মাঠে ক্রিকেট ফেরাতে সরকারের দিকে তাকিয়ে বিসিবি
নিস্তব্ধতা গিলে নিয়েছে পুরো বিশ্বকে। করোনাভাইরাসের ছোবলে যে স্থবিরতা নেমে এসেছে, এর সঙ্গে কখনই দেখা হয়নি বিশ্ববাসীর। করোনাভাইরাসে প্রকোপে ঘরবন্দী বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ। স্কুল-কলেজ বন্ধ, অফিস-আদালতের কার্যক্রম করা হয়েছে সীমিত। অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়।
আর সব জায়গার মতো খেলার মাঠেও থামা বসিয়েছে করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তাররোধে বৈশ্বিক সব খেলাই স্থগিত হয়ে গেছে। এক বছর পিছিয়ে গেছে অলিম্পিক গেমস। ফুটবলে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ, কোপা আমেরিকাসহ বিশ্বের শীর্ষ ৫টি লিগই স্থগিত আছে। টেনিস, গলফসহ অন্যান্য খেলাতেও একই চিত্র।
ক্রিকেটের সব সিরিজ-টুর্নামেন্ট স্থগিত হয়ে আছে। বাতিলও হয়ে গেছে কিছু সিরিজ। জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডস তো চলতি বছরের সব ক্রিকেট আয়োজনই স্থগিত ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের তিনটি সিরিজ স্থগিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি সিরিজ ভবিষ্যতে আয়োজনের নিশ্চয়তা থাকলেও বাকি দুটির ভবিষ্যত ঘোলাটে।
ঘরোয়া ক্রিকেটও স্থগিত হয়ে আছে। এক রাউন্ড পরই অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয় বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। কবে আবার এই লিগ মাঠে গড়াবে সেই নিশ্চয়তা দেওয়ার উপায় নেই। তবে লকডাউন শিথিল হতে দেখে পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। যদিও এরআগে বিসিবির অপেক্ষা সরকারের সবুজ সংকেতের।
নির্দিষ্ট তারিখ ধরে মাঠে ক্রিকেট ফেরানোর পরিকল্পনা সাজাতে যাচ্ছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী বলেন, 'ক্রিকেটারদের মতো আমরাও খুব করে চাই মাঠে খেলা ফিরুক। কিন্তু চাইলেই তো মাঠে ফেরাতে পারব না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হবে। আমরা অপেক্ষায় আছি সরকারের সবুজ সংকেতের। সরকারের নির্দেশনা ছাড়া কোনো ধরনের ক্রিকেট মাঠে ফেরানোর পরিকল্পনা করার সুযোগ নেই।'
জাতীয় দলসহ ঘরোয়া ক্রিকেটারদের এখন একটাই অপেক্ষা, কবে মাঠে ফিরবে ক্রিকেট। প্রায় সব ক্রিকেটারেরই চাওয়া, প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে মাঠে ফিরুক ক্রিকেট। বিসিবিও এভাবেই ভাবছে। নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'আমরা চাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্রিকেট মাঠে ফিরে আসুক। সবার আগে আমরা চাইব ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু হোক। ঘরোয়া ক্রিকেটের মূল আকর্ষণ প্রিমিয়ার ক্রিকেট আমরা শুরু করার অপেক্ষায় রয়েছি।
গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের ক্রিকেট বন্ধ। পাশাপাশি স্থগিত হয়েছে তিনটি সিরিজ। বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর নিয়েও আছে শঙ্কা। তবে এই সফর স্থগিত বা বাতিল হওয়া নিয়ে এখনই কিছু বলছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী।
তিনি বলেন, 'শ্রীলঙ্কার অবস্থাও খুব ভালো নয়। আমরা নজর রাখছি দেশটির উপর। ওই দেশের বোর্ডের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। এখনই সিরিজের ভবিষ্যত নিয়ে বলতে চাইছি না। যে সকল সিরিজ স্থগিত হয়েছে, সেসব নিয়ে আমরা ভাবছি। আমরা সময় বের করে সেসব সিরিজ পুনরায় আয়োজন করার চিন্তা-ভাবনা করছি।'
করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে গত ২৬ মার্চ লকডাউন ঘোষণা করা হয় বিসিবি। বাসা থেকেই সবাইকে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সঙ্কটময় এই সময়ে ক্রিকেটার, ক্লাবগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে বিসিবি। কেন্দ্রীয় ও প্রথম শ্রেণির চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের এককালীন ৩০ হাজার ও জাতীয় নারী দলের ক্রিকেটারদের ২০ হাজার টাকা করে দিয়েছে বিসিবি। এ ছাড়া ঢাকার ক্রিকেটের ৭৬টি ক্লাবের কর্মচারীদের খাবার সহায়তা দিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৭১৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৮৬ জন। শুরুতে করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্তের পরিমাণ কম থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংখ্যা। সর্বশেষ দুই দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৭৬ জন মানুষ।