অরক্ষিত ধোলাইখাল জলাধার ঘিরে নান্দনিক পরিবেশ গড়ে তুলবে দক্ষিণ সিটি
দীর্ঘদিন ধরে ভাগাড়ে ও নোংরা অবস্থায় পড়ে থাকা রাজধানীর ধোলাইখাল জলাধারের ৫ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে সবুজায়ন ও নান্দনিক পরিবেশ উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
জলাধার খনন, দুইটি অ্যাম্ফিথিয়েটার তৈরী, চারিদিকে হাঁটার পথ উন্নয়ন, বাইসাইকেল লেন তেরী করাসহ ১০টিরও বেশি সংখ্যক উন্নয়ন কাজ করা হবে জলাধারকে ঘিরে। এতে এ এলাকায় হাতিরঝিলের থেকেও সুন্দর ও মনোরম একটি পরিবেশ তৈরী হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
এক বছর ২ মাসের সময় ব্যবধানে এ এলাকার উন্নয়ন কাজ করবে মাসুদ হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও মিসার্স চারু এন্টারপ্রাইজ জে.ভি নামে দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কাজে ব্যয় হবে প্রায় ১৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এ কাজের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল।
বুধবার ধোলাইখাল জলাধার সবুজায়ন ও নান্দনিক পরিবেশ উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন জানায়, 'ধোলাইখাল জলাধার সবুজায়ন ও নান্দনিক পরিবেশ উন্নয়ন' শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় ৫.৩১ একর এলাকা জুড়ে উন্নয়ন কাজ হবে, যেখানে ৪.৬০ একরের থাকবে পুকুর।
এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৬৮ ফুট হাঁটার পথ ও ২১৫৫ ফুট বাইসাইকেল লেন তৈরী করা হবে। ৬০ হাজার বর্গফুট এলাকাজুড়ে করা হবে সবুজায়ন। শিশুদের খেলার জন্য প্রস্তুত করা হবে ২১৩০ বর্গফুট এলাকা। তৈরী করা হবে দুটি শৌচাগার। থাকবে কিয়স্ক (ছোট খাবারের দোকান) এবং স্লাজ পরিষ্কারের জন্য ১৩৯৮৮০০ বর্গফুট লাইন।
এ জলাধারের কোল ঘেঁষেই তৈরী করা হবে দুটি অ্যাম্ফিথিয়েটার। ৫৮৯০ বর্গফুটের একটি অ্যাম্ফিথিয়েটারে থাকবে ৩৫০ জন বসার ব্যবস্থা এবং ২৩০২ বর্গফুটের অন্য একটি অ্যাম্ফিথিয়েটারে থাকবে ১৫০ জনের বসার ব্যবস্থা। এছাড়াও তৈরী করা হবে ১০৭৬ বর্গফুটের একটি ঘাট।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও এ প্রকল্প পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ধোলাইখালের এ জলাধার এতোদিন ময়লার স্তুপে বছরের পর বছর পড়ে ছিল। আমরা এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এবং পরিবেশ বিবেচনা করে গত এক বছর ধরে এ জলাধার ঘিরে ড্রয়িং করেছি। ময়লার ভাগাড় অনেকটাই পরিষ্কার করে বুধবার পাইলিং এর কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি এক বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।"
তিনি বলেন, "এখানে আমরা দেশীয় জাতের ফুল ও ছায়াজাতীয় গাছ লাগাবো। স্থানীয় সকল বয়সী মানুষের জন্য এটি থাকবে উন্মুক্ত। অ্যাম্ফিথিয়েটারে যখন কোনো অনুষ্ঠান হবে তখন সবাই উপভোগ করতে পারবে অন্য সময়ও সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আশা করি এ স্থানটি এ এলাকার জন্য ফুসফুস হিসেবে কাজ করবে। আমরা এখানে সাইকেল লেন রেখেছি এবং পুকুরটি বৃষ্টির পানি রিজারভার হিসেবে কাজ করবে।"
বুধবার এ কাজের উদ্বোধন শেষে মেয়র তাপস সাংবাদিকদের বলেন, "সবুজায়ন ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে করপোরেশন গৃহিত কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ধোলাইখাল জলাধারের পরিবেশ হাতিরঝিলের চাইতে সুন্দর ও নান্দনিক হবে।"
মেয়র তাপস বলেন, "ধোলাইখাল জলাধার এই এলাকার, পুরান ঢাকার একটি ফুসফুস। পুরাতন ঢাকার একটি আকাঙ্ক্ষার জায়গা। ইনশাল্লাহ আগামী এক বছরের মধ্যেই এই নোংরা দৃশ্যপট, ভাগাড়ের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়ে হাতিরঝিলের চাইতেও সুন্দর, সবুজ ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে।"
মেয়র আরও বলেন, "এখানে সবুজায়ন হবে, উন্মুক্ত মঞ্চ থাকবে- যেখানে আমরা ঐতিহ্যকে ধারণ করে আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা করব। এছাড়াও এখানে পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকবে। এখানে ঘাটলা থাকবে, মাঠ থাকবে। এখানে আমরা নান্দনিক পরিবেশ উপভোগ করব। শিশুদের খেলার জায়গা থাকবে। ঝর্ণা থাকবে, খাবারদাবারের ব্যবস্থা থাকবে।"