চিপ প্রস্তুতকারক এনভিডিয়া যেভাবে এআই সুপারপাওয়ার হয়ে উঠেছে
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/05/30/_129843105_gettyimages-1468619875.jpg)
চলতি সপ্তাহে বাজার মূল্যায়ন হু হু করে বেড়েছে কম্পিউটার চিপ ডিজাইনার কোম্পানি এনভিডিয়ার। সেই সুবাদে পৌঁছে গেছে ১ লাখ কোটি ডলার বাজারমূল্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে। বিবিসি অবলম্বনে
গত বুধবার কোম্পানিটি তাদের গত প্রান্তিকের ব্যবসার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জানায়, 'বাড়তে থাকা চাহিদা' মেটাতে চিপ উৎপাদন বাড়াচ্ছে। আর তাতেই কোম্পানিটি নিয়ে আরো আশাবাদী হয়ে ওঠেন বিনিয়োগকারীরা। শুরু হয় শেয়ার মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মিছিল।
বর্তমান সময়ে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে, এর আরো চাহিদা। ভবিষ্যতে যা আরো বাড়বে। সেদিক দিয়ে দেখলে, বিনিয়োগকারীদের আস্থার অন্যতম কারণ হলো – এআই সিস্টেমে ব্যবহৃত কম্পিউটার চিপসের বাজারে আধিপত্য করে এনভিডিয়া। ফলে তাদের পণ্যের চাহিদা বাড়ার তথ্যই যথেষ্ট উৎসাহ জোগায়। আবার উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগে কোম্পানির আয়ও বাড়বে, বিনিয়োগের ঝুঁকিও তাতে অনেকটাই কম থাকবে।
গেল বছরের নভেম্বরে ওপেনএআই প্রযুক্তি দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দেয় চ্যাটজিপিটি বাজারে এনে। অধুনা এই চ্যাটবট বক্তৃতার অনুলিপি, রান্নার রেসিপি থেকে শুরু করে প্রোগ্রামিং কোড লিখতেও সমান ওস্তাদ। মোদ্দা কথা, এআই এর এক জনপ্রিয় ব্যবহারের মাধ্যম হয়ে উঠেছে চ্যাটজিপিটি।
তখন থেকে তুঙ্গে উঠেছে আরও উন্নত এআই তৈরির প্রতিযোগিতা। বাঘা বাঘা টেক জায়ান্টদের এই রেসে এনভিডিয়ার উন্নত পণ্যের চাহিদা বাড়ারই কথা। হয়েছেও তাই।
আরো উন্নত এআই আসবে, এতো নিশ্চিত ভবিষ্যৎ। কিন্তু, শক্তিশালী কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ছাড়া এই অগ্রগতি অর্জন অসম্ভব। বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক এনভিডিয়ার চিপসেট এজন্য নিতান্ত দরকারি।
যদিও কম্পিউটার গেমসের জন্য উচ্চ মানের গ্রাফিক্স চিপসেট তৈরির জন্যই মূলত প্রযুক্তিপ্রেমীরা চেনেন এনভিডিয়াকে। কিন্তু, তাদের পণ্যই এখন উন্নত এআই এর চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।
প্রযুক্তি গবেষণা সংস্থা- গার্টনার এর সেমিকন্ডাক্টর শিল্প বিশ্লেষক অ্যালান প্রিস্টলির মতে, "এআই-সহায়ক পণ্য সরবরাহে এনভিডিয়া-ই এ শিল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
টেকইনসাইটস এর বিশ্লেষক ড্যান হাচেসন বলেন, "পিসির ক্ষেত্রে ইনটেল যেমন, তেমনি এআই এর জন্য এনভিডিয়া।"
যেমন মাইক্রোসফটের সুপারকম্পিউটারে প্রায় ২০ হাজার এনভিডিয়ার গ্রাফিক্স প্রসেসর যুক্ত করে চ্যাটজিপিটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/05/30/_129842914_nvidiaa100gpu.jpg)
এনভিডিয়ার অ্যাক্সেলেরেটেড কম্পিউটিং শাখার মহাব্যবস্থাপক ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ান বাক বলেন, "বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডসহ এআই ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের জানা-অজানা অনেক সুপারকম্পিউটারে এনভিডিয়া'র জিপিইউ যুক্ত করা হয়েছে।"
