স্কুল পরিদর্শনে এসে ছেলে ধরার সন্দেহের শিকার শিক্ষা কর্মকতা
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/07/21/mob_beating.jpg)
চট্টগ্রামে প্রশাসনিক কাজে স্কুল পরিদর্শনে এসে ছেলেধরা সন্দেহের শিকার হয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা। গত সোমবার (২২ জুলাই) দুপুরে নগরীর উত্তর কাট্টলী মুন্সি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে অভিভাবকদের সন্দেহের কবলে পড়েন চট্টগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এডিপিও তাপস পাল।
পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সহযোগিতায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পান ওই শিক্ষা কর্মকর্তা।
স্থানীয়রা জানান, গত রোববার (২১ জুলাই) চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলী মুন্সি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৪ জন শিক্ষার্থীর মাথা সংগ্রহ করা হবে বলে এলাকায় একটি গুজব রটে।
প্রশাসনিক কাজে পরদিন সোমবার (২২ জুলাই) সকালে এই স্কুলে আসেন শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস পাল। অচেনা মানুষকে স্কুলে প্রবেশ করতে দেখে একের পর এক অভিভাবকরা এসে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা স্কুল কার্যালয়ের সামনে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে।
ঘটনার কথা জানতে পেরে অন্যান্য অভিভাবকরাও স্কুল কর্তৃপক্ষকে ফোন করতে শুরু করে। এ সময় ওই শিক্ষা কর্মকর্তা ছেলের মাথা নেওয়ার ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করছে বলেও গুজব রটিয়ে দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিকে এ ঘটনার কথা জানায়।
পরে পাহাড়তলী থানার ওসিকে ফোন করলে তিনি একজন এসআই ও কয়েকজন ফোর্স পাঠান। । পুলিশের উপস্থিতিতে পরবর্তীতে স্কুল ছুটি হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস পাল বলেন, “আমি স্কুলে যাওয়ার পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলি। এসময় কিছু অভিভাবক আসলে তাদের সাথেও কথা হয়। তারা ছেলে ধরার প্রসঙ্গটি আনলে তাদের এ বিষয়ে সচেতনতার কথা বলে আমি চলে আসি। এরপর স্কুলে কি হয়েছে তা আমি জানি না।”
এ ব্যাপারে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র ড. নেছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু বলেন, এই ধরনের যে কোন সন্দেহজনিত ঘটনায় ঘাবড়ে না গিয়ে সরাসরি তাকে অবহিত করার ব্যাপারে এলাকাবাসীকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি এলাকাবাসীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মসজিদ, মন্দির ও উপাসনালয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রদানের জন্য ইমাম পুরোহিতদের অনুরোধ করা হয়েছে।
স্কুলের শিক্ষক সুলতানা রাকিবা কাদের বলেন, আমাদের স্কুলে এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষা কর্মকতা আসার পর গুজব মনে করে অভিভাবকরা জড়ো হয়। পরে তারা আমাকে দেখলে আস্বস্ত হন তারা। পরে তাদের বিষয়টি নিয়ে সচেতন করা হয়। আমরা স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
তিনি আরও জানান, চারিদিকে ছেলেধরা সন্দেহ ও কল্লা কাটার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ায় অভিভাবকরা নতুন কাউকে দেখলেই সন্দেহ করছে।
চট্টগ্রামের ছেলে ধরা ও বাচ্চা চুরির বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (সদর) শ্যামল কুমার নাথ।
তিনি বলেন, “কেউ যদি ছেলেধরার গুজব ছড়ায় এবং তা বিশ্বাস করে কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে আহত করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। এ ঘটনায় আহত ব্যক্তি মারা গেলে হত্যা মামলায় অভিযুক্তও করা হবে।”
প্রসঙ্গত একই সপ্তাহে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড এলাকায় নিজের ছেলেকে নিয়ে দোকানে গিয়ে ছেলে ধরার সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন এক মা।