সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয়ের বিষয়ে আইএমএফ’র শর্তের সাথে একমত নয় অর্থ মন্ত্রণালয়
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বরাদ্দ থেকে পেনশন ও সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ বরাদ্দের অর্থ পৃথকভাবে দেখাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত মানতে রাজি হয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনায় সংস্থাটির আট সদস্যের মিশন গত মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) থেকে ঢাকা সফর করছে।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করে মিশনটি।
'পেনশন ও সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ বরাদ্দের অর্থ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ পৃথক করার আইএমএফ এর শর্ত আমরা মানতে রাজি হইনি। তবে এ দু'টি খাতে বরাদ্দ ছাড়াই সামাজিক নিরাপত্তায় আইএমএফ এর পরামর্শ অনুযায়ী জিডিপির অনুপাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে,' জানান সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ বিভাগের এমন একজন কর্মকর্তা।
তবে আসছে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ এর পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা সংস্থাটিকে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও ভর্তুকি নিয়ে আলোচনা করে আইএমএফ।
সেখানে ভর্তুকি কমিয়ে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর মাধ্যমে লক্ষ্যভিত্তিক প্রকৃত দরিদ্রদের জন্য সহায়তা বাড়াতে বলেছে সংস্থাটি।
একইসাথে সরকারের অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে আইবাস প্লাস প্লাস সফটওয়্যার ব্যবহার সম্প্রসারণের তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সামাজিক নিরাপত্তাখাতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর নতুন করে ৭ লাখ ৩৫ হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীকে ভাতার আওতায় আনা হবে। সেইসাথে প্রায় এক দশক পর বয়স্ক ও বিধবা ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়া, বয়স্ক ভাতার উপকারভোগীদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হচ্ছে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১১৫টি কর্মসূচিতে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা জিডিপির ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
এরমধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ও তাদের পরিবারের পেনশন বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৮ হাজার ৩৭ কোটি টাকা, যা মোট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দের ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। অর্থাৎ মোট বরাদ্দের চার ভাগের এক ভাগই এ খাতে ব্যয় করা হবে।
সঞ্চয়পত্রের সুদের হারে সামাজিক নিরাপত্তা প্রিমিয়াম হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার ইআরডি সচিব শরিফা খানের সঙ্গেও বৈঠক করে আইএএমএফ প্রতিনিধি দলটি। বৈঠকে বিদেশি ঋণ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছেন তারা।
বিশেষ করে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের মধ্যে কোনো উন্নয়ন সহযোগীর ঋণের কিস্তি পরিশোধ বাকি আছে কিনা সে বিষয়ে বেশি আগ্রহ ছিল তাদের। ইআরডি সচিবের কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠিত হয়।
জানতে চাইলে ইআরডি সচিব টিবিএসকে বলেন, 'বৈঠকে আইএমএফের প্রতিনিধিরা বিদেশি ঋণ সংক্রান্ত ডাটাবেইজ নিয়ে জানতে চেয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে।'
শরিফা খান বলেন, 'আমাদের রিপেমেন্ট আজ পর্যন্ত ক্লিয়ার। আমরা এ পর্যন্ত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হইনি।'
সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন ও সঞ্চয়পত্রের সুদের উপকারভোগীরা 'দরিদ্র' নয়। তাই আইএমএফ এ দু'খাতের বরাদ্দ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বরাদ্দ থেকে পৃথক করার শর্তারোপ করেছে।
এছাড়া, জিডিপির অনুপাতে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে কী পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দিয়েছে।