ত যে ১০ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন, তথ্য মতে তারা হলেন- মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে সামশুল আলম (২৩), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ (১৮), মুসা আলীর ছেলে ওসমাণ গনি (১৭), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান (৩৫) ও চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক জিয়া (২৫)।
মরদেহ শনাক্ত করতে আসা ওসমান গণির মা জোহরা বেগম জানিয়েছেন, পরিবারের কাউকে না বলে তার ছেলে ওসমান গণি সাগরে মাছ শিকারে যায়। কিন্তু কয়েকদিন পর শুনেন ট্রলারটি জলদস্যুর কবলে পড়েছে। এরপর তার কোন খোঁজ মিলছিলো না। পরে রোববার উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলোতে তার সন্তান আছে কিনা দেখতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে গেলে শার্ট ও প্যান্ট দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন জোহরা।
মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা আলী আজগর বলেন, 'শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম, জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ, মুসা আলীর ছেলে ওসমান গণি, সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ, মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ ও মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির এরা সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে সবাই নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজ এই ৬ জনই আমার আত্মীয়-স্বজন। পরনের কাপড় দেখে এখন পর্যন্ত ৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।'
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, 'এরকম একটি খবর আমাদের কাছে ছিল যে, ১০-১২ দিন আগে কিছু লোক সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছে কিংবা সাগরে মাছ ধরার জন্য বের হয়েছে বলে তাদের বাড়িতে বলেছে। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি। যদিও এ সংক্রান্ত দাপ্তরিক কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।'
পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম আরও বলেন, 'পরিচয় শনাক্তের পর এটি কোন ধরণের হত্যাকাণ্ড, কারা ঘটিয়েছে বা কোথায় ঘটিয়েছে তা উদঘাটন করা হবে।'
এদিকে সোমবার বেলা ১২টার দিকে পুলিশের চট্টগ্রামের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিআইডির ডিআইজি হাবিবুর রহমান কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসেন। ওই সময় হাসপাতালে থাকা স্বজনদের সাথে আলাপ করেন তারা।