এআই মেশিন লার্নিং প্রক্রিয়ায় জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জন করে, আর মেশিন লার্নিং বাজারের প্রায় ৯৫ শতাংশ চাহিদাই মেটাচ্ছে এনভিডিয়া। প্রযুক্তি বাজারের তথ্য পরিবেশক সিবি ইনসাইটস- তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এআই সক্ষম প্রতিটি চিপ প্রায় ১০ হাজার ডলারে বিক্রি করে কোম্পানিটি। তবে এ ধরনের চিপের সর্বশেষ সংস্করণ বিক্রি হয় আরো উচ্চ মূল্যে।
সবমিলিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে, কীভাবে এআই বিপ্লবের প্রাণকেন্দ্রে স্থান করে নিলো এনভিডিয়া? এক কথায় তার উত্তর হলো – সঠিক সময়ে নিজস্ব প্রযুক্তির উন্নয়নে সাহসী বাজি ধরেই তারা আজকের অবস্থানে।
এনভিডিয়ার অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা হলেন বর্তমান প্রধান নির্বাহী জ্যানসেন হুয়াং। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি গেমিং ও অন্যান্য কাজের জন্য গ্রাফিক্স উন্নত করার দিকে মনোযোগ দেয়। কম্পিউটার স্ক্রিনে প্রদর্শিত ছবির মান বাড়াতে ১৯৯৯ সালে তৈরি করে তাদের প্রথম জিপিইউ।
একইসঙ্গে একাধিক কাজে দারুণ সক্ষম এই জিপিইউ। ফলে কোটি কোটি পিক্সেল-জুড়ে সে স্ক্রিনে হাজির করে ভালো মানের ছবি।
২০০৬ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেন, কম্পিউটারের গাণিতিক সমস্যা সমাধানেও দারুণ গতি এনে দেয় জিপিইউ, যা সাধারণ প্রসেসিং চিপ পারে না। এ ছিল নতুন যুগের সূচনাকারী এক আবিষ্কার। সম্ভাবনা বুঝে তখনই হুয়াং এমন এক সিদ্ধান্ত নেন – যার ফলাফল আজ এআই এর উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখতে পারছে।
হুয়াং জিপিইউ'কে প্রোগ্রাম করা যায় এমন টুল তৈরিতে বিনিয়োগ করেন। ফলে গ্রাফিক্সের বাইরেও অন্যান্য কাজের প্রসেসিং সক্ষমতা তৈরি হয়।
এই টুলটিকেই যুক্ত করা হয় এনভিডিয়ার কম্পিউটার চিপে। এর মাধ্যমে গবেষকরা সাধারণ মানের কম্পিউটারেই হাই পারফরম্যান্স গাণিতিক হিসাব-নিকাশের সুবিধা পেয়ে যান।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/05/30/_129842910_jensen_huang-extended.png)
পরবর্তীকালে এই সক্ষমতাই অধুনা এআই তৈরির অগ্রগতিতে অবদান রাখে। ২০১২ সালে বাজারে আসে অ্যালেক্সনেট। কৃত্রিম এই বুদ্ধিমত্তাটি নানান ধরনের ছবিকে আলাদা আলাদা শ্রেণিভুক্ত করতে পারতো। এনভিডিয়ার মাত্র দুটি প্রোগ্রাম করা জিপিইউ দিয়ে অ্যালেক্সনেট-কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।
তবে আরো চমৎকার বিষয় হলো– সাধারণ কম্পিউটার চিপসেটে একাজ করতে হলে কয়েক মাস সময় লাগতো সেসময়। এনভিডিয়ার বদৌলতে অ্যালেক্সনেট মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই একাজে পারদর্শী হয়ে ওঠে।
নিউরাল নেটওয়ার্ক প্রসেসিংয়ে জিপিইউ বিপুল গতি আনতে পারে – এই আবিষ্কার ধীরে ধীরে কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের মধ্যে স্বীকৃতি পেতে থাকে। নতুন ধরনের প্রযুক্তি গবেষণায় তারা এনভিডিয়ার পণ্যই কিনতে শুরু করেন।
এনভিডিয়ার ইয়ান বাক বলেন, "এভাবেই এআই (গবেষণা) আমাদের খুঁজে পায়।"
পরবর্তীকালে নতুন ধরনের এআই সহায়ক জিপিইউ তৈরিতে আরো বিনিয়োগ করতে থাকে কোম্পানিটি। একইসঙ্গে ব্যবহার সহজ করে এমন সফটওয়্যার তৈরিতেও নজর দেয়। এরপর শুধুই সামনে এগিয়ে চলা। ফলে প্রায় এক দশক ও শত শত বিলিয়ন ডলারের আয় ও বিনিয়োগের পর – আজ এনভিডিয়ার কল্যাণেই চ্যাটজিপিটির মতো উন্নত এআই উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে – যা মানুষের মতোন করেই নানান প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে।