ট্রলারে ১০ মরদেহ: গ্রেপ্তার আরও ৩ জন, ভেসে আসা কংকাল নিখোঁজ জেলের বলে ধারণা পুলিশের
কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব। এনিয়ে এ ঘটনায় মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আদালতের আদেশে ২ আসামিকে ৫ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাতে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোমের খাল থেকে উদ্ধার হওয়া নর কংকালটি নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে একজনের বলে ধারণা করছে পুলিশ।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বুধবার (২৬ এপ্রিল) রাতে প্রযুক্তিগত সহায়তায় চকরিয়া উপজেলার বদরখালী এলাকা থেকে গিয়াস উদ্দিন মুনির (৩২) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মুনির বদরখালী এলাকায় মো. নুর নবীর ছেলে। তাকে ইতিমধ্যে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড আবেদনের শুনানি এখনও হয়নি।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনায় সন্দেহজনক ২ জনকে আটক করে পুলিশের কাছে র্যাব সোপর্দ করেছে জানিয়ে এসপি বলেন, বাঁশখালীর কুদুকখালী থেকে আটক করে এই দু'জনকে সোপর্দ করা হয়েছে। এদেরও গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এরা হলেন, বাঁশখালীর কুদুকখালী এলাকার মৃত সিরাজুল হকের ছেলে ফজল কাদের মাঝি (৩০) ও শামসুল আলমের ছেলে আবু তৈয়ব মাঝি (৩২)।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, 'মঙ্গলবার রাতে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোমের খাল থেকে একটি নর কংকাল উদ্ধার করা হয়। কংকালটি এ ঘটনায় নিখোঁজ জেলেদের একজনের বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১০ মরদেহের পাশাপাশি এই কংকালের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে'।
উদ্ধার হওয়া ৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলেও – মর্গে রয়ে গেছে ৪ জনের মরদেহ ও কংকালটি।
ইতোমধ্যে ১০ মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে পুলিশ সুপার বলেন, নিহতদের কারও শরীরে গুলি বা অন্য কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ফলে এদের হাত-পা বেঁধে হিমঘরে আটকে হত্যার বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার।
তিনি জানিয়েছেন, 'আদালতের আদেশে মামলার এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামি মাতারবাড়ির এলাকার ট্রলার মালিক বাইট্টা কামাল ও ৪ নম্বর আসামি ট্রলার মাঝি করিম সিকদার রিমান্ডে রয়েছে। এদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। এর সূত্র ধরে চলছে তদন্ত'।
পুলিশ এ ঘটনায় কয়েকটি উৎসকে সামনে রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়েছে মাহফুজুল জানান, দ্রুততর সময়ের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হতে পারে।
রোববার (২৩ এপ্রিল) গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান থাকা ট্রলারটিকে নাজিরারটেক উপকূলে টেনে নিয়ে আসে। টেনে আনা ট্রলারের হিমঘরে হাত-পা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ট্রলারটির মালিক মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের হরিয়ারছড়া এলাকার ছনখোলা পাড়ার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে সামশুল আলম প্রকাশ ওরফে সামশু মাঝি; যার মরদেহ গ্রহণ করেছেন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম। ইতিমধ্যে দায়ের হওয়া মামলার বাদীও তিনি। রোকেয়া বেগমও স্বীকার করেছেন ট্রলারটির মালিক তার স্বামী